ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জের পাইনার খালে আবাসন বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কেরানীগঞ্জের পাইনার খালে আবাসন বাণিজ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ৮ সেপ্টেম্বর ॥ ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কেরানীগঞ্জের খাল ও শাখা খালগুলো। ইতোমধ্যে ৬৫টি খালের মধ্যে প্রায় ৫৮টি খাল ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেছে। ওই সব খালের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। নতুন করে উপজেলার পাইনার খাল দখল করে আবাসন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে এনসিওর ল্যান্ডমার্ক নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান খালের এক তৃতীয়াংশ জায়গা ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি করছে। স্থানীয় লোকজন আবাসন প্রকল্পটি বন্ধ করতে বাঁধা দিতে গিয়ে চারটি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৬৫টি খাল ছিল। ইতোমধ্যে ৫৮টি খাল ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেছে। বাকি ৭টি খালও প্রবাহপথের বিভিন্ন স্থান ভরাট হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে বাকি খালগুলোও ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাবে। এর মধ্যে পাইনার খাল, পারগেন্ডারিয়া, চুনকুটিয়া, গোলামবাজার, শুভাঢ্যা শ্মশানঘাট, আটিখালসহ কুশিয়ারবাগের খালগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ভূমিদস্যুরা দখলে নিয়ে নিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের ঘোষকান্দা এলাকার পাইনার খাল দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করছে এনসিওর ল্যান্ডমার্ক নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান। স্থানীরা জানান, এই খালটি ছিল পাইনা চর এলাকার জমিতে সেচ দেয়ার একমাত্র উপায়। এই খাল দিয়ে এক সময় আব্দুল্লাপুর, রাজেন্দ্রপুর, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে পণ্যবাহী নৌকা যাতায়াত করত। বর্তমানে ভূমিদস্যুরা এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভরাট করে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই অত্র এলাকার বাসিন্দারের জমিতে সেচের অভাবে ফসল ফলানোও বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েক দফা তারা খাল ভরাটে বাধা দিয়েও বন্ধ করতে পারেনি। খাল ভরাট সংক্রান্ত সংঘাতে ৪ জন খুনও হয়েছে। তবুও এই খাল ভরাট বন্ধ করতে পারেনি বলে অভিযোগে জানান এলাকাবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগে জানান, এনসিওর আবাসন প্রকল্পটি পাইনার খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে খালের তীর বালু দিয়ে ভরাট করে সেখানে প্লট বাণিজ্য করে যাচ্ছে। তারা ১ বিঘা জমি খরিদ করে ১০ বিঘা জায়গায় সীমানা নির্ধারণ করছে। যদি প্রশাসন অতি দ্রুত এর ব্যবস্থা না করে তবে পুরো খালটিই তাদের দখলে চলে যাবে। ওই প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) হাসানুল হক মান্নান বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমরা এ পর্যন্ত দেড় শ’ বিঘা জমি নিজস্ব অর্থায়নে স্থানীয় লোকজন থেকে খরিদ করেছি। পাইনা খালের ১ ইঞ্চি জমিও দখল করিনি। আবাসন প্রকল্প এনসিওর ল্যান্ডমার্ক লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক জসিমউদ্দিন হাওলাদার জানান, দুই বছর ধরে আমি এ আবাসন প্রকল্পে চাকরি করে আসছি। তিনি বলেন, এখানে প্রতি শতাংশ ভরাট জায়গা ৭/৮ লাখ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ কোম্পানির শরীফ মিয়া, জাকির হোসেন, আব্দুল মান্নানসহ ১৪ জন মালিক রয়েছে। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (দক্ষিণ সার্কেল) রাকিব হাসান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট হলে জলাবদ্ধতা ও বন্যার সৃষ্টি হবে। সেচের অভাবে জমিতে ফসল ফলাতে পারবে না কৃষক। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট হবে।
×