ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পারমিট পেতে অস্তিত্বহীন লবণ মিল মালিকদের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৬ আগস্ট ২০১৭

পারমিট পেতে অস্তিত্বহীন লবণ মিল মালিকদের দৌড়ঝাঁপ

এইচ এম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ সরকারের লবণ আমদানির সিদ্ধান্তের সুযোগে কেবল কাগজপত্র সর্বস্ব অস্তিত্বহীন লবণ মিলের নামে লবণ আমদানির অনুমতি পেতে উঠেপড়ে লেগেছে ভুয়া লবণ মিল মালিকরা। ইতোমধ্যে ‘পারমিট’ নিশ্চিত করতে বিসিকের কক্সবাজার ও ঢাকা অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা হাত বদল করে চলেছে। কোন ধরনের লবণ উৎপাদনে নেই, বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে, এমনকি বিসিকের তালিকায় আবেদনের শেষ দিনেও নেই, এমন মিলের নামেও আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। এতে করে প্রকৃত মিলাররা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির দেয়া তথ্যে ভুয়া লবণ মিল তালিকায় রয়েছেÑ মহেশখালীর আলিফ সল্ট, আল মোস্তফা সল্ট, সাগরিকা সল্ট, নিউ বিসমিল্লাহ সল্ট, মাহমুদা চূর্ণবিচূর্ণ কারখানা, ওয়াজেদিয়া সল্ট, নূর সল্ট, কক্সবাজার সদর ইসলামপুরে ন্যাশনাল আয়োডাইজ সল্ট, রাইসা সল্ট, মাজেদা সল্ট, শাহ মজিদিয়া সল্ট, পপুলার সল্ট, গোমাতলীতে সাগর সল্ট ও চকরিয়া ডুলাহাজারায় চৌধুরী সল্ট। এদের দৌড়ঝাঁপে প্রকৃত লবণ মিল মালিক ও প্রান্তিক চাষীরা ভবিষ্যত লবণ উৎপাদন নিয়ে মাথায় হাত দিয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরকারী সুযোগ-সুবিধা নিতে ইসলাম এ্যান্ড ব্রাদার্স, কক্সবাজার সল্ট, আমানত সল্ট, এফ আলম সল্ট, গ্রামীণ সল্ট, এমএম সল্ট মাঝে মধ্যে চালু করা হলেও অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। বিসিকের এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আলিফ সল্টের নামে গতবারও লবণ আমদানি করা হয়েছিল। মহেশখালীর মাতারবাড়ির রইছ উদ্দিন ও শিল্প মন্ত্রণালয়েরর যুগ্ম সচিব বাসু দেব আচার্য্য বিসিককে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব পছন্দের ৩০-৪০টি মিল নিয়ে সিন্ডিকেট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পারমিট নিশ্চিত করতে প্রতি মিল থেকে ন্যূনতম দেড় লাখ টাকা করে নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রকৃত মিল মালিকদের অভিযোগ, ভুয়া লবণ মিল মালিকদের প্রত্যয়ন ও ফাইল প্রসেসিং কাজে বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মোঃ আবছার উদ্দিন ও মনিটরিং অফিসার নিতাই চন্দ্র রায় এ অনিয়মে জড়িত রয়েছেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা অস্তিত্বহীন মিলের নামে ইতোমধ্যে আনুষঙ্গিক ডকুমেন্ট তৈরি করে দিয়েছেন। বিসিককে উপেক্ষা করে লবণ আমদানির আবেদন ফাইল সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা করেছে অস্তিত্বহীন লবণ মিল মালিকরা। কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি সামশুল আলম আজাদ বলেন, আমরা শুনেছি অস্তিত্বহীন কিছু লবণ মিলের নামে ফাইল জমা পড়েছে। কারা এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অন্যথায় প্রকৃত মিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রকৃত লবণ মিলের প্রসঙ্গে বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ আবছার উদ্দিন বলেন, আমার অফিসে কোন তালিকা নেই। এ বিষয়ে কিছুই জানি না। মনিটরিং অফিসার নিতাই চন্দ্র রায় সব জানবেন। হয়তো তার মাধ্যমে সব করা হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশে লবণের সরবরাহ ও বাজার স্বাভাবিক রাখতে গত জুনে শিল্প মন্ত্রণালয়ে খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিন লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানির। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরে দেশে লবণের চাহিদা ১৫ দশমিক ৭৬ লাখ টন। এর বিপরীতে গত জুনে শেষ হওয়া মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ লাখ টন। এ হিসেবে চাহিদার তুলনায় লবণের ঘাটতি আছে ২ লাখ ১২ হাজার টন অর্থাৎ আনুমান ৩ লাখ মে.টন। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) অঞ্চলের ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়। উল্লেখ্য, কক্সবাজার সদরের বিসিক শিল্পনগরী ইসলামপুর কেন্দ্রিক ৩৫ মিলসহ জেলায় ছোট বড় মিলে গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টি লবণ কারখানা।
×