ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জলাবদ্ধতা বুঝি ঢাকাবাসীর নিয়তি... ;###;মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৪ আগস্ট ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

শোকের মাস আগস্ট শুরু হলো। ঢাকার সবখানে এখন বেদনার রং। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল জাতির জনককে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর রক্তে ভেসে গিয়েছিল বাংলার মাটি। কিন্তু সফল হয়নি হায়েনার দল। মৃত্যুর এতকাল পরও বঙ্গবন্ধু সত্য আরও সত্য হয়ে সামনে আসছেন। আগস্টের প্রথম দিন থেকেই ব্যানার ফেস্টুনে পিতার মুখ। সভা সেমিনার চলছে। সমস্ত আয়োজন থেকে স্মরণ করা হচ্ছে মহান নেতাকে। শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। এভাবে শোকের একটা আবহ তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে গৌরবের মুহূর্ত। বাঙালী তার কক্ষ পথে ফিরে এসেছে। শেখ মুজিবুর রহমান তো পদ্মা মেঘনা যমুনা। পদ্মা মেঘনা যমুনার কাছে ফিরেছে আজকের প্রজন্ম। বৃষ্টির কথায় আসা যাক এখন। সপ্তাহের প্রায় পুরোটাজুড়ে ছিল বৃষ্টি। প্রতিদিনই বইছে শ্রাবণধারা। এখন যে বৃষ্টি, স্বভাবটা মোটামুটি জানা। হুটহাট নেমে যায়। তার পর অবিরাম বর্ষণ। বৃহস্পতিবারও দেখা গেল অভিন্ন দৃশ্য। দুপুরের দিকে হঠাৎই কালো হয়ে গেল আকাশ। তারপর বৃষ্টি। এত যে, নয়া পল্টনের একটি ভবনের সামনে থাকতে হলো। কিন্তু বৃষ্টি বাড়ছিল শুধু। জোনাকী সিনেমা হলের সামনের সড়কটি চোখের সামনে ডুবে গেল। পাশেই আবার বড় বড় গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। বৃষ্টি শুরুর আগে গর্তগুলো দেখা গেছে। আধা ঘণ্টা পর কোন চিহ্ন খুঁজে বের করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় চলছিল গাড়ি। রিক্সা। পুরো চিত্রটা দেখার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজির পর, ভাগ্যিস, একটা রিক্সা পাওয়া গেল। সেটিতে চড়ে মূল রাস্তায় আসতেই মনে হলো নদীতে পড়ে গেছি! ঢেউ ঠেলে এগিয়ে চলল রিক্সা। যে কোন মুহূর্তে উল্টে যাবে। যেতে পারে। কিন্তু থামলে আরও সমস্যা। তাই চালক নৌকোর মতো ডাঙায় উঠার চেষ্টা করলেন। কয়েক সেকেন্ড থাকা গেল ডাঙায়। পরোক্ষণেই জল। জলের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করে এগিয়ে চলল রিক্সা। এ অবস্থায় সেগুনবাগিচায় ঢুকতেই গা প্রায় কেঁপে উঠল। অথৈ সাগর দৃশ্যমান হলো চোখের সামনে। অনেকগুলো প্রাইভেটকার জলে নাক ডুবিয়ে আছে। সিএনজি অটোরিক্সা বিকল হয়ে গেছে আরও আগে। গুনে দেখা গেল অর্ধ ডজন! চালকরা টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেগুনবাগিচা থেকে গাড়িতে ওঠার পর বৃষ্টি থামল। হেসে উঠল রোদও। কিন্তু জল নামেনি। বরং দুর্ভোগ বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গেল। এভাবে সারাটা দিন! দুর্ভোগের জন্য অনেকেই এদিন অতি বৃষ্টিকে দায়ী করেছেন। আদতে শহর ঢাকাকে দেখে রাখার যারা কর্তৃপক্ষ, দায়ী তারা। বর্ষায় বৃষ্টি হবে। দুপুর ২টা থেকে ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১২১ মিমি। আবহাওয়া অফিস বলছে, এটা স্বাভাবিক কিছু নয়। অস্বাভাবিক হয়ে গেছে শহরটা। জল নেমে যাওয়ার পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চলছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে রাজধানী। কিন্তু যারা কর্তৃপক্ষ তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে এসে মনে হলো, জলাবদ্ধতাকে নিয়তি মেনে নিয়েছেন নগরবাসীও। সন্তানের স্কুলের সামনে হাঁটু সমান জল জমেছিল। জলের ওপর বসেই হাসি গল্পে মেতেছিলেন মায়েরা। স্কুল ছুটি হলে সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। ঠিক ঠিক ফিরতে পেরেছেন তো?
×