ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দার্জিলিংয়ে নতুন করে সহিংসতা

মমতার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল মোর্চা

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১০ জুলাই ২০১৭

মমতার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল মোর্চা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিংয়ে শনিবার নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এরই প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (জিজেএম) নেতারা যদি সহিংসতা পরিহার করে তবে তিনি তাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত। আলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ডাক দেয় মোর্চা। তারা মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। খবর এনডিটিভি অনলাইনের। মোর্চা জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের জন্য আলোচনার প্রস্তাব চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে সেখানে তিনজন নিহত হয়েছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিজেপিকে দোষারোপ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, গোর্খা নেতাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এবং বিদেশী বাহিনীর সহযোগিতায় পাহাড়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রাখা হয়েছে। শনিবারের সহিংস ঘটনায় ইয়াশি ভূটিয়া (৩০) নিহত হন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন তিনি পুলিশের গুলিতে সোনাদা এলাকায় নিহত হয়। এলাকাটি দার্জিলিং থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা ইয়াশি ভূটিয়ার মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে লাঠিচার্জ করে। পরে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের টয়ট্রেন স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে ও পুরোপুরি অসহযোগিতার জন্য দোষারোপ করেছেন। তিনি দাবি করেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে গতমাসে তার সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দশ কোম্পানি সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) ও এক হাজার কর্মকর্তা পাঠাতে অনুরোধ করেছে, যা কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এক হাজার এক শ’ কর্মকর্তা যাদের মধ্যে এক শ’ নারী কর্মকর্তা দার্জিলিংয়ে মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ না করে তার পরিবর্তে কেন সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করেনি সে ব্যাপারে রাজ্যকে জিজ্ঞাসা করেছে। এদিকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা প্রত্যাখ্যান করে মোর্চা জানিয়েছে, এখন শুধু বিজেপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেই কেবল আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে গতমাসে গোর্খা নেতারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে তিনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে পারে না বলে জানিয়েছেন। দার্জিলিং উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাংলা অবশ্যই নীতিতে। মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ গতমাস থেকে বিক্ষোভের ডাক দেন। যা দ্রুতই আলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে পরিণত হয়। প্রায় দুই হাজার ৪৩২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) দ্বারা স্বশাসিত দার্জিলিং গঠিত। ২০১১ সালের জিটিএ চুক্তি অনুযায়ী এই অংশটি একটি স্বায়ত্তশাসিত এলাকায় পরিণত হয়। চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় লোকজনকে নিজেদের স্থানীয় সরকার গঠনের ক্ষমতা দেয়। মোর্চা সদস্যরা ইতোমধ্যে জিটিএ থেকে বেরিয়ে গেছে। আগামী মাসে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানান হয়েছে। মোর্চা জানিয়েছে, পাহাড়ী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে না। সুভাষ ঘিসিংয়ের নেতৃত্বে ১৯৮০-এর দশক থেকে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে দার্জিলিং সহিংস আন্দোলন শুরু করেছে। ১৯৮৮ সালে একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসন গঠনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। একে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল বলা হয়।
×