ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার আতঙ্কে বহু কর্মী বনে জঙ্গলে লুকিয়ে আছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৯ জুলাই ২০১৭

মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার আতঙ্কে বহু কর্মী বনে জঙ্গলে লুকিয়ে আছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ায় ব্যাপক হারে কর্মী আটকের ঘটনা নিয়ে আজ রবিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গত শুক্রবার সকালে ব্যক্তিগত সফর শেষে মালয়েশিয়া থেকে ফিরেই এ বৈঠক ডেকেছেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে মালয়েশিয়ায় বিপদগ্রস্ত কর্মীদের কিভাবে বিপদ থেকে মুক্ত করা যায় সেই চেষ্টা থাকবে। শুধু যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ই এ বিষয়টি সমাধান করতে পারবে তা নয়। এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। মালয়েশিয়ায় ১৫টি দেশের কর্মীরা কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো কর্মী আটকের বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোন আলোচনায় বসেনি-মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। আলাপ আলোচনা শুরু হলে ধরপাকড়ও কমে আসবে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের ধরপাকড় অভিযান শুরুর পর থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কথা বললেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ মুখ খুলছেন না। বেশ কয়েক দফা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কর্মকর্তা সায়েদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমরা আমাদের মতো করে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছি। আমরা যতই আলাপ আলোচনা করি না কেন মন্ত্রী পর্যায়ে আলাপ আলোচনা না করলে মালয়েশিয়ার সমস্যা সমাধান হবে না। কারণ সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশে কোন অবৈধ কর্মী রাখবে না। ১৫টি সোর্স কান্ট্রি (যেসব দেশ থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ করে) কয়েক হাজার কর্মীকে গত এক সপ্তাহে আটক করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী কর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশটির সরকার গত বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতি কর্মীকে আট শ’ রিংগিত অথবা এক বছরের জেল জরিমানা করার। আট শ’ রিংগিত জরিমানা অবৈধ কর্মীদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে বেশিরভাগকেই মেনে নিতে হবে এক বছরের জেল। এমন অবস্থায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী হাইকমিশন ও বাংলাদেশী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী দেশটির কর্তৃপক্ষের আলাপ আলোচনা করে জরিমানার পরিমাণ ৪শ’ রিংগিতে নিয়ে এসেছে। তবে প্রতি কর্মীকে নিজ খরচে ‘প্লেন ফেয়ার’ দিয়ে দেশে ফিরতে হবে। এরপর দেশটির কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে ‘ফ্রি প্লাস ওয়ান’ পদ্ধতিতে দেশে ফেরার সুযোগ পাবেন প্রবাসী কর্মীরা। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে ‘ফ্রি প্লাস ওয়ান’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরমর্শ দিয়েছে। ‘ফ্রি প্লাস ওয়ান’ পদ্ধতিতে যে কোন অবৈধ বিদেশী কর্মী ৪শ’ রিংগিত জরিমানা এবং কুয়ালালামপুর ঢাকা বিমানের টিকেট নিয়ে পুত্রজায়ার ইমিগ্রেশনে সেন্টারে গেলেই তাকে দেশে ফেরার জন্য সুযোগ দেয়া হবে। এদিকে মালয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, আড়াই হাজারের মতো বাংলাদেশি কর্মীকে দেশটির পুলিশ আটক করেছে। তবে হাইকমিশন বলছে বাংলাদেশের সাড়ে ৭শ’ কর্মী আটকের বিষয়টি তারা জানেন। বৈধ-অবৈধ কোন হিসাব না করেই দেশটির পুলিশ গণহারে কর্মীদের আটক করে যাচ্ছে। যাদের ই-কার্ড আছে তাদেরও আটক করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশী কর্মীরা সবাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেক বৈধ কর্মী পুলিশী হয়রানির ভয়ে কাজে যাচ্ছেন না। তারা গত কয়েক দিন ধরে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না পুলিশের ভয়ে। রাস্তায় বের হলেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ-এমন কি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। কর্মীদের জন্য একটা চরম ভীতিকর পরিবেশের জন্ম দিয়েছে দেশটির পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ যে কোন কর্মীকে আটক করেই হাত কড়া পরিয়ে বেদম মারধর চালায়। মারধরের একপর্যায়ে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করলে কর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়। টাকা নিয়েও কর্মীদের ছেড়ে দিচ্ছে না। একদিকে পুলিশ টাকা নিচ্ছে অন্যদিকে সরকার অবৈধ কর্মীদের ৪শ’ রিংগিত জরিমানা আদায় করার ঘোষণায় কর্মীরা মহাবিপদের মধ্যে পড়েছেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় বর্তমান আটক অভিযান নিয়ে নিয়োগ কর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ গ্রেফতারের ভয়ে বিপুলসংখ্যক বৈধ ও অবৈধ কর্মী বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছে। এতে কারখানার মালিকরা তাদের নিজেদের ব্যবসা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ যতদিন না মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় বন্ধ হয় ততদিন পালিয়ে থাকা প্রবাসী কর্মীরা কাজে যোগ দিতে পারবেন না। ফলে হুমকির মুখে পড়তে পারে মালয়েশিয়ার নির্মাণ, ফার্নিচার ও প্ল্যানটেশন খাত। বিশেষ করে ফার্নিচারে খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। সারা বিশ্বে মালয়েশিয়ার তৈরি ফার্নিচার রফতানি হয়। উৎপাদন প্রায় বন্ধের পথে। মালয়েশিয়ার ফার্নিচার শিল্প ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘মুয়াব’সহ ৮ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর দফতরবিষয়ক মন্ত্রী দাতুক সেরি ড. উই কা সিয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করে তাদের অবস্থা তুলে ধরেন। এ সময় ড. সিয়াং তাদের আশ্বাস দেন, দ্রুত পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। ব্যবসা বাণিজ্যে যাতে কোন প্রকার প্রভাব না পড়ে সে জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে। তবে কর্মী আটকের বিষয় নিয়ে তিনি কোন কথা বলেননি।
×