ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ক্যানভাসে সময়কে ধারণ করেছিলেন জয়নুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৯ মে ২০১৭

ক্যানভাসে সময়কে ধারণ করেছিলেন জয়নুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবিবার ছিল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রয়াণবার্ষিকী। ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করা হলো বিনম্র শ্রদ্ধায়। দেশের চারুশিল্প আন্দোলনের পথিকৃৎ শিল্পীকে জানানো হলো ভালবাসা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাঁর সমাধিসৌধে অর্পণ করা হয় পুষ্পাঞ্জলি। এদিন বৃষ্টিঝরা দুপুরে স্মৃতিচারণ ও আলাপনে শিল্পাচার্যকে স্মরণ করেছে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত চারুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। শিল্পাচার্যের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে চারুকলা অনুষদ আয়োজন করে স্মৃতিচারণ ও আলোচনাসভা। অনুষদের লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত স্মরণানুষ্ঠানে অধ্যাপক বুলবন ওসমানের সভাপতিত্বে মূল আলোচক ছিলেন শিল্প-সমালোচক মইনুদ্দিন খালেদ। বাবার শিল্পকর্ম সংরক্ষণ বিষয়ে কথা বলেন শিল্পাচার্যের ছেলে ময়নুল আবেদিন। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক মিজানুর রহিম ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। ময়নুল আবেদিন বলেন, বাবার অনেক চিত্রকর্মই আমাদের কাছে আছে। কিন্তু সেগুলো এদেশে আদৌ সংরক্ষণ করা সম্ভব কিনা, সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। সেজন্যই ভাবি, বাবার ছবিগুলো কোন বিদেশী জাদুঘরে দিয়ে দেব; যাতে ছবিগুলো ভাল থাকে। তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। তাঁর সম্পর্কে যত পড়ি ও যত জানি ততই শ্রদ্ধা বাড়ে। মইনুদ্দিন খালেদ বলেন, জয়নুল আবেদিন কালের সারথী। তিনি কখনও কালকে উপেক্ষা করেননি। তাঁর ক্যানভাসে বারবার গ্রামবাংলার প্রকৃতি, দুর্ভিক্ষ উঠে এসেছে। অনেকেই দুর্ভিক্ষের কথা জানেন তাঁর ছবির মধ্য দিয়ে। এর চেয়ে বড় পাওয়া একজন শিল্পীর জন্য আর হতে পারে না। শিল্পের মাঝে পরিচিতি লাভ করেছে ইতিহাস। এভাবেই ক্যানভাসে সময়কে ধারণ করেছিলেন জয়নুল আবেদিন। যদি তাঁর আঁকা দুর্ভিক্ষের ছবি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ইতিহাস শেষ হয়ে যাবে। কারণ, এর চেয়ে বড় ইতিহাস এ অঙ্গনে নেই। অধ্যাপক মিজানুর রহিম বলেন, জয়নুল আবেদিন একজন শিল্পী ও মানুষ হিসেবে খুবই কাছাকাছি। তিনি বড়মাপের শিল্পী যেমন ছিলেন, তেমনি বড়মাপের মানুষ এবং বড় মাপের বাঙালী। নিসার হোসেন বলেন, শিল্পকলার সব ধারার সঙ্গে শিল্পাচার্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি শিল্পকলা নিয়ে সব সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কিন্তু সেসব বিষয়ে আমরা ঠিকমতো নজর দিতে পারিনি। ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাঁর কর্ম নিয়ে অধিক কাজ করতে হবে। তিনি অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে দেশের চারুশিল্পকে আজকের পর্যায়ে এনেছেন। কিন্তু তাঁর সব স্বপ্নপূরণ হয়নি। সে স্বপ্নপূরণে আমাদের কাজ করতে হবে। কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ছেলে অধ্যাপক বুলবন ওসমান স্মৃতিচারণ করে বলেন, জয়নুল আবেদিন আমার বাবার বন্ধু ছিলেন এবং আমার শিক্ষক ছিলেন। আমি সব সময় ওনার মুখে ময়মনসিংহের ভাষা শুনেছি। তাঁর মতো করে বলার চেষ্টাও করতাম, কিন্তু সেটি কখনই হতো না। ময়মনসিংহের ভাষা তাঁর মুখ থেকেই সবচেয়ে ভাল শোনাতো। তিনি কলকাতাতেও চলিত বাংলায় কথা না বলে নিজের ভাষায় কথা বলতেন। এটাই ছিল স্বাতন্ত্র্যবোধ। যা তাঁর চিত্রকর্মেও সব সময় উঠে এসেছে। স্মরণানুষ্ঠানে আগে সকালে চারুকলা অনুষদসংলগ্ন জয়নুল আবেদিনের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায় চারুকলা অনুষদ, চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ, ছাপচিত্র বিভাগ, ভাস্কর্য বিভাগ, কারুশিল্প বিভাগ, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ, প্রাচ্যকলা বিভাগ, মৃৎশিল্প বিভাগ এবং শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ, জাতীয় জাদুঘর, সোনারগাঁওয়ের লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, চারুশিল্পী সংসদ, চারুকলা শিক্ষক পরিষদসহ চারুশিল্পের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। গ্যালারি কায়ার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর চিত্রপ্রদর্শনীর সমাপ্তি এ বছর পথচলার ১৩ বছর পূর্ণ করেছে রাজধানীর উত্তরার গ্যালারি কায়া। আর এই শিল্পযাত্রার সাফল্যের উদ্্যাপনে প্রদর্শনালয়টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বিশেষ এ প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ১৯৫৮ সাল থেকে শুরু করে বতমান বছর পর্যন্ত ৩২ জন চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্ম। সেই সুবাদে এক আয়োজনে দেখা মিলেছে দেশবরেণ্য, প্রখ্যাত এবং নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের ছবি। ৫ মে থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল রবিবার। ৫০টি চিত্রকর্মে সজ্জিত প্রদর্শনীতে যেসব শিল্পীর ছবি স্থান পেয়েছে তাঁরা হলেনÑ মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর, কে জি সুব্রামানিয়ান, দেবদাস চক্রবর্তী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রফিকুন নবী, হামিদুজ্জামান খান, মনসুর-উল-করিম, চন্দ্র শেখর দে, রতন মজুমদার, শম্ভু আচার্য, জামাল আহমেদ, কাজী রকিব, রণজিৎ দাস, কামালউদ্দিন, আহমেদ শামসুদ্দোহা, মাসুদা কাজী, শেখ আফজাল হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, রাফি হক, অতীন বসাক, মোহাম্মদ ইকবাল, নগরবাসী বর্মণ, শেখ মোঃ রোকনুজ্জামান, আশরাফুল হাসান, রুহুল আমিন তারেক, সোহাগ পারভেজ, সুব্রত দাস, শাহানূর মামুন, কাওসার শিকদার ও অংকুর সিংহ।
×