ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রুক্ষ শুষ্ক প্রকৃতিতে বেগুনী রঙের ছটা উপভোগ্য সুন্দর

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৮ মে ২০১৭

রুক্ষ শুষ্ক প্রকৃতিতে বেগুনী রঙের ছটা উপভোগ্য সুন্দর

মোরসালিন মিজান ॥ প্রখর রোদ। অসহনীয় গরম। ঝিরি ঝিরি হাওয়াটুকু থাকলেও চলত। নেই। ঘামে ভেজা শরীর। এ অবস্থায় প্রকৃতির বন্দনা? সম্ভব? অথচ সদ্য ফোটা জারুল ভুলিয়ে দিল সব। মনের যত খেদ, দূর হয়ে গেল মুহূর্তেই। সেদিন হোটেল সোনারগাঁওয়ের ডান পাশের ফুটপাথ ধরে হাতিরঝিলে প্রবেশ করতেই দেখা গেল জারুলের বাগান। অনেকগুলো গাছ। কচুরিপানার মতো ঘন ফুল। ফুলের সমারোহ। হঠাৎ দেখায় বাগান বলেই মনে হয়। অথচ কিছুদিন আগেও জায়গাটিতে জারুলের কোন অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। অন্য গাছের সঙ্গে গাছটি মিলেমিশে ছিল। আলাদা করা যেত না। এখন অনেক দূর থেকে চেনা যায়। আকর্ষণ করে। কারণ আর কিছু নয়। জারুল ফুলের সৌন্দর্য। একটা দুটো ফুল নয়। অজস্র ফুল। যেন জারুল দিয়ে নিজের ডালা সাজিয়েছে প্রকৃতি। সাধারণত ফুল মানেই লাল রং। কিন্তু জারুলের বেলায় বেগুনী বর্ণ। দুর্লভ রঙের ছটা বেশ লাগে। জীবনানন্দ দাসেরও দৃষ্টি এড়ায়নি জারুল। প্রকৃতির কবি লিখেছেন, ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছেÑ সবচেয়ে সুন্দর করুণ:/সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল;/সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বথ, বট, জারুল...। আরও অনেক কবির বর্ণনায় ওঠে এসেছে জারুল। ফুলের নামটি তো বাঙালীর চিরচেনা। ফুলটিও দেখা খুব। তবে রাজধানী শহরের অনেকেই নামের সঙ্গে ফুলটিকে মিলিয়ে দেখেননি। সেই দেখার সময় এখন। জারুলের বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওজা। সুইডেনের বৃক্ষপ্রেমী লেজারস্ট্রমের নাম থেকে নেয়া হয়েছে ‘ল্যাজারস্ট্রমিয়া’। আর স্পেসিওজা ল্যাটিন শব্দ। এর মানেÑ সুন্দর। সুন্দর এই ফুলের পাপড়ি খুব কোমল। নমনীয়। জারুল বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত চীন মালয়েশিয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশে এটি দেখা যায়। বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয়। শুকনো এলাকায়ও মন্দ থাকে না। মাঝারি আকারের গাছ। পত্রমোচী বৃক্ষ। ম্লানধূসর মসৃণ কা-। শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে থাকে। জারুল গাছ ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়। ফুল ২ থেকে ২.৫ ইঞ্চি প্রশস্ত। ৫ থেকে ৭ সেমি চওড়া। পাপড়ি ৬টি। প্রতিটি পাপড়ি ১ ইঞ্চির মতো দীর্ঘ। অনেকগুলো সোনালী পুংকেশর দৃশ্যমান। বেগুনী ফুল হলেও, কোন কোন সময় সাদার মতো দেখায়। দুটো রূপই উপভোগ্য।
×