টাকার অঙ্কটা শুনেই ঘরজুড়ে একটা চাপা উত্তেজনা শুরু হয়ে যায়। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না উপস্থিত কেউই। কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন শিল্পী জঁ মিশেল বাসকিয়ার একটি নামহীন ছবি (যেটিকে এখন উল্লেখ করা হচ্ছে ‘স্কাল’ বা ‘খুলি’ নামে) বৃহস্পতিবার ১১ কোটি ডলারে বিক্রি করল নিলাম সংস্থা সোথবি, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা। এর আগে কখনও কোন মার্কিন শিল্পীর ছবি ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে বিক্রি হয়নি। সারা পৃথিবীতেই মাত্র ত্রিশটি ছবি ‘১০ কোটি ডলারের ক্লাব’-এ রয়েছে। সেগুলোর বেশিরভাগই আবার পাবলো পিকাসো, ভিনসেন্ট ভ্যান গগ বা গুস্তাভ ক্লিম্টের আঁকা।
প্রশ্ন উঠছে, ১৯৮২ সালে আঁকা ৬ ফুট বাই সাড়ে পাঁচ ফুটের ছবিটা কি সত্যিই এত ‘দামী’? শিল্প সমালোচকরা একবাক্যে বলছেন- হ্যাঁ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের রক্তক্ষরণের দলিল এই ছবি। একটি কালো খুলি, তা থেকে ঝরে পড়ছে রক্ত। রক্ত চোখের কোটরে, দাঁতের ফাঁকে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে কপাল ও কান থেকে। ছবিটি যেন একটি নীল দেয়ালের ওপর আঁকা, যে দেয়ালে কেউ অঙ্ক কষছিল। কীসের অঙ্ক? আফ্রিকা থেকে জাহাজে গাদাগাদি করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার সময় কতজন ক্রীতদাস মারা গিয়েছিলেন, সেই অঙ্ক? নাকি গত কয়েক বছরে পুলিশের গুলিতে কতজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ নিহত হয়েছেন, সেই হিসাব? শিল্প সমালোচকরা বলছেন, এসব অস্বস্তিকর প্রশ্ন খুঁচিয়ে তুলেছে বলেই বাসকিয়ার এ ছবিটি এত দামী। শিল্পের নিরিখে এবং ইতিহাসের মাপকাঠিতেও।
মার্কিন নিও-এক্সপ্রেশনিজমের বাইরে বাসকিয়া খুবই স্বল্প পরিচিত একটি নাম। জন্ম ১৯৬০ সালে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে। দশম শ্রেণীর পরে স্কুল ছেড়ে দেন। রেগে গিয়ে বাড়ি থেকে ছেলেকে বার করে দিয়েছিলেন জঁ মিশেলের বাবা। ব্রুকলিনের অলিগলিতে বন্ধুদের সঙ্গে দিনরাত কাটত। পেট চলত হাতে আঁকা টিশার্ট আর পোস্টকার্ড বিক্রি করে। ছোটবেলা থেকেই ম্যানহাটনের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিটি করে বেড়াতেন। সাতের দশকের শেষ থেকে শিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি বাড়তে থাকে। প্রদর্শনী হয় দেশে, বিদেশেও। ১৯৮৮ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে অতিরিক্ত মাদক খেয়ে মারা যান শিল্পী। যে ছবিটি নিলামে উঠেছে, সেটি শিল্পীর ২১ বছর বয়সে আঁকা।
নিউইয়র্কের সোদবিতে দশ মিনিটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ছবিটি কিনে নেন ৪১ বছর বয়সী জাপানী কোটিপতি, শিল্পপতি ও শিল্পানুরাগী ইউসাকু মেজাওয়া। জাপানের চিবা শহরে একটি শিল্প সংগ্রহশালা খুলতে চান তিনি। এর আগেও বাসকিয়ার আঁকা বেশ কয়েকটি ছবি কিনেছেন ইউসাকু। সাম্প্রতিকতম সংগ্রহ সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘প্রায় তিরিশ বছর লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এ ছবিটি। তাই নিজের সংগ্রহশালায় রাখার আগে আমি সেটি বিভিন্ন মিউজিয়ামে পাঠাতে চাই। আমি যেভাবে ছবিটি দেখে মুগ্ধ হয়েছি, আশাকরি সবাই তাই হবেন।’ -এএফপি ও ওয়েবসাইট
