ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

* দক্ষিণ এশিয়ার মহাকাশে উড়ল স্যাটেলাইট;###;* ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাত দেশের সরকার প্রধানদের উৎক্ষেপণকালে শুভ কামনা;###;* সহযোগিতার মাত্রা আরও বাড়াবে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নবদিগন্তের সূচনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৬ মে ২০১৭

নবদিগন্তের সূচনা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে এক নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশের শীর্ষ নেতারা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশের সরকারপ্রধান একযোগে দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইট উদ্বোধনকালে বলেছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তি খাতে প্রতিটি দেশই বিশেষ লাভবান হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতে সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ হয়েছে। এ উপলক্ষে পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের সরকারপ্রধান যুক্ত হন এক ভিডিও কনফারেন্সে। ভারত নিজে উদ্যোগ নেয়ার পর ২০১৪ সালে সার্ক সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে এই উপগ্রহে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। পাকিস্তান ছাড়া বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ এতে সাড়া দেয়। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন-ইসরোর তৈরি জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটটি শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচ- ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা নিজ নিজ দেশ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্যাটেলাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এই ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আমরা খুব খুশি। এটি এই অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি দিল্লী সফরের সময় ভারত সরকারের আতিথেয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত সফরে আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আমি দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। ওই সফরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক দুই দেশের সম্পর্কে নতুন দিক উন্মোচন করেছে। আজ নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আবারও যুক্ত হয়ে কথা বলতে পেরে আমি আনন্দিত। এছাড়া, ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেয়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের বন্ধুপ্রতীম সরকারপ্রধানকেও আমি শুভেচ্ছা জানাই। সফলভাবে দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করায় আপনাকে এবং আপনার দেশের জনগণকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগেই আমরা দুই দেশের মধ্যে মহাকাশ বিষয়ক চুক্তি সই করেছি। আমরা ভূমি ও পানির পাশাপাশি মহাকাশেও এখন সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করেছি। ভবিষ্যতে এই স্যাটেলাইট সহযোগিতার মাত্রা আরও বাড়াবে বলেও আশা করছি। আমি বিশ্বাস করি, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের স্বার্থ এই অঞ্চলের দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণমূলক কর্মকা-ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি নিশ্চিত করতে আমরা এই অঞ্চলের সব দেশের মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এই উদ্যোগ। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশই এ থেকে লাভবান হবে। এর ফলে এই অঞ্চলে একটি নবদিগন্তের সূচনা হবে বলেও প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আজকের দিনটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ১৫০ কোটি মানুষের জন্য এটি একটি উন্নয়নের প্রতীক হয়ে থাকবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভারতের পাশে থাকার জন্য তিনি এই অঞ্চলের শীর্ষ নেতাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি রাখার দিন। দুই বছর আগে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের উন্নয়নের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ সেই প্রতিশ্রুতির পূরণ। এর মাধ্যমে আমরা সহযোগিতার নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি করলাম। আমাদের মধ্যে সহযোগিতার নমুনা এখন মহাকাশে উড্ডীয়মান থাকবে। নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান নিজেদের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ, সুশাসন, উন্নত ব্যাংকিং সেবা ও উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাধাগ্রস্ত হবে না নিশ্চিত হওয়ার পর সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন-ইসরোর তৈরি জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটটি শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ইসরোর তথ্য অনুযায়ী, তাদের নিজস্ব রকেট জিএসএলভি-এফ০৯ এ করে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। গত মাসে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছিলেন, এই কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ৪০ কোটি ডলারের পুরো ব্যয় বহন করছে তার দেশ। ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটে’র ১২ ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে একটি বিনামূল্যে পাচ্ছে বাংলাদেশ এবং তা যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে। টেলি মেডিসিন, টেলি শিক্ষা, আন্তঃসরকার নেটওয়ার্ক, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে জরুরী যোগাযোগ, টেলিভিশন ব্রডকাস্ট, ডিটিএইচ টেলিভিশন সেবায় সুবিধা পাওয়া যাবে। এই স্যাটেলাইটের নাম প্রথমে সার্ক স্যাটেলাইট ঠিক করা হলেও পাকিস্তান না আসায় নাম বদলে রাখা হয় সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট। সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইটকে আঞ্চলিক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত বলছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত পহেলা মে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে ধন্যবাদ জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
×