ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করবে মুসলিম নাগরিক অধিকার সংস্থা

স্থগিত করল আদালত ॥ শরণার্থী ফেরত

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

স্থগিত করল আদালত ॥ শরণার্থী  ফেরত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ভিসাধারী অথবা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন একজন মার্কিন ফেডারেল বিচারক। খবর বিবিসি ও এএফপির। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে শনিবার মামলা করে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন (এসিএলইউ)। এসিএলইউ বলছে, আদালতের এ স্থগিতাদেশের ফলে যাদের ফেরত পাঠানোর জন্য আটক করা হয়েছিল তারা মুক্তি পাবেন। গ্রুপটির ধারণা, সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর থেকে বিভিন্ন বিমানবন্দরে বা ট্রানজিটের সময় অন্তত এক শ’ থেকে দুই শ’ লোককে আটক করা হয়েছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম মুসলিম নাগরিক অধিকার সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর)। অভিবাসন বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের বিমানবন্দরে শত শত মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ রায় দিল। শুক্রবার স্বাক্ষরিত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে সকল মার্কিন শরণার্থী কর্মসূচী স্থগিত হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে সিরিয়া, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিগকদের ওপর ৯০ দিন যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এরপর বৈধ ভিসা অথবা অভিবাসনের জন্য কাগজপত্র থাকলেও যারা যাত্রাপথে ছিলেন তাদের বিমানবন্দরে আটক করা হয়। মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জজ এ্যান ডানলির শনিবার রাতের এ আদেশের ফলে যাদের বৈধ ভিসা আছে, যাদের কাছে কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত শরণার্থীর আবেদনপত্র আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে যাদের কর্তৃপক্ষ বৈধতা দিয়েছে তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া যাবে না। জরুরী এ রুলিংয়ে আরও বলা হয়, ট্রাম্পের আদেশে যারা ভুক্তভোগী তাদের ‘বড় ধরনের ও অপূরণীয়’ ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। দেশটির অভিবাসী অধিকার প্রকল্পের আইনবিষয়ক উপ-পরিচালক লি গেলার্ন্ট আদালতে অভিবাসীদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ সময় আদালতের বাইরে অনেকে তাকে সমর্থন জানান। গেলার্ন্ট জানান, শনিবার বিকেলের দিকে কিছু লোককে বিমানে করে ফের পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়েছে। আদালতের বাইরে জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকার যা করছে বিচারক তার কিছুটা জানতে পেরেছেন এবং আমাদের দাবির পক্ষে সায় দিয়েছেন। এর ফলে যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং আটক হয়েছেন সরকার তাদের বের করে দিতে পারবে না।’ তিনি আরও জানান, বিচারক সরকারকে আটকে পড়াদের নামের তালিকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ‘আমরা প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করব, পরামর্শ দেব; চেষ্টা করব দ্রুত তাদের আটকাবস্থা থেকে মুক্ত করতে, অন্তত তাদের যেন বিপদের মুখে ফেরত পাঠানো না হয়, সে চেষ্টা করব’- বলেন গেলার্ন্ট। আদালতের স্থগিতাদেশের পর এসিএলইউ টুইট বার্তায় লেখে, ‘প্রথম সপ্তাহেই ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতের কাছে হারলেন।’ আদালত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে এ মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে। এসিএলইউ সদস্য জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল’ সেন্টারের আইন বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড কোল এক টুইটে বলেন, ‘মি. ট্রাম্প, আমরা আপনাকে আদালতে দেখে নেব।’ মামলার হুমকি দেয়া হয় কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্সের (সিএআইআর) পক্ষ থেকেও। ট্রাম্পকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের সুযোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক যুক্ত বিবৃতিতে। শনিবার সকালে ট্রাম্প বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি তার নির্বাহী আদেশের পক্ষে সাফাই গান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নয়। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, যেসব পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, তা অনেকদিন ধরেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল। আর অভিবাসন নিয়ে তার আদেশ ‘চমৎকারভাবে’ কাজ করছে। বিমানবন্দরসহ সবখানেই তা কার্যকর হচ্ছে। আদালতের জরুরী রুলিংয়ের পর হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, তারা এখনও আদালতের আদেশ হাতে পাননি। তবে সরকার যে কোন যৌক্তিক আদেশ বাস্তবায়ন করবে।
×