ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোট বাস দেড় হাজার;###;নষ্ট ৫৫৫;###;নিলামে যাচ্ছে ২৪১ বাস;###;শতাধিক বাস মেরামতে প্রয়োজন ৫৫ কোটি টাকা;###;কমছে সেবার পরিধি;###;নতুন কেনা হচ্ছে ৬০০ বাস;###;৮৫০-এর বেশি গাড়ি রাস্তায় নামে না

বেহাল গণপরিবহন ॥ বিআরটিসির দেড় হাজার বাসের মধ্যে নষ্ট ৫৫৫

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ অক্টোবর ২০১৬

বেহাল গণপরিবহন ॥ বিআরটিসির দেড় হাজার বাসের  মধ্যে নষ্ট ৫৫৫

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বেহাল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) পরিবহন সেবা। প্রতিষ্ঠানটির সিঙ্গেল ডেকার, আর্টিকুলেটেড ও ডাবল ডেকার মিলে মোট এক হাজার ৫৩৭ বাসের মধ্যে ৫৫৫টিই এখন নষ্ট। এ কারণে সরকারী গণপরিবহন ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। এসব বাস বিভিন্ন সময় কেনা হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আর বাস সঙ্কটে গত কয়েক বছরে অন্তত ২০ রুটে যাত্রী সেবা বন্ধ। অনেক রুটে বাস চলাচল ইতোমধ্যে সীমিত করা হয়েছে। গত ২১ জুন পর্যন্ত বাসগুলোর বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো বিআরটিসির এক প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে। নিম্নমানের বাস কেনা, সড়ক দুর্ঘটনা, হরতাল-অবরোধ, সংশ্লিষ্টদের অযতœ-অবহেলা এবং যাত্রীদের সচেতনতার অভাবকেই এ জন্য দায়ী করছে পরিকল্পনা কমিশন। বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১৯ ডিপো থেকে বিআরটিসির বাস নিয়মিত চলাচল করছে। এসব বাস কোরিয়া, চীন ও ভারত থেকে বিভিন্ন সময়ে কেনা হয়েছিল। যে উদ্দেশ্যে এসব বাস কেনা হয়েছিল তা পূরণ হয়নি। কোন কোন বাস কেনার অল্প সময়ের মধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে, এসব নষ্ট বাস ফেলে না রেখে নিলামে বিক্রি করে সেই টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় তার সামনে নষ্ট বাসের হিসাব উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। এদিকে বিআরটিসির টেকনিক্যাল কমিটি ইতোমধ্যে ২৪১ অকেজো বাস চিহ্নিত করেছে। পরবর্তীতে আবারও চলবে অকেজো বাসের যাচাই বাছাইয়ের কাজ। এছাড়াও শতাধিক বাস মেরামতযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব বাস মেরামতে ৫৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন গাড়ি নামানোর জন্য টেন্ডার আহ্বানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এজন্য ফরমালিটি ডকুমেন্টস সংগ্রহের কাজ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নষ্ট বাসগুলো নিলামের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বাতিল বাসগুলোর একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। এসব নষ্ট বাসের মধ্যে অনেকগুলো পুরনো। নষ্ট বাসগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ভাগ আছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, যেমন কিছু বাসের অবস্থা খুবই খারাপ। কিছু বেশি মেরামত প্রয়োজন। এজন্য প্রচুর টাকা দরকার। কিছু বাস সামান্য মেরামত করলেই ব্যবহার করা যায়। যদি এগুলো বেসরকারী বাস হতো তাহলে একটু সমস্যা দেখা দিলেই তারা হয়ত দ্রুত মেরামত করে চালিয়ে নিতে পারত। কিন্তু সরকারী কোন কাজ করাতে হলে অনেক প্রক্রিয়া থাকে। তিনি বলেন, নষ্ট বাসগুলো কনডেম ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বাস আমদানি, অকেজোগুলো বিক্রি ও কিছু বাস মেরামত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান। মেরামতে প্রয়োজন ৪৫ কোটি টাকা ॥ বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, মেরামতের অযোগ্য এমন বাসের তালিকা ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশের ১৯ ডিপো থেকে তথ্য সরবরাহ করে সংশ্লিষ্ট কমিটি ২৪১ গাড়ি চিহ্নিত করেছে। এসব গাড়ি বিক্রির প্রাথমিক অনুমোদন নিয়ে ফাইল চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও মেরামতযোগ্য শতাধিক গাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছে। ভলবো বাস মেরামতের জন্য ৩৩ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। সাধারণ বাসের জন্য চাওয়া হয়েছে ১২ কোটি টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভলবো বাসগুলো বেশিরভাগই মেরামতযোগ্য নয়। কারণ লাইফ টাইম শেষ হওয়ার আগেই এসব বাস নষ্ট হয়েছে। তাই এগুলো ফের মেরামত করে কোন লাভ হবে না বলেও মনে করেন তারা। এদিকে বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে বিআরটিসির সচল গাড়ি ছিল এক হাজার ২৭। এখন এমন গাড়ির সংখ্যা এক হাজার ৪৯। কিন্তু ৮৫২ গাড়ির বেশি কোন দিনই রাস্তায় নামে না। অচল বাসগুলো ডিপোতে ফেলে রাখা হয়। এই প্রেক্ষাপটে বিআরটিসির বহরে নতুন গাড়ি বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল এআর পারভেজ মজুমদার বলেন, মেরামতের অযোগ্য গাড়িগুলোর তালিকা করা হয়েছে। তিনি পাশাপাশি মেরামতযোগ্য গাড়ির তালিকা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানান। সচল-অচল গাড়ি ॥ বিআরটিসির এক কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত নষ্ট বাসের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে মোট ২৩টি। এগুলোর মধ্যে সিঙ্গেল ডেকার, আর্টিকুলেটেড, এসি বাস ও ডাবল ডেকার রয়েছে। দুর্ঘটনায় নষ্ট হওয়া বাসগুলোর মধ্যে মতিঝিলে ৬, কুমিল্লায় ২, চট্টগ্রামে ৪, সিলেটে ২, গাজীপুরে ৩, নারায়ণগঞ্জে ২, পাবনায় এক এবং উথলী বাস ডিপোতে তিন বাস রয়েছে। বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের টেকনিক্যাল বিভাগ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে সিঙ্গেল ডেকার বাসের মধ্যে কোরিয়া থেকে আনা হয় মোট ২৫৩ বাস। এগুলোর মধ্যে সচল রয়েছে ১৮৫ এবং নষ্ট ৬৮ বাস। নষ্ট বাসগুলোর মধ্যে মিরপুর ডিপোতে ৬, যশোরে ৯, মতিঝিলে ১৫, নারায়ণগঞ্জে ৯, নরসিংদীতে এক, পাবনায় দুই, বগুড়ায় এক, চট্টগ্রামে ১২, সিলেটে ২, কুমিল্লায় ৮, সোনাপুরে তিনটি বাস রয়েছে। চীন থেকে আনা হয় মোট ২৪৫ সিঙ্গেল ডেকার বাস। এগুলোর মধ্যে নষ্ট হয়ে আছে ১২৭। বাসগুলো রয়েছে কল্যাণপুরে ১৯, মিরপুরে ৩২, যশোরে ৪৬, মতিঝিলে ২, নারায়ণগঞ্জে ২, নরসিংদীতে ১৭, কুমিল্লায় ২, সোনাপুরে এক, মাদারীপুরে এক, আইসিডব্লিউএসে ৩ ও চট্টগ্রামে রয়েছে দুটি। ভারত থেকে আনা হয়েছিল মোট ৪৪৩ সিঙ্গেল ডেকার বাস। এর মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ২৫৫, ১৮৮ বাস নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে কল্যাণপুরে ২৩, মিরপুরে ৪, মতিঝিলে ১৯, যশোরে ১২, নরসিংদীতে এক, বরিশালে ১৫, পাবনায় ১১, রংপুরে ২৪, বগুড়ায় ১৪, খুলনায় ৬, চট্টগ্রামে ৯, সিলেটে এক, কুমিল্লায় ১৭, আইসিডব্লিউএসে ২৯ নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। বিআরটিসি বলছে, আর্টিকুলেটেড (জোড়ালাগানো) বাস মোট কেনা হয় ৫০। এর মধ্যে ৩৬ বাস চলছে আর নষ্ট রয়েছে ১৪। এগুলোর মধ্যে কল্যাণপুরে ৫ এবং গাজীপুরে ৯ বাস নষ্ট হয়ে আছে। ভারতের অশোক লেল্যান্ড কোম্পানি থেকে এসি বাস আনা হয়েছিল ৮৮। এর মধ্যে সচল রয়েছে ৮২ এবং নষ্ট হয়ে গেছে ৬টি। মতিঝিলে ২, বরিশালে এক, রংপুরে ২ এবং সোনাপুরে একটি এসি বাস নষ্ট রয়েছে। ভারতের অশোক লেল্যান্ড কোম্পানি থেকে ডাবল ডেকার বাস কেনা হয় মোট ৪৫৮। এর মধ্যে ৩০৬ বাস চলছে, নষ্ট রয়েছে ১৫২ বাস। এগুলোর মধ্যে কল্যাণপুরে ৪১, মিরপুরে ৪১, যশোরে ৯, মতিঝিলে ৮, নারায়ণগঞ্জে ২, নরসিংদীতে ৫, পাবনায় ৩, খুলনায় এক, চট্টগ্রামে ৯, সিলেটে একটি, উথলীতে ৫, গাজীপুরে এক, আইসিডব্লিউএসে ২৪, মাদারীপুরে এক ও গাজীপুর শহরে এক বাস নষ্ট রয়েছে। প্রগতি থেকে কেনা বাসের সুদ নিয়ে জটিলতা ॥ কোরিয়া, চীন ও ভারতের বাইরে থেকে কিছু বাস কেনা হয় প্রগতি ট্রেডার্স থেকে। এ সময় ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেয়া হয়েছিল সেটি নিয়ে বর্তমানে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রগতি থেকে ঋণের মাধ্যমে বিআরটিসির কেনা বাসগুলোর সুদের টাকা মওকুফের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ বিভাগ থেকে এখনও সুদ মওকুফের বিষয়ে সমাধান দেয়া হয়নি। ফলে সম্প্রতি একনেক বৈঠকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হয়। বিআরটিসির জোয়ার সাহারা বাস ডিপো ম্যানেজার নায়েব আলী জনকণ্ঠকে জানান, এই ডিপো থেকে দুটি রুটে ৬০ বাস নিয়মিত চলাচল করে। স্টাফ বাসসহ সব মিলিয়ে ১১০ গাড়ি নিয়মিত চলাচল করছে। কয়েক বছর আগে চীন থেকে আনা অন্তত ৪৫ বাস একবারেই অচলাবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বাস দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সব বাসই এখন মেরামতের অযোগ্য বলে জানান তিনি। নতুন কেনা হচ্ছে এক হাজার ১০০ গাড়ি ॥ গত ৩০ আগস্ট একনেক সভায় বিআরটিসির জন্য ৬০০ বাস ও ৫০০ ট্রাক ভারতীয় ঋণ কর্মসূচীর আওতায় ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী তার বিশদ বক্তব্যে সাংবাদিকদের জানান, বিআরটিসির জন্য দ্বিতল, একতলা এসি ও নন-এসি বাস কেনার জন্য ৫৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার প্রকল্পের ৪৩৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ভারতীয় ঋণ থেকে পাওয়া যাবে। বাকি ১৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার যোগান আসবে সরকারী তহবিল থেকে। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৩০০ ডাবল ডেকার, ১০০ সিঙ্গেল ডেকার এসি ইন্টারসিটি ও ১০০ সিঙ্গেল ডেকার নন-এসি বাস কেনা হবে। অন্যদিকে ২১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিআরটিসির ৫০০ ট্রাক ক্রয় প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় ১৫ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৫০ ও ১০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫০টি ট্রাক কেনা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে এজন্য ভারতীয় ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আসবে সরকারী তহবিল থেকে। বিআরটিসির জন্য কেনা বাসগুলো রাজধানীর সড়কগুলোয় চলবে। আর ট্রাকগুলো সরকারের বিভিন্ন দফতর বা সংস্থার কাজে ব্যবহার হবে। প্রসঙ্গক্রমে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিআরটিসির যেসব বাস ও ট্রাক নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলো দ্রুত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলা হয়, ২০১০-১৩ পর্যন্ত বিআরটিসিকে বিভিন্ন ধরনের ৯৫৮ বাস কিনে দেয় সরকার। তবে বাজেট বরাদ্দ না থাকা ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দ্রুতই এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাস সম্পূর্ণ অচল। পরিবহন সঙ্কট রোধ ও শহরের দূষণ কমাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২৫ সিএনজি একতলা বাস কেনা হয়। পরে খোদ সরকারেরই বাস্তবায়ন, পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের মূল্যায়নে দেখা যায়, সরবরাহকৃত বাসগুলো স্পেসিফিকেশন মতো ছিল কিনা, তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে যাচাইও করা হয়নি। পরবর্তীতে লগবই পরীক্ষান্তে দেখা যায়, বাসগুলো নিয়মমাফিক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ওই বিভাগের মূল্যায়নে এটাও উঠে এসেছে যে, ঢাকার রাস্তার সঙ্গে সঠিকভাবে মানানসই না হওয়ায় এবং সঠিকভাবে পরিচালিত ও রক্ষণাবেক্ষণ না করতে পারায় বাসগুলো নিয়ে বিআরটিসিকে দুরবস্থায় পড়তে হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডির এক প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রে আর্টিকুলেটেড বাসের আয়ুষ্কাল ১২ বছর উল্লেখ করেছে। অথচ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সংগ্রহ করা ৫০ আর্টিকুলেটেড বাস দুই বছরের মাথায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১৮ জানুয়ারি এক চিঠিতে বিআরটিসির নতুন কেনা ৪২৮ বাসের মান ও ক্রয় প্রক্রিয়ার ওপর বিআরটিসির মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে ক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, বাসে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, বাস জরাজীর্ণ হয়ে পড়া, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র কাজ না করাসহ নানান ত্রুটির বিষয়ে আইএমইডির পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘প্রকিউরমেন্ট অব ডাবল ডেকার, সিঙ্গেল ডেকার এ্যান্ড আর্টিকুলেটেড বাসেস ফর বিআরটিসি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় ৪২৮ বাস কেনা হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালে ২৯০ দ্বিতল বাস (ডাবল ডেকার), ২০১৩ সালে ৫০ আর্টিকুলেটেড বাস এবং ৮৮ একতলা এসি বিআরটিসির বহরে যোগ হয়। তিনটি প্যাকেজে এসব বাস সরবরাহ করে ভারতীয় কোম্পানি অশোক লেল্যান্ড লিমিটেড। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশী এজেন্ট ইফাদ অটোস লিমিটেড। এসব বাস ঢাকার ভেতরে ও দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য বরাদ্দ দেয় বিআরটিসি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তায় বাস নামার দুই-তিন বছর চলতে না চলতেই বেশির ভাগ বাস জরাজীর্ণ বা অকেজো হয়ে পড়েছে।
×