ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

’১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপির ঐতিহাসিক ভুল

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

’১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপির ঐতিহাসিক ভুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সব রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন। একই সঙ্গে তারা সঠিক পদ্ধতিতে ও সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠনের ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলেন, সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে। নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কমিশনের ওপর জনগণের আস্থার অভাব। আস্থা ফেরাতেই কমিশন পুনর্গঠনে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে উল্লেখ করেন। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত নির্বাচন ‘কমিশন পুনর্গঠন ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এমন মত প্রকাশ করেন তারা। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থার অভাব রয়েছে। যে কারণে যারা হেরে যান তারা কারচুপির অভিযোগ আনেন। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার অভাব নিরসন করতে হবে। নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেয়ার সংস্কৃতিও তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে কারও আপত্তি থাকে না। যাদের বিরুদ্ধে দলপ্রীতির অভিযোগ নেই এবং যাদের সুনাম রয়েছে তারাই নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শামসুল হুদা আরও বলেন, জনগণের আস্থা থাকলেও সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাহায্য করেছিল বলেই কিছু কিছু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ঐতিহাসিক ভুল করেছে। তিনি বলেন, সংসদ বর্জনও একধরনের অপসংস্কৃতি। এসবের কারণে গণতন্ত্রের ভিত নষ্ট হয়ে যায়। নিরপেক্ষ ও আস্থাযোগ্য কমিশন গঠন করতে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের করতে হবে। তাহলে ইসির ওপর জনগণের আস্থা তৈরি হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মূল কেন্দ্র। কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সাধারণত কর্তৃত্ববাদী সরকার গঠিত হয়। তিনি বলেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে আইনের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন অপরিহার্য। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে কথা বলা দরকার। প্রধানমন্ত্রী চাইলেই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ কীভাবে নিশ্চিত হতে পারে এ নিয়ে রাষ্ট্রপতি সকল দলের অংশগ্রহণে আলোচনার সূত্রপাত করতে পারেন। নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক হয়ে গেলে নির্বাচনী ম্যাকানিজম নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থাহীনতা রয়েছে। জনগণের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে সরকার যোগ্য ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবে কিনা। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগী হয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি ও রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দানে পরামর্শ দিতে পারেন। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, দেশের স্বাধীনতার মূল চেতনা হলো গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো নির্বাচন। তাই আমরা চাই একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, আইন প্রণয়ন ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তাই এ অবস্থায় ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাঁরা শপথ গ্রহণ করবেন তাদের আইনী ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। তিনি বলেন, সার্চ কমিটিতে বিচারপতিদের না রাখাই ভাল। কারণ তাদের কোন প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন সবাই চায়। শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলেও সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গঠিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সঠিক নির্বাচনের জন্য সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে কমিশন গঠন করতে হবে। আর এ জন্য সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করতে হবে। যাতে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিরা কমিশনে নিয়োগ পান। অতীতে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সঠিক ব্যক্তিদের কমিশনে নিয়োগ না দেয়ার কারণেই সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন হলেও অনেক ক্ষেত্রে কমিশনের সদস্যরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।
×