ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে ৯ ঘণ্টায় দুই হত্যাকাণ্ড, শঙ্কিত নগরবাসী

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

চট্টগ্রামে ৯ ঘণ্টায় দুই হত্যাকাণ্ড, শঙ্কিত নগরবাসী

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পুলিশী নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নগরবাসী। পুলিশী চেকপোস্ট ও সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশিসহ নানা পদক্ষেপের পরও চট্টগ্রামে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই যুবক হত্যার ঘটনা ঘটেছে মাত্র এক কিলোমিটারের দূরত্বে। এই দুটি হত্যাকা-ে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম দুটি সড়ক থেকে। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ উপলক্ষে পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা কার্যকর রয়েছে। এত নিরাপত্তার মাঝেও কিভাবে হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটল তা নিয়ে নানা প্রশ্ন নগরবাসীর মনে। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট টিমের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরও কিভাবে হত্যাকা-ের ঘটনায় লাশ রাস্তায় ফেলে যাচ্ছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। আবার গত রবিবার লালখান বাজার এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কঠোরতা দেখাতে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো ও তা নিবারণে পুলিশের ভূমিকা প্রদর্শনের মতো নাটকীয়তা মানুষের মনে অনেকটা ভীতির সঞ্চার করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে কি নেই তা নিয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ভেবে দেখা উচিত। নাটকীয়তার মাধ্যমে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে তা সন্দেহভাজন নাশকতাকারী বা জিম্মিকারীদের কৌশল পরিবর্তনে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে। গত ৬ অক্টোবর কমিশনার ইকবাল বাহার সিএমপির সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে মিডিয়া কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন (৩২) বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের সামনের গেটে বাস থেকে নামেন। কারণ তার মা মোবাশ্বেরা বেগম চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মাকে দেখার জন্য তিনি হাসপাতালে আসেন। রাতেই তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু গভীর রাতে হাসপাতালের কেবিনে কিংবা ওয়ার্ডের বেডে থাকা রোগীর সঙ্গে দেখা করার কোন নিয়ম নেই। ফলে নিরাপত্তারক্ষী তাকে ঢুকতে দেয়নি। একপর্যায়ে নাসির হাসপাতালের পশ্চিমে ১০/১৫ গজের মধ্যে থাকা যাত্রী ছাউনিতে বসে ছিলেন দীর্ঘ সময়। ভোর সাড়ে চারটার দিকে তিনি নাস্তা খাওয়ার উদ্দেশ্যে ফয়’স লেক গেটের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনা ঘটে হাসপাতাল থেকে মাত্র ২০/২৫ গজ দূরে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) গেটের অপর প্রান্তে। দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকে শুধুমাত্র মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়েছে। রাস্তার দক্ষিণ পাশে হাসপাতালের নালায় নাসিরের মৃতদেহটি পড়ে ছিল। প্রাথমিক সুরতহালে পুলিশ দেখেছে নাসিরের বাম পায়ে হাঁটুর একটু উপরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। সকাল আটটার দিকে খুলশী থানা পুলিশ নাসিরের মৃতদেহ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নাসিরের পকেট থেকে পুলিশ প্রায় সাড়ে আট হাজার টাকা উদ্ধার করে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আমবাগান লোহারপুল এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামের ইপিজেডের এক কর্মীর লাশ চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ (সিইপিজেড) এ কাজ করলেও তার বাসা ছিল পাহাড়তলীর আমবাগান এলাকায়। পুলিশের ধারণা তাকে শ্বাসরোধে অন্যত্র হত্যা করা হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। খুলশী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, দুজনের মৃত্যুই দুর্বৃত্তের হাতে। একজনকে ছুরিকাঘাত করে ও অপরজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন পাওয়া গেছে। মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসবে হত্যাকা-ের কারণ। তবে আসামিদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য জনকণ্ঠকে জানান, নিরাপত্তার বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতি নিতেই এই ধরনের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মহড়ার কারণে ইংল্যান্ড দল বা বিশ্ব মিডিয়ায় আতঙ্ক ও সংবাদ প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি চিন্তা করা হয়নি।
×