ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মুস্তাফা মনোয়ারের জন্মোৎসব চারুকলায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মুস্তাফা মনোয়ারের জন্মোৎসব চারুকলায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পকে সঙ্গী করে কেটেছে দীর্ঘ এক বর্ণাঢ্য জীবন। রং-তুলির আঁচড়ের বাইরে গিয়েও ছাপিয়ে গেছেন চারুশিল্পীর পরিচয়কে। চিত্রশিল্পের অনবদ্যতার পাশাপাশি তার হাতে বিকশিত হয়েছে নতুন শিল্প আঙ্গিক পাপেটের। সে সঙ্গে টিভি নাটক প্রযোজনা কিংবা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের লাল রঙের সূর্যের প্রতিরূপ স্থাপনা শিল্পের নানা পরিকল্পনায় রেখেছেন আপন সৃজনীর পরিচয়। এভাবেই শিল্পের আলোয় বিকশিত জীবনকে মেলে ধরেছেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। বৃহস্পতিবার ছিল এই শিল্পীর ৮১তম জন্মবার্ষিকী। পদার্পণ করলেন পথ চলার ৮২ বছরে। জন্মদিনে শিল্পীকে জানানো হলো অকৃত্রিম ভালবাসা। জন্মদিনে তাকে নিবেদিত কথাসহ পুরো দিনের স্মৃতি মেলে ধরলেন চারুশিল্পীসহ নানা ভুবনের মানুষ। সিক্ত হলেন ফুলের ভালবাসায়। গানের ও কবিতার ছন্দে প্রকাশিত হয় আনন্দময়তা। শিল্পীর জন্মদিন উদ্্যাপনের এই আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। বিকেলে ‘পথ চলার ৮২ বছরে মুস্তাফা মনোয়ার’ শীর্ষক এ জন্মোৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ। আর জন্মদিনের এ আয়োজনে শিল্পীকে আখ্যায়িত করা হয় সব্যসাচী চারুশিল্পী অভিধায়। অপার ভালবাসায় আপ্লুত মুস্তাফা মনোয়ার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, শিল্পীরা বিচরণ করেন আনন্দালোকে। সেখানে সহজেই দৃশ্যমান হয় মঙ্গলালোকের পথ। মূলত আমাদের রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল খুলে দিয়েছেন আমাদের চোখ। আমাদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছেন শিল্প ও সৌন্দর্যবোধ। আমি মনে করি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নয় বরং শিল্পীর কাজ হচ্ছে সমাজে যা ঘটবে তা মেলে ধরা। এগিয়ে যেতে হবে সৃষ্টিশীল জীবনের পথে। আমি সেই শিল্পের পথ ধরেই এতদিন চলেছি, সামনের দিনগুলোতেও এভাবেই চলতে চাই। মেলে ধরতে মানুষের জীবনের কথা। মুস্তাফা মনোয়ারকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, প্রখ্যাত শিল্পী রফিকুন নবী, নাট্যজন কেরামত মাওলা, চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন এবং চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান। শিল্প-সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদের লেখা মানপত্র শিল্পীর হাতে তুলে দেন রফিকুন নবী। উত্তরীয় পরিয়ে দেন খুশি কবির। আয়োজনের শুরুতেই ছিল চারুশিল্পী সংসদের সাংস্কৃতিক বিভাগের শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা। সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হয় ‘আনন্দালোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’। একক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’। এরপর লাইসা আহমেদ লিসা গেয়ে শোনান ‘জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’ ও ‘তোমার খোলা হাওয়া’। বাকশিল্পী শিমুল মুস্তাফা পাঠ করেন সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা ‘আমার পরিচয়’। মুস্তাফা মনোয়ারের সঙ্গে নিজের পুরনো দিনের স্মৃতি তুলে রফিকুন নবী বলেন, আমি ছিলাম তার ছাত্র। স্যারের কারণেই আমাকে দুর্যোগেও পড়তে হয়েছে। চারুকলায় সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় একদিন ভাবলাম শীতের ছবি আঁকব। এই সিদ্ধান্ত স্যারকে জানানোর পর তিনি বললেন, শীতের ছবি আঁকছো যখন তখন হালকা করে ইয়েলো ওয়াশ দিয়ে নিও। তাহলে শীতের আমেজটা উঠে আসবে। কিন্তু আমাকে বলেননি যে ঠিক কোন্ ধরনের ইয়োলো দিয়ে ওয়াশ করব। ছবি আঁকা শেষে যখন মুস্তাফা মনোয়ারের কাছে নিয়ে গেলাম তিনি বললেন, তোমার লিভারটা টেস্ট করে নিও। কারণ তোমার ছবিতে যেন জন্ডিস ঝরে ঝরে পড়ছে। নিসার হোসেন বলেন, দৃশ্যশিল্পের এমন কোন মাধ্যম নেই যেখানে কাজ করেননি মুস্তাফা মনোয়ার। আর তিনি যেখানেই কাজ করেছেন সেখানেই রেখেছেন সাফল্যের সাক্ষর। এ সময় নিসার হোসেনের ঘোষণা দেন, এখন থেকে চারুকলা অনুষদে দেশের বরেণ্য শিল্পীদের জন্মদিনের আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, তার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক। তিনি আমার চেয়ে চার বছরের বড়। সে জন্যই আমি প্রার্থনা করি তিনি যেন হাজার বছর আমাদের মাঝে বেঁচে থাকেন, সে সঙ্গে আমিও চার বছরের ব্যবধানে থাকতে চাই। অনুষ্ঠানে শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় চারুশিল্পী সংসদ, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, ঢাবি চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মুস্তাফা মনোয়ারের জন্মদিনে গান, আবৃত্তি, নৃত্য আর আলোচনায় শুভেচ্ছা জানাল তারই প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ডিরেক্টরস্ গিল্ড। আয়োজনের শুরুতেই ‘আলোকের ঝরনাধারায়’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শামীম আরা নীপা ও শিবলী মহম্মদ। অনুষ্ঠানে মুস্তাফা মনোয়ারকে শুভেচ্ছা জানান আমজাদ হোসেন, আতাউর রহমান, নওয়াজিশ আলী খান, ড. ইনামুল হক, ম. হামিদ, মোরশেদুল ইসলাম, গাজী রাকায়েত প্রমুখ। আরও শুভেচ্ছা জানায় শিল্পকলা একাডেমি, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, পথনাটক পরিষদ, দৃষ্টিপাত নাট্য সংসদ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, চারুনীড়ম থিয়েটার, আরটিভি, চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংস্থা। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাকশিল্পী হাসান আরিফ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমেদ লিসা। সমবেত কণ্ঠে গান গেয়ে শোনান রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা। শিল্পকলায় শুরু মূল্যবোধের নাট্যোৎসব ॥ শিল্পের শক্তি রুখবে অমানবিকতা, অবক্ষয় আর নানা সঙ্ককট। দূর করবে বাঙালীর সাম্প্রতিক সঙ্কট মূল্যবোধের। এ প্রত্যাশায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে মূল্যবোধের নাট্যোৎসব। ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মূল্যবোধের নাটক প্রযোজনা সমন্বয়ে প্রথম ধাপে ২০টি জেলার ২০টি নাটক নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী এ নাট্যোৎসব। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, আইটিআই বিশ্ব কেন্দ্রের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার এবং প্রাবন্ধিক-লেখক মফিদুল হক। হাসানুল হক ইনু বলেন, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের এই ধারবাহিকতায় মূল্যবোধের নাট্যোৎসব আমাদের মূল্যবোধকে পুনঃজাগ্রত করবে। এ সময়ে যারা জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসকে মদদ দিচ্ছে, তাদের কঠিন বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় শামীম সাগরের নির্দেশনায় কুষ্টিয়া জেলার নাটক ‘নটনন্দন’ এবং শাহীনুর রহমানের নির্দেশনায় জামালপুর জেলার নাটক ‘সপ্তর্ষী’। আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে তারেকুজ্জামান তারেকের নির্দেশনায় দিনাজপুর জেলার নাটক ‘উপলব্ধি’, শরীফ চৌধুরীর নির্দেশনায় চাঁদপুর জেলার নাটক ‘প্রিয় দর্শন’ এবং রাত ৮টায় বাকার বকুলের নির্দেশনায় ঢাকা জেলার নাটক ‘মুল্লুক’ মঞ্চস্থ হবে। সুরাইয়া পারভীনের সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ দারুণ এক সন্ধ্যা সঙ্গীতপ্রেমিদের জন্য। রবীন্দ্র, নজরুল, লোক, লালন, গণসঙ্গীতসহ নানা আঙ্গিকের গান গেয়ে দারুণভাবে নিজের সঙ্গীতসন্ধ্যাটি সাজিয়েছিলেন শিল্পী সুরাইয়া পারভীন। বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গীত বিষয়ক সম্পাদকের জন্য এ আয়োজন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। শুরুতেই শিল্পীকে শুভাশীষ জানান গণফোরাম সভাপতি ব্যারিস্টার ড. কামাল হোসেন, সিপিবির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আহসান খান, উদীচী সভাপতি কামাল লোহানী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ প্রমুখ। এরপর শুরু হয় সুরাইয়া পারভীনের একক পরিবেশনা। এতে জনপ্রিয়, প্রচলিত এবং অপ্রচলিত মিলিয়ে একে একে ২০টি ভিন্ন স্বাদের গান পরিবেশন করেন সুরাইয়া পারভীন। গানগুলোর মধ্যে ছিল- মোরা সত্যের পরে মন করিব সমর্পণ, যখন একা থাকি দিশেহারা, চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়, গান গাই আমার মন রে বোঝাই, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, গেরে গাঙ্গেরও ক্ষ্যাপা ইত্যাদি। অনুষ্ঠানের মাঝে ভাষা আন্দোলনের পরিচায়ক ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলি রে বাঙালি’ গানটি গেয়ে শোনান সুরাইয়া পারভীনের মেয়ে ঊর্বি। মুর্শিদ জাহানের মিউজিক ভিডিও ‘মেঘদূত’ : শিল্পী মুর্শিদ জাহানের নজরুল সঙ্গীতের মিউজিক ভিডিও ‘মেঘদূত’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান হলো বৃহস্পতিবার। ছায়ানটের প্রধান মিলনায়তনে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ। নজরুল সঙ্গীতে মুর্শিদ জাহান অতি পরিচিত এক নাম। বর্ষীয়ান এই শিল্পীর অনেক অবদানের মাঝে যুক্ত হলো এই নজরুলের গান নিয়ে এই মিউজিক ভিডিওটি। এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পরিষদের সভাপতি ফেরদৌসী রহমান, সাধারণ সম্পাদক সুজিত মোস্তফা। আরও উপস্থিত ছিলেন নাশিদ কামাল, শাহীন সামাদ, ডালিয়া নওশীন, সাদিয়া আফরিন মল্লিক ও রেবেকা সুলতানা। প্রকাশনা পর্ব শেষে মিউজিক ভিডিওটি দর্শকদের জন্য প্রদর্শিত হয়। পাম অয়েল সেরা রন্ধনশিল্পীর রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু ॥ শুরু হচ্ছে মিজান-মালয়েশিয়ান পাম অয়েল সেরা রন্ধনশিল্পী-২০১৬। এই রান্না বিষয়ক টিভি রিয়্যালিটি শোর জন্য নাম নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের মিজান ফার্টিফাইড পাম অলিনের পৃষ্ঠপোষকতায় হতে যাচ্ছে রান্না বিষয়ক এই প্রতিযোগিতা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। পাক্ষিক দি বাংলাদেশ মনিটর এবং এটিএন বাংলার যৌথ উদ্যোগে রান্না বিষয়ক এন্ট্রি এই রিয়্যালিটি শোর আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য দি বাংলাদেশ মনিটর সিটি হার্ট (১০তলা) ৬৭টি নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ ঠিকানায় ডাকযোগে এবং [email protected] এই ঠিকানায় অনলাইনে নাম নিবন্ধন করা যাবে। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সপ্তাহে দুটি করে ১৩টি পর্বে এটিএন বাংলা রিয়্যালিটি শোটি প্রচার করবে।
×