ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কল্যাণপুরে নিহতরা জঙ্গী কিনা সন্দেহ বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৭ জুলাই ২০১৬

কল্যাণপুরে নিহতরা জঙ্গী কিনা সন্দেহ বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশী অভিযানে নিহতরা সত্যিই জঙ্গী কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে দলের ২ সিনিয়র নেতা তাদের বক্তব্যে এ সন্দেহ প্রকাশ করেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য আহ্বান করা সত্ত্বেও ৯ জঙ্গী নিহতের ঘটনাকে কিভাবে দলটি সন্দেহের চোখে দেখছে তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ফটো জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাপ ভাসানী আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ দাবি করেন, কল্যাণপুরে পুলিশ যাদের হত্যা করেছে তারা সত্যিকারের জঙ্গী কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আর মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কল্যাণপুরে যে ৯জনকে হত্যা করা হয়েছে তারা জঙ্গী হতে পারে। তবে তারা যদি জঙ্গী হয়ে থাকে তাহলে তাদের গ্রেফতার করে বিচার করা যেত। হান্নান শাহ বলেন, কল্যাণপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৯ জঙ্গীকে হত্যা করেছে। নিহতরা জঙ্গী কিনা সন্দেহের কারণ, গুলশানের ঘটনায় দেখা গেল, সেখানে শত শত পুলিশ ছিল, আর ৫ থেকে ৭ জঙ্গী ছিল। কিন্তু পুলিশ সেই সশস্ত্র জঙ্গীকে মোকাবেলা করতে যায়নি। আর পুলিশ যখনই ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের কথা বলেন তখনই মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দেয়; এরা কি সত্যিই অপরাধী ছিল, নাকি নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে? সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে হান্নান শাহ বলেন, এ দেশে যখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জাতীয়তাবাদী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে তখনই বিচারবহির্ভূত প্রত্যেকটি হত্যাকা-ের বিচার করা হবে। হান্নান শাহ অভিযোগ করেন দেশের বহু ঘটনা আছে, যা সরকারের নির্দেশে হয়েছে। এমনিতে কোন ঘটনা ঘটে না। আমি সেনাবাহিনীতে ছিলাম, জানি- কারো না কারো হুকুমে ঘটনা ঘটে। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, মুসলিম লীগের মহাসচিব এ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ ও ন্যাপ ভাসানীর অতিরিক্ত মহাসচিব রুহুল আমিন। হান্নান শাহ বলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন সংসদ সদস্যরা টিআর-কাবিখার টাকা চুরি করেছেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উনি ভাল মানুষ। আর সবাইকে চোর বানিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো বলছেন না তার দলে চোর নেই। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে হান্নান শাহ বলেন, আপনি আপনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের কথা মনে করেন। আপনার বাবা বলেছিলেন, ‘সবাই পায় তেলের খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।’ আপনি ইনুর কথা পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছেন। আপনার দলের সবাই খেয়েছেন। আর দোষ দেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। হান্নান শাহ বলেন, আইনে আছে অর্থ পাচার মামলায় কাউকে সাজা দিতে হলে অর্থ বাংলাদেশ থেকে যেতে হবে। কিন্তু টাকা তো এদেশ থেকে যায়নি। ঘটনা ঘটেছে সিঙ্গাপুরে। মামলা করলে তারা করতে পারে। এ দেশের সরকার মামলা করতে পারে না। নিহতরা জঙ্গী হতে পারে- শাহ মোয়াজ্জেম ॥ কল্যাণপুরে পুলিশী অভিযানে যে ৯ জঙ্গী নিহত হয়েছে তারা জঙ্গী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, নিহতরা যদি জঙ্গী হয় তাহলে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা যেত। বিচারে তাদের ফাঁসিও হতে পারত। সেক্ষেত্রে এর সঙ্গে কারা জড়িত, সে তথ্য বের হয়ে আসার সুযোগ থাকত। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, নিহতরা যদি সত্যিই জঙ্গী হয় তাহলে এ ক্ষেত্রে আমাদেরও কোন আপত্তি নেই। কারণ, আমরাও জঙ্গীবাদের বিরোধী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জঙ্গীবাদের সঙ্গে বিএনপিরও যদি কাউকে পান, তাহলে তাদেরও বিচারে সোপর্দ করেন। বিচার করে তাদের ফাঁসি দেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, কেন কল্যাণপুরে নিহতদের গ্রেফতার করা গেল না? আপনারা গুলশানের এত বড় একটা জঙ্গী হামলার ঘটনা মোকাবেলা করেছেন। এভাবে যদি গুলি করে কিছু লোককে মারার অধিকার দেন তাহলে এ দেশে ভবিষ্যতে এর চেয়ে খারাপ অবস্থা হতে পারে। অর্থ পাচার মামলায় তারেক রহমানের সাজা প্রসঙ্গে শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, এ মামলায় যেখানে বিচারিক আদালতে তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। এ মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী দেননি। উচ্চ আদালত কিভাবে এই রায়ের বিরুদ্ধে বিচার করতে পারে। একদিন এর বিচার হবে। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা আকবর হোসেন ভুইয়া নান্টুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ইউনুস মৃধা, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী।
×