ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াকাটায় জন্ম হলেও চিহ্নিত করা হচ্ছে রোহিঙ্গা হিসাবে

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২০ জুন ২০১৬

কুয়াকাটায় জন্ম হলেও চিহ্নিত করা হচ্ছে রোহিঙ্গা হিসাবে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৯ জুন ॥ কুয়াকাটায় জন্মেও ‘মায়ানমারের রোহিঙ্গা’ বনে যাওয়ার শঙ্কায় ২০ পরিবারের দিন কাটছে। জানা গেছে, ১৯৪০ সালে কক্সবাজার জেলার খুরুশকূূল ইউনিয়নের তেতুইয়া, ছোনখলা, ডেইলপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে ২২টি মুসলিম পরিবার কুয়াকাটার সরকারী রিজার্ভ ফরেস্টের জমিতে বনবিভাগের সহযোগিতায় বসবাস শুরু করে। ১৯৪৮ সালে আরও আগমন ঘটে ৮টি পরিবারের। ১৯৫৫ সালে ফরেস্ট বিভাগ ‘ভিলেজার’ হিসেবে এসব পরিবারকে নিয়োগ দেয়। চার একর জমি চাষাবাদের বিনিময়ে প্রতিবছর এক একর জমি নতুন করে বনায়ন এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বন পাহারাদার বা রক্ষাকারী হিসেবে কর্মরত থাকার শর্তে এসব পরিবার বসবাসের নিয়োগ পায়। ১৯৬৫, ’৭০ সালের মহা প্লাবনের বন্যায় এসব পরিবার হারিয়েছেন তাদের অনেক সদস্যদের। উত্তাল সমুদ্রের তা-বসহ বিভিন্ন দুর্যোগ উপেক্ষা করে এসব পরিবারের সদস্যরা বঙ্গোপসাগরের প্রাচীর সবুজ দেয়ালখ্যাত সরকারের উপকূলীয় সবুজ বেস্টনী আঁকড়ে ধরে জীবন পার করছে। বিনা বেতনের শর্তে নিয়োগ পাওয়া এসব পরিবারের সদস্যরা বনায়ন বৃদ্ধি, রক্ষায় অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। বনাঞ্চলে বসবাস করলেও চাষাবাদ আর ফল-সবজি উৎপাদন ও বিক্রি করে নিশ্চিন্তে কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৬ সালের ৪ জুন জরিপ করে তাদের ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিত জীবনের মুখে। বয়োবৃদ্ধ মমিন উদ্দিন জানান, তার বাবা আফাজ উদ্দিন মোল্লা ৩৩ বছর আগে কুয়াকাটায় মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যুর এক বছর পর আমার মা দিলবাহার মারা গেছেন। এই বনেই তাদের কবর রয়েছে। আমরা তিন ভাইয়ের মধ্যে আমি ও অপর ভাই মোতালেব মোল্লাকে রোহিঙ্গা জরিপে অন্তুর্ভুক্ত করেছে। অপর দুই ভাই জালাল মোল্লা ও আবুল কাশেম মোল্লা রোহিঙ্গা জরিপে অন্তর্ভুক্ত হয় নাই। রোহিঙ্গা জরিপে অন্তর্ভুক্ত আবুল কাশেম সরদার জানান, তার মতো আরও ১০ থেকে ১৩ নারী-পুরুষ প্রাথমিক জরিপে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। তিনি জানান, তার বয়স এখন ৬৪ বছর। কুয়াকাটার রিজার্ভ ফরেস্টের জমি পাইয়া তার বাবা ওয়াহেদ আলী সরদার ৫৫ সালের দিকে এখানে বসবাস শুরু করেন। বাবা-মা দু’জনই মারা গেছে ২৫ বছর আগে। জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এখন মিয়ানমারের নাগরিক হয়ে রোহিঙ্গা হিসেবে ১৩ নারী-পুরুষ জরিপ কার্ড হাতে পেয়েছেন। এসব মানুষ এখন পড়েছেন অজানা শঙ্কায়। ওই গ্রামের আবুল কাসেম জানান, বিগত ৬০/৭০ বছর যাবত তারা এখানে বসবাস করছেন। তারপরও কেন তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
×