ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে মাদকসেবীদের ধরিয়ে দেয়ায় ফেঁসে গেছেন হত্যা মামলায়

পুলিশের সোর্স হওয়ার খেসারত দিচ্ছেন দুই চৌকিদার

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৭ এপ্রিল ২০১৫

পুলিশের সোর্স হওয়ার খেসারত দিচ্ছেন দুই চৌকিদার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ও অপরাধে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে বিভিন্ন সময় পুলিশকে সহায়তা করার মাশুল দিতে হচ্ছে টেকনাফের দুই গ্রাম পুলিশকে। জেলার টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের বয়োবৃদ্ধ দুই চৌকিদার একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে কক্সবাজার কারাগারে রয়েছে। ওই চৌকিদারদ্বয় বিভিন্ন মামলার পলাতক ও দাগী আসামি গ্রেফতারে পুলিশকে সহায়তা করার জের ধরে ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে সাজানো একটি হত্যা মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৬ মার্চ টেকনাফ থানা পুলিশ ২ চৌকিদারকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। বয়োবৃদ্ধ চৌকিদাররা হলেন হ্নীলা ইউপি ১নং ওয়ার্ডের আলী আকবর পাড়া গ্রামের হাসান আলী ও ২নং ওয়ার্ডের মৌলভীবাজার গ্রামের মোঃ ইউনুছ মিয়া। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এসকে আনোয়ার ও বর্তমান চেয়ারম্যান মির কাশেম মাস্টার জানান, বয়োবৃদ্ধ চৌকিদার হাসন ও ইউনুছ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক, অপরাধ নির্মূল, বিভিন্ন মামলার পলাতক ও দাগী আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনদের সহায়তা করে আসছে। বয়োবৃদ্ধ লোক হিসেবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন তারা। ২০০৯ সালে ৪ আগস্ট বিকেল বেলায় ওয়াব্রাং গ্রামের মোঃ আলীর পুত্র আব্দু প্রকাশ আব্দুনী মৌলভীবাজার গ্রামের নাজমুল হকের পুত্র আব্দুলাহ ওরফে দুবাইন্যা ও নাইক্ষ্যংখালী দক্ষিণপাড়া গ্রামের হাজী রুস্তম আলীর পুত্র একাধিক মামলার আসামি মোঃ হাবিব মাদক সেবন করে মাতলামী করার ঘটনায় তাদের মধ্যে মারামারি হলে মাদক সেবনকারী মোঃ হাবিব মারা যায়। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বয়োবৃদ্ধ দুই চৌকিদারকেও আসামি করে মামলার বাদী। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টেকনাফ থানার এসআই মোঃ মাহবুব আলম মামলাটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার সঙ্গে বয়োবৃদ্ধ দুই চৌকিদারসহ নিরাপরাধ লোকজনদের অব্যহতির আদেশ চাওয়া হয় আদালতে। মামলার বাদী মোঃ জাকরিয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজী প্রদান করলে আদালতের হাকিমের নির্দেশে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করেন। সিআইডি কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করে বয়োবৃদ্ধ দুই চৌকিদারসহ এলাকার আরও কয়েকজন লোককে জড়িয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। স্থানীয় মেম্বার ফরিদ আলম জানান, সিআইডি মামলাটি অধিকতর তদন্ত না করে দায়সারাভাবে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করায় দুই চৌকিদারসহ এলাকার নিরপরাধ লোকজন মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বর্তমানে। চৌকিদার হাসানের স্ত্রী খতিজা বেগম জানান, নিহত মোঃ হাবিবের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় বিভিন্ন সময়ে তাকে গ্রেফতারকল্পে পুলিশকে সহায়তা করেছিল দুই চৌকিদার। এ কারণে তাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করায় ৮ কন্যা সন্তান নিয়ে চরম অভাব অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। তিনি নিরাপরাধ স্বামীকে মুক্ত করতে মামলাটি পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
×