ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্ব সংকটে পাম নদী ॥ গতিপথ পরিবর্তন, ঝুঁকিতে ৫০ পরিবার

নদীর বুকে ধান চাষ

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ২২:২৩, ২২ এপ্রিল ২০২৪

নদীর বুকে ধান চাষ

সেতু ঘেঁষে পাম নদীতে পুকুর খনন

বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ছোট পাম নদীটিও এখন অস্তিত্ব সংকটে। নদীর বুকে বিশালায়তনের পুকুর খনন করে চারপাশে বেঁধে মাছ চাষ ও ফসল উৎপাদন করছেন জিয়াউর রহমান জিয়া নামের এক প্রভাবশালী। নদীর সরু প্রবাহ ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর দিয়ে পরিবর্তন করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া পাম সেতু ঘেঁষে এক্সকেভেটর দিয়ে খনন করায় ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। অন্যদিকে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়ায় নিম্ন আয়ের অন্তত ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না। দিন দুপুরে এমন কাজ চললেও নীরব প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। 
উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের গড়েরডাঙ্গা পামেরপাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, পাম সেতু ঘেঁষে এক্সকেভেটর দিয়ে পুকুর খননের মচ্ছব চালাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী জিয়াউর রহমান জিয়া। গত বছর নদীর বুকে চারপাশে উঁচু বাঁধ দিয়ে বিশালায়তনের যে পুকুর খনন করা হয়েছিল তারই পরিধি আরও বাড়ানো হচ্ছে। মূল নদী ক্যানালে পরিণত করা হয়েছে। সেতুর দক্ষিণ থেকে উত্তরদিকে জনবসতি ও ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর দিয়ে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে গতিপথ।   
স্থানীয়রা জানান, নদীটি জেলা সদরের ধাক্কামারা এলাকার নিম্নাঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের গড়েরডাঙ্গা দিয়ে সোনাচান্দি এলাকায় করতোয়ার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ছবির মতো সুন্দর নদীটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২০ মিটার। বর্তমানে পামেরপাড়ার যে স্থানে পুকুর খনন করা হয়েছে নদীটির গতিপথ ছিল তার মাঝ বরাবর।

নদীর বুকে শুষ্ক মৌসুমে পুকুরে ধান চাষ আর বর্ষাকালে মাছ চাষ করেন পামেরপাড়া এলাকার জিয়াউর রহমান জিয়া। নদীটির গতিপথ পরিবর্তন করে ছোট্ট ক্যানালে পরিণত করায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তবে বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে পাম পাড়ের অন্তত ৫০ পরিবারের দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়। গত বছরের ভাঙনের চিহ্ন এখনো রয়েছে অনেকের ভিটায়। উপড়ে গেছে বাঁশ বাগান ও গাছপালা। ভেঙে পড়ায় মাটির চিহ্ন মনে করিয়ে দেয় আসছে বর্ষাতে অপেক্ষা করছে কঠিন দিন। তবে চিন্তা নেই জিয়ার।

বেশ দাপটের সঙ্গেই পুকুরের পরিধি বাড়াতে ব্যস্ত তিনি। মাছ ও ধান চাষ করে আয় করছেন টাকা। নদীর জমি দখল পাকাপোক্ত করতে ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু করে বাঁধ দিয়েছেন পুকুরের চারপাশে। পুকুরের সামনে নামফলক সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে জিয়া মৎস্য খামার।
ওই এলাকার বৃদ্ধ জামাল উদ্দিন বলেন, নদীতো এখন আর নদী নেই। নদীর মাঝে পুকুর করা হয়েছে। নদীর পানি যায় এখন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে। এতকিছু করল তাদের কেউ কিছু বলে না। নদীর বুকে পুকুর করা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, নদীর ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি। আদালতের মাধ্যমে তা আমি পেয়েছি। মাছ চাষ করার জন্য চারপাশে বেঁধে পুকুর করেছি। নদী নদীর জায়গায় আছে। আর আমি অত গভীর করছি না যে সেতুর ক্ষতি হবে। তারা যেসব অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মন বলেন, আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। তারা নদীর জমি দখল করলে বা নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, আমরা বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। একইসঙ্গে তাদের পূর্বের অবস্থানে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। তারা এক সপ্তাহ সময় পাবেন। এর মধ্যে তা না করলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। 

ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা এখন মরা খাল
নিজস্ব সংবাদদাতা হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের ভয়াবহ নাব্য সংকটে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নদ দুটির তলদেশে পানির প্রবাহ না থাকায় সেচ নির্ভর কৃষকরা বোরো মওসুমেও খেতে সেচ দিতে পারে না। তাই এককালের উত্তাল ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদ আজ স্মৃতির গহিনে হারিয়ে যাচ্ছে। যদিও বেশ কয়েক বছর আগে ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের বেশিরভাগ অংশ খনন করলেও বর্তমানে পানি প্রবাহ না থাকায় এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।

তাই ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্দা নদের দুই পাড়ের মানুষের প্রাণের দাবি, অতিদ্রুত নদ দুটি গভীরভাবে খনন করে পানির প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। সরেজমিনে হোসেনপুর-গফরগাঁও সড়কের খুরশিদ মহল সেতু সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে পলি জমে এর নাব্য হ্রাস পেয়ে এককালের উত্তাল নদটি ছন্দ হারিয়ে আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। 
নাব্য সংকটে হোসেনপুর, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ ও জামালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ না থাকায় এর অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীনের পথে। পানির প্রবাহ না থাকায় বিভিন্ন এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে চলছে চাষাবাদ। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্য সম্পদ ও নানা জলজ প্রাণী। হাজার হাজার জেলে পরিবার এ পেশা ছেড়ে বেকারত্ব ঘোচাতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। খেয়া পাড়ের মাঝিরা বৈঠা ছেড়ে কলের নৌকা চালিয়েও শেষাবধি ছাড়তে হয়েছে বাপ-দাদার চিরাচরিত পেশা।

জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শাখা নদীগুলোও এখন বিত্তবানদের ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। রামপুর বাজার সংলগ্ন নরসুন্দা পাড়ের ব্যবসায়ী সঞ্জিত চন্দ্র শীলসহ অনেকেই জানান, এক সময় এ নরসুন্দা নদ দিয়ে আশুগঞ্জ, ভৈরব ও সুনামগঞ্জ থেকে বড় বড় নৌকা ও কার্গো মালামাল নিয়ে শ্রীপুরের মাওনা ও বরমী বাজার পর্যন্ত চলাচল করত।

কিন্তু বর্তমানে এ নদ নাব্য হারিয়ে ফসলি জমি ও ব্যক্তি মালিকানার জমিতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে খুরশিদ মহল গ্রামের ওয়াদুদ মিয়া, কাঞ্চন মিয়াসহ অনেকেই জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকটে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ব্রহ্মপুত্রের দুই ধারের কৃষি জমিগুলোতে প্রতি মৌসুমে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে না পেরে কৃষকেরা চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

×