ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াতে পারে

তীব্র গরমে নোনা জল থেকে একদিনে লবণ, বাড়ছে উৎপাদন

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২০ এপ্রিল ২০২৪

তীব্র গরমে নোনা জল থেকে একদিনে লবণ, বাড়ছে উৎপাদন

চট্টগ্রামে তীব্র গরমে উৎপাদন হচ্ছে ব্যাপকহারে লবণ

তীব্র গরমে দেশে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন লবণ উৎপাদন শিল্পে বিরাজ করছে ব্যাপক স্বস্তি। অর্থাৎ যত বেশি গরম, তত বেশি লবণ। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় দেশের সিংহভাগ লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। গত নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদন মৌসুম। শুরুতে পরিবেশ কিছুটা অনুকূলে ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে পুরোদমে লবণ উৎপাদন এগিয়ে যাচ্ছে।
বিসিকের (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) লবণ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এবারের লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ২৫ লাখ টন। আর দেশে লবণের চাহিদাও রয়েছে সমপরিমাণ। ইতোমধ্যে ছয় মাসে ১৮ লাখ টনেরও বেশি লবণ উৎপাদনের পর মজুত হয়েছে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের সদর, ঈদগাঁও, টেকনাফ, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও পেকুয়ায় লবণ মাঠের পুরোদমে চাষিদের লবণ উৎপাদনের ব্যাপক তৎপরতা চলছে। অপরদিকে, যত বেশি উৎপাদন হচ্ছে, দামও হ্রাস পেতে শুরু হয়েছে। সাগরের নোনা জল দিয়ে প্রকৃতিগতভাবে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশজুড়ে রীতিমতো লু হাওয়া বয়ে চলেছে। এ অবস্থায় মাঠ থেকে প্রতিনিয়ত লবণ তুলছেন চাষিরা। তীব্র গরমে একদিনের মাথায় সাগরের নোনা জল লবণে পরিণত হচ্ছে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী মধ্য মে মাস পর্যন্ত পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এবার লবণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। বর্তমানে মাঠে উৎপাদিত অপরিশোধিত প্রতি মণ লবণ পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিনশ’ টাকায়। গত মৌসুমে এ সময়ে যা মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে চারশ’ টাকারও বেশি। উৎপাদন বেশি অথচ মূল্য কম থাকায় চাষিরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। 
বিসিক সূত্রে আরও জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে মাঠে লবণের পাইকারি মূল্য বেশি ছিল। যে কারণে এবার মৌসুম শুরুর আগেই অক্টোবর থেকে চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমে যায়। এর পাশাপাশি লবণ উৎপাদন মাঠের সংখ্যাও বেড়ে যায়। এবারও আশায় বুক বেঁধেছেন লবণ চাষিরা। 
এদিকে, মিথ্যা ঘোষণা ও বিভিন্ন কেমিক্যালের নামে শিল্পে ব্যবহৃত সোডিয়াম সালফেট আমদানি হয়ে আসছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে খাবার লবণ হিসেবে বাজারে ছাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের লবণের বাজারে আমদানির এসব সোডিয়াম সালফেট দেখা গেছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট এলাকাটি খুচরা ও পাইকারি লবণ শিল্পের বাজার হিসেবে পরিচিত। প্রসঙ্গত, গার্মেন্টসসহ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে সোডিয়াম সালফেটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ করে রপ্তানিজাত পণ্য উৎপাদনে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
লবণ মিল মালিক ব্যবসায়ী সমিতি নেতা কবির আহমদ জানান, ইতোপূর্বে কম শুল্কে সোডিয়াম সালফেট আমদানির সুযোগ ছিল। যে কারণে দেশীয় লবণের বাজার মার খেয়েছে ব্যাপকভাবে। বিভিন্ন স্থানে ভোজ্য লবণের মিল বন্ধও হয়ে যায়। এ ছাড়া বিদেশ থেকে লবণও আমদানি হয়েছে। যে কারণে চাষিরাও দেখত না লাভের মুখ। এ ঘটনা নিয়ে দফায় দফায় সরকারের উচ্চ মহলকে অবহিত করার পর বিদেশ থেকে লবণ আমদানির ওপর শুল্ক হার ৩২ শতাংশ থেকে ৮৯ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়।

ফলে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি নিরুৎসাহিত হয়। লবণ শিল্পে স্বস্তি ফিরে আসে। বেড়ে যায় দেশীয় লবণের কদর। এবার এখনো বিদেশী লবণ আমদানি না হলেও উৎপাদন বেশি হতে থাকায় উন্নীত বাজার দর হ্রাস পেয়েছে। আগামীতে পরিস্থিতি কী হবে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে বিদেশী লবণ আমদানি সরকারিভাবে বন্ধ করা গেলে দেশীয় লবণ শিল্পে প্রাণ যে ফিরে আসবে তা নিশ্চিত।

×