ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

খেটে খাওয়া মানুষের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ ‘গোশত সমিতি’

নিজস্ব সংবাদদাতা,সাটুরিয়া,মানিকগঞ্জ 

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ১০ এপ্রিল ২০২৪; আপডেট: ১৩:৩২, ১০ এপ্রিল ২০২৪

খেটে খাওয়া মানুষের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ ‘গোশত সমিতি’

গোস্ত সমিতি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার প্রতিটি গ্রাম বা এলাকায় ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের ব্যতিক্রমধর্মী ‘গোশত সমিতি’।

যদিও গরু বা মহিষের মাংসের সমিতির কথা শহরের মানুষের কাছে আজব এক গল্প মনে হবে কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষের কাছে এই মাংসের সমিতির প্রচলন দেনকে দিন বেড়েই চলেছে।

আরও পড়ুন : নড়াইল-ঢাকা মহাসড়কে বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ

মূলত ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখেই এই মাংসের সমিতিটি গঠিত হয়। সমিতির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়,তারা সপ্তাহে বা মাসে একটি নির্দিষ্ট অর্থ জমা রাখে। পরবর্তীতে ঈদের ফিতরের পূর্ব মুহূর্তে তারা এই জমাকৃত অর্থ দিয়ে গরু বা মহিষ কিনে তার মাংস সমিতির সব সদস্য মিলে ভাগ করে নেয়।

গোশত সমিতির উদ্যোক্তা সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের মজিবর রহমান বলেন,তিনি কড়াই কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। সেখানে যা উপার্জন করেন তা দিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার কোনোরকম সংসার চলে। ঈদের আগে মাংস কিনতে তার উপর বাড়তি আর্থিক চাপ পড়ে। একারণে সে এলাকায় একটি গোশত সমিতি গঠন করে যার সদস্য সংখ্যা ৩০ জন।তিনি সেখানে প্রতি সপ্তাহে ১০০ টাকা করে প্রতিমাসে সে ৫ শত টাকা জমা রাখেন বলে জানান। সমিতিতে জমা হওয়া টাকা দিয়ে গরু কিনে (ঈদের আগের দিন) বুধবার সকালে গোশত সবাই মিলে ভাগ করে নিয়েছেন বলে জানান।

গোশত সমিতির সদস্য গার্মেন্স কর্মী বিমলা বলেন, সপ্তাহে ১০০ টাকা ও মাসে ৫০০ টাকা দিতে কষ্ট হয় না। আর ঈদের সময় সব বাজার সদাই করে মাংসের টাকা থাকে না। তাই মাংস সমিতিতে নাম লেখান। পরিবারের ৩ সদস্যের নিয়ে মাংস সমিতিতে যে মাংস পাই তা দিয়ে কয়েকদিন খেতে পারি।

বিমলার মতো সাটুরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের আরো অনেক খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির নিম্ন আয়ের মানুষ সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিক্তিতে বছরজুড়ে চাঁদা দেন। এরপর ঈদের আগে সমিতিতে জমা অর্থ দিয়ে গরু বা মহিষ কিনে গোশত ভাগাভাগি করে নেন। এতে ওই এলাকার অসচ্ছল পরিবারগুলো ঈদে বাড়তি আনন্দ পায় এবং তাদের উপর আর্থিক চাপও কমে যায়। প্রতিটি এলাকা, গ্রাম বা পাড়া- মহল্লায় এই সমিতিগুলোর গোশত সমিতি নামে পরিচিত।

সাটুরিয়া সদর বাজারের কসাই সোহেল এবং রুবেল বলেন, বর্তমানে মাংসের এই সমিতি শুধু সাটুরিয়ায় নয় বাংলাদেশে প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জের পাড়া মহল্লাতেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তারা আরো বলেন, মূলত ঈদুল ফিতরের আগে এই সমিতি গঠিত হয়। ঈদের তিন-চার দিন আগ থেকেই প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টি গরু-মহিষ জবাই করে থাকে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে সাটুরিয়ার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো.ইমরান হোসেন বলেন, কোরবানি ঈদের চেয়ে বেশি গরু ঈদুল ফিতরে কেনাবেচা হয়। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে মাংস সমিতি নামে পরিচিত সমিতির সদস্যরা মিলে গরু-মহিষ কিনে থাকেন। আর খামারীরাও কোরবানির ঈদের চেয়ে এ ঈদের গরুর দাম ভালো পান। এজন্য অনেক ছোট-বড় খামারীরা এই সময়ে তাদের পশু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তা রহমান বলেন,ঈদ মানেই আনন্দ। আমি মনে করি মাংস সমিতির সাথে জড়িত সদস্যরা মাংস কাঁটার সময় থেকে শুরু কওে মাংস ভাগাভাগি করার আগ পর্যন্ত অনেক আনন্দ উপভোগ করেন। মাংস সমিতি সাটুরিয়ার প্রত্যান্ত গ্রাম,পাড়া-মহল্লা তথা সমাজের শান্তি-শৃংঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুপ্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এস

×