ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে প্রস্তাবিত অঞ্চল পরিদর্শন ভুটানের রাজার

দ্রুত সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ০০:০২, ২৯ মার্চ ২০২৪

দ্রুত সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ

কুড়িগ্রামে প্রস্তাবিত অঞ্চল পরিদর্শন ভুটানের রাজার

কুড়িগ্রামে সকাল থেকে সাজ সাজ রব। মানুষের মাঝে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা। কুড়িগ্রাম শহরসহ তিনটি উপজেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। সীমান্তবর্তী নদ-নদীবেষ্টিত এ জেলার মানুষ নতুন সম্ভাবনার প্রহর গুনছে। দারিদ্র্য হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে এ অঞ্চল থেকে।   
বাণিজ্য সম্ভাবনা ও পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়াতে সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রামে হতে যাচ্ছে ভুটানিজ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও দুই দেশের আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা দেখার জন্য ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক কুড়িগ্রাম সফর করেছেন। 
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের ধরলা নদীর পূর্ব পাড়ে মাধবরাম এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন তিনি। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল আরীফ প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে রাজাকে অবহিত করেন। রাজা দ্রুত সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এই এলাকায় শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তিনি খুব খুশি এ অঞ্চল দেখে।

তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেছেন কাজ শুরু হওয়ার আগে আর একবার কুড়িগ্রামে আসবেন। কুড়িগ্রাম থেকে মাত্র চার ঘণ্টার পথ ভুটান। তিনি যখন এ অঞ্চল পরির্দশন করেন, তখন রাস্তার দু’পাশে এবং আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার মানুষ তাকে দূর থেকে একনজর দেখার জন্য ভিড় করেন। 
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামে এক জনসভায় পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রামে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। গত বছর ১৩৩ একর খাস জমি বেজার কাছে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। আরও ৮৬ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক বিবেচনায় ভুটান এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখায়। 
ভুটানের রাজা বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর, এরপর সড়কপথে কুড়িগ্রামে আসেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে সোনাহাট স্থলবন্দরে তাকে বিজিবির পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর তিনি ভারতের অসম রাজ্যের গোলকগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভুটান চলে গেছেন। 
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, নৌ পরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র কাজিউল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।  
বাংলাদেশ অথনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের জানান,  ভুটানের রাজা প্রস্তাবিত এলাকায় শিল্প স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি দুই দেশের যৌথ সমীক্ষা শেষে দ্রুত এই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভুটানের রাজা শীঘ্রই একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠাবেন। কাজ শুরু হলে তিনি আবার কুড়িগ্রামে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

ইউসুফ হারুন আরও জানান, রাজা বলেছেন, ‘এই এলাকার মানুষের কী ধরণের চাহিদা, কী ধরণের শিল্প স্থাপন করলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’ এ ব্যাপারে সমীক্ষা পরিচালনা করে দ্রুত তা ভুটানকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের রাজার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এই বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশে শ্রম সস্তা, বেজায় বিনিয়োগ করলে সরকার কিছু ইনসেনটিভ দেয়, ভুটান থেকে শিল্পের কাঁচামাল এনে শিল্পায়ন অনেক লাভজনক হবেÑ এসব বিবেচনায় তারা এগিয়ে এসেছেন।

এদিকে রাজার আগমন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভুটানের বিনিয়োগের খবরে উচ্ছ্বসিত কুড়িগ্রামের ধরলা পাড়ের মানুষ। তারা মনে করেন, শিল্প-কারখানাবিহীন অনগ্রসর কুড়িগ্রামকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের রাজার বিশেষ আগ্রহে এখানে দ্রুতই শিল্প-কারখানা স্থাপন হবে। কর্মসংস্থান হবে অনেক বেকারের। 

মাধবরাম গ্রামের বাসিন্দা আজিমুদ্দিন জানান, রাজার আগমনে সবাই খুশি। অনেকেই জমি ও বাস্তুহারা হলেও বৃহত্তর স্বার্থে তারা মত দিয়েছেন। ১০ কিলোমিটার দূর থেকে রাজাকে দেখতে এসেছেন, নূর ইসলাম নামে এক কৃষক। তিনি বলেন, ‘হামরা রাজাক দেইখপ্যার আচ্চি। তায় বোলে কী কারখানা করবে। করলেতো ভালোই হয়। গরিব মানষের অনেক উপকার হইবে।’ 
স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা মনে করে, ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে এই এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর। 
কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার হবে।

×