ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পরিদর্শন করবেন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান

ভুটানের রাজা আজ যাচ্ছেন কুড়িগ্রাম, সাজ সাজ রব

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২৭ মার্চ ২০২৪

ভুটানের রাজা আজ যাচ্ছেন কুড়িগ্রাম, সাজ সাজ রব

জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর পারে মাধবরাম গ্রামে আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে যাচ্ছে ভুটান। সরকারের বিশেষ ইকোনমিক জোনের নির্ধারিত স্থান দেখতে তার এ সফর। দেশের সর্ব উত্তরের এ জেলায় প্রথম কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ভুটানের রাজার আগমনে খুশি ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।

জেলার মানুষ ধন্যবাদ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তারা মনে করেন অবহেলিত এ জেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে ভুটান। এতে জেলার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর অর্থনৈতিক চাকা সচল হলেই ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে জেলার মানুষের।
কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মুড়ি দিয়ে ঢাকা হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার তিনটি উপজেলাকে। চারদিকে সাজ সাজ রব।

সর্বত্রই একই আলোচনা ভুটানের রাজা আসছেন কুড়িগ্রামে। সাধারণ মানুষ হয়ত ভুটানের রাজা জিগমে থেসার নামগিয়েল ওয়াংচুককে এক নজর দেখতেও পারবেন না, তাতে কি তার আগমনেই উন্নয়ন ঘটবে এ অঞ্চলের। এতেই খুশি। ভুটানের রাজার আগমন উপলক্ষে স্থানীয় জনগণের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন ও রিয়াজুল হক জানান, চরাঞ্চলের এই এলাকায় কোনো কাজের ব্যবস্থা নেই।

বন্যায় ফসল নষ্ট হয় প্রতি বছর। এখানে কল-কারখানা স্থাপন হলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। মাঠের পার গ্রামের আবদুল মালেক, মেছের আলী জানান, তাদের বাড়ির পাশেই এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে। তাদের গ্রামের নদীভাঙা মানুষ কাজ পাবে। তাদের আর অভাব থাকবে না। এ জন্য দারুণ খুশি নারী-পুরুষ সকলে। রাজার আগমনে ভীষণ খুশি তারা। কুড়িগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে ধরলা নদীর তীরে কুড়িগ্রাম-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কের পাশেই ভুটানের ইকোনমিক জোন তৈরির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ১শ’ ৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বেজাকে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া আরও ৮৬ একর ব্যক্তি মালিকানা জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। 
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসবেন। এরপর সড়ক পথে কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউসে যাত্রা বিরতির পর দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সংক্ষিপ্ত পরিদর্শন শেষে সোনাহাট স্থলবন্দর যাবেন। এরপর বিজিবির পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। গার্ড অব অনার শেষে তিনি ভারতের অসম রাজ্যের গোলকগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভুটান চলে যাবেন। নৌ পরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তাকে বিদায় জানাবেন। 
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কুড়িগ্রাম জেলায় হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইতোমধ্যে ১৩৩ একর জমি বেজার কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন আরো ৮৬ একর জমির অধিগ্রহণের বন্দোবস্ত চলছে। এখানে মোট ২১১ একর জমির প্রয়োজন হবে।
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত ১০ মার্চ ভুটানের প্রতিনিধি দল ও ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বেজার চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের একটি উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি দল অর্থনৈতিক অঞ্চল, চিলমারী নৌবন্দর ও সোনাহাট স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন। 
জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে সোনাহাট স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ৪৬ কিলোমিটার। সেখান থেকে ভুটানের গুরুত্বপূর্ণ শহর ফুন্টসলিং শহরের দূরত্ব ১১১ কিলোমিটার। এটি ভুটানের শিল্প  ও বাণিজ্য শহর হিসেবে পরিচিত। এই শহর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে ভারতের বেশিরভাগ ব্যবসা বাণিজ্য হয় এবং রাজধানী থিম্পুর সঙ্গে সড়কপথে ভালো যোগাযোগ রয়েছে।

এই শহরের কাছে চুখা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। আশা করা হচ্ছে ভুটানের সঙ্গে এই পথে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। প্রসার হবে ব্যবসা বাণিজ্যের। 
এদিকে 
কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ জানান, সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দরের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ হওয়ায় ভুটান নৌপথ ও সড়ক পথ ব্যবহার করে সহজেই তাদের দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম কৃষি প্রধান জেলা হওয়ায় তাদের জোনে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠলে এখানকার ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। 
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল আরীফ জানান, ভুটানের রাজার কুড়িগ্রাম সফরের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিদর্শন এলাকায় একটি অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ ও সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভুটানের উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কাঁচ তৈরির কারখানা স্থাপন করার কথা জানা গেছে। 

×