ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট

অবহেলা অব্যবস্থাপনায়  সারাবছর ঝুঁকিতে চলে নৌযান

নিজস্ব সংবাদদাতা রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ০০:০৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪

অবহেলা অব্যবস্থাপনায়  সারাবছর ঝুঁকিতে চলে নৌযান

অবশেষে পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা উদ্ধার করা হয়েছে

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সারাবছর অযত্ন-অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে ফেরি-লঞ্চসহ সকল প্রকার নৌযান। দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও চালকদের। লোকসান গুনতে হয় ব্যবসায়ী। লাভের পাল্লা ভারি হয় নৌরুট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে প্রচণ্ড স্রোত। শুকনো মৌসুমে অসংখ্য ডুবোচর ও ঘন কুয়াশা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যোগ হয়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনা। শুকনো মৌসুমে নৌরুটে ফেরি-লঞ্চসহ সকল প্রকার নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং শুরু করেছে।

তবে অপরিকল্পিত ড্রেজিং করার কারণে অনওয়ে নৌরুট হয়েছে। সরু চ্যানেল করার কারণে এক সঙ্গে দুই লঞ্চ অথবা ফেরি চলাচল করতে পারে না। বাধ্য হয়ে ফেরিগুলো প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয়। এতে প্রায় দ্বিগুণ সময়ের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয়। জ্বালানি খরচও বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ। 
এদিকে পদ্মা বুকে বালু চর জেগে ওঠা এবং অসংখ্য ডুবোচর থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নৌরুটে ফেরিসহ সকল প্রকার নৌযান চলাচল করে। ফেরিগুলোকে ৪/৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয়। ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় প্রতিনিয়ত মধ্য রাত থেকে সকাল ৯/১০টা পর্যন্ত ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। 

শেখ মোমিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, বিআইডব্লিউটিসি/ বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষে অব্যবস্থাপনার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সারাবছর ফেরিগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। তিনি বলেন, এই নৌরুটে অসংখ্য ডুবোচর থাকলেও পর্যপ্ত পরিমাণ ড্রেজিং করা হচ্ছে না। যে কারণে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। আবার বর্ষা মৌসুমে প্রচণ্ড স্রোত থাকার কারণে ফেরিগুলো স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে না এবং পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে ফেরিগুলো পাড়ে ভালোভাবে ভিড়তে পারে না। 
দৌলতদিয়া ৫নং ঘাট এলাকার বাসিন্দা শাহীন খান বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পদ্মা নদীতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ শুকনো মৌসুমে ড্রেজিং শুরু করেছে। তবে এই ড্রেজিং চলছে অপরিকল্পিতভাবে। ড্রেজিং করা বালু নদীতে রাখা হচ্ছে। এতে চ্যানেলগুলো পুনরায় ভরে যাচ্ছে। লাভবান হচ্ছে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ। চুরি হচ্ছে ড্রেজারের শত শত ব্যারেল তেল। অপরাধীরা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। 
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক এলাকার শ্রমিক সংগঠনের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সভাপতি ফয়েজ বলেন, হীরা-সোনা চোর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। অপরাধী হয় ছোট ছোট কর্মচারীরা। তিনি বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এক ভালোভাবে ড্রেজিং করলে ৫ কিলোমিটার ঘুরে ফেরি চলাচল করতে হয় না। কার স্বার্থে ৫ কিলোমিটার ঘুরে ফেরি চলাচল করে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চুরি করার অপকৌশল মাত্র।

একাধিক ফেরি মাস্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কর্মকর্তারদের মাথাব্যথা নেই। কিন্তু ফেরিগুলো স্বাভাবিক চলাচল করার জন্য ড্রেজিংও করা হচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।  
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট কতটা নৌযান চলাচল উপযোগী এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক মো. শাজাহান বলেন, এই নৌরুটে কোনো প্রকার সমস্যা নেই। তবে কিছু ডুবোচর নিরসন করার জন্য উভয় পারে ড্রেজিং করা হচ্ছে। 
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা বন্দরের মহাব্যবস্থাপক শাহ্ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, এই নৌরুটের ফেরিগুলো চলাচল উপযোগী। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অসংখ্য ডুবোচর থাকায় ফেরিগুলো অনেক ঘুরে চলাচল করতে হয়।

×