মামুন, দাউদকান্দি থেকে ফিরে ॥ সরকারী-বেসরকারী অংশগ্রহণে সফলতা পাচ্ছে ডটস কর্মসূচী। এ কর্মসূচীর মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করায় রক্ষা পাচ্ছে শত শত মানুষের জীবন। সেই সঙ্গে সাশ্রয় হচ্ছে গরিব মানুষের অর্থও। এমনই চিত্র দেখা গেছে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলা ঘুরে। বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীদের। শুধু তাই নয়, রোগ শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে নিয়মিত অষুধ খাওয়ানোর দায়িত্বও পালন করছেন স্বাস্থ্য সেবিকারা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে ডটসের মতো কর্মসূচী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারী ও বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ এসব ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনে, তার প্রমাণল এর আগেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীতে পাওয়া গেছে। এসব কর্মসূচীর মাধ্যমে গরিব অসহায় দরিদ্র রোগীদের অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছে।
সূত্র জানায়, এই ডটস কর্মসূচী বাংলাদেশে শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ব্র্যাকসহ ৪২টি বেসরকারী সংস্থা যৌথভাবে যক্ষ্মা নির্মূলে কাজ করছে। ডটস হচ্ছে সম্মিলিত পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রমাণ রেজিমেন এবং নিরাপদ ওষুধ সরবরাহ করা হয়। সরকারী এবং এনজিওদের পাশাপাশি বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠান সংযোগ হিসেবে কাজ করছে।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠকে জানান, এ কর্মসূচীটি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো মোকাবেলা করেই আমরা এগিয়ে চলছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে চাইল্ড টিবিকে আলাদা করে গুরুত্ব দেয়া হতো না। বর্তমানে এ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
দাউদ কান্দি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, এ উপজেলার বারোপাড়া ইউনিয়নের তিনছিটা গ্রামের নয় বছরে শিশু সিয়াম শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত। তার মা বিলকিচ বেগম জানান, প্রথম দিকে হঠাৎ করেই সিয়াম জ্বর, কাশি ও বুকে ব্যথা অনুভব করে। এ সময় স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হলে ব্যথার অষুধ দেয়া হয়। এতে কোন উপকার না হলে গৌরীপুর উজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিউমোনিয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করে ইঞ্জেকশনসহ নানা ধরনের ওষুধ দিতে থাকে। পরবর্তীতে তার বুকের ব্যথা আরও বেড়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি চলে আসে। অবস্থা বেগতিক দেখে আবারও প্রাইভেট চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় তার বাবা-মা। ওই চিকিৎসক আবার নতুন করে আট থেকে দশ ধরনের টেস্ট করান এবং ওষুুধ দেন। এতেও অবস্থার পরিবর্তন না হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা নিয়ে আসার পথে সিয়াম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মাতুয়াইল শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ১৬ দিনে প্রায় শতাধিক ইঞ্জেকশন পুশ করা হয় তার শরীরে। এতে ব্যথা কিছু কমলেও প্রকৃত রোগ থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ পরিপ্রেক্ষিতে যক্ষ্মা হয়েছে সন্দেহে ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এরপর ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকা আউলিয়া খাতুনের মাধ্যমে পরীক্ষার পর যক্ষ্মা ধরা পড়লে ব্র্যাকে তার চিকিৎসা শুরু হয়। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন স্বাস্থ্য সেবিকার বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত ওষুুধ খাচ্ছে সিয়াম। এতে সে এখন অনেকটাই সুস্থ। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম এখন স্কুলে যাচ্ছে। ছয় মাসের ওষুধের কোর্স চলছে তার। এভাবেই মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফিরে আসে সিয়াম। শুধু সিয়ামই নয় মহানন্দ গ্রামের শান্ত (১০), ও পাশের গ্রামের রকিব উদ্দিন (৭০) এবং কবির (৫০)সহ অনেকেই ব্র্যাকের মাধ্যমে নিয়মিত চিকিৎসা করে এখন যক্ষ্মা মুক্ত জীবনযাপন করছেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবিকা আউলিয়া খাতুন বলেন, ২০০২ সাল থেকে তিনি ব্র্যাকের এ কর্মসূচীর সঙ্গে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ জন বিভিন্ন বয়সের মানুষ আমার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়েছেন। দাউদকান্দি ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচীর সিনিয়র উপজেলা ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম জানান, সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এ কর্মসূচীটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। দাউদকান্দি উপজেলায় গত এক বছরে (২০১৪ সালে) মোট ৫২৩ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৩২৫ জুন এবং মহিলা ১৯৮ জন। এই পুরুষ ও মহিলার মধ্যে শিশু হচ্ছে ৮ জন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: