ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

একের পর এক ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতি

পুলিশের ভবমূর্তি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুলিশের ভবমূর্তি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ কিছুতেই শনির দশা কাটছে না পুলিশের। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না অপরাধে জড়িত বিপথগামী পুলিশদের। পুলিশকে ডোবাচ্ছে পুলিশের সোর্সরাও। একের পর এক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। মিরপুরে চাঁদা না পেয়ে চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরকে কেরোসিনের চুলার আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত চার পুলিশ প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন, মামলা দায়েরসহ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে কঠোর বার্তা পাঠানো হচ্ছে বিপথগামী পুলিশ সদস্যদের। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বুধবার সংসদীয় কমিটির সুপারিশে অপরাধে জড়িয়ে পড়া পুলিশের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলার চব্বিশ ঘণ্টা না যেতেই মিরপুরে ঘটে গেল চাঁদা না দেয়ায় চা বিক্রেতার কেরোসিনের চুলায় বাাড়ি দেয়ার ফলে ছিটকে যাওয়া কেরোসিনে চা বিক্রেতার শরীরে দ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাটি। জাতীয় সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশে বলা হয়, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ পুলিশ অনেক ভাল কাজ করলেও দু’চার জন সদস্যের জড়িয়ে পড়া অপরাধে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি (ইমেজ) নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। বুধবার রাজধানীর মিরপুর গুদারাঘাটে চাঁদা না পেয়ে কর্তব্যরত পুলিশ ও সোর্স চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বরের কেরোসিনের চুলায় বাড়ি দিলে কেরোসিন ছিটকে বাবুলের শরীরে লাগলে ব্যাপকভাবে দ্বগ্ধ হন এবং পরের দিন বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু ঘটে তার। এই ঘটনায় চার পুলিশ প্রত্যাহার, মামলা দায়ের, তদন্ত কমিটি গঠন, মানুষজনের বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ইত্যাদিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তা কর্তব্যরত পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় অপরাধে জড়িয়ে পড়া বিপথগামী পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। নির্যাতনকারী পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি দৃশ্যমান করার প্রক্রিয়ায় নেয়ার চেষ্টা হয়। গত ৯ জানুয়ারি রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি মোহাম্মদপুরে খালার বাসা থেকে কল্যাণপুরে নিজের বাসায় যাওয়ার সময় মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ সিকদার রাব্বিকে আটকে নির্যাতন করে ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন। নির্যাতনে অসুস্থ রাব্বি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেয়ার পর এই ঘটনাটি দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এই ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ১৫ জানুয়ারি শুক্রবার ভোরে ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে রাজধানীর মীর হাজিরবাগ এলাকায় কর্তব্যরত অবস্থায় বেধড়ক পিটিয়েছে যাত্রাবাড়ী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তা পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমকে বলেন, সাদা পোশাকে পুলিশ ডিউটি করতে পারবে না, বাতিল ঘোষণা করা হলো। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট) নেবে না। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, সদাচরণে ও সততায় কাউন্সেলিং করার ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম হাতে নেয় পুলিশ প্রশাসন। জীবন দিয়ে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো অনেক ভাল কাজ করেছে পুলিশই। দু’চার জন পুলিশ যারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, ‘রক্ষক পুুলিশই এখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। মানুষের জানমাল রক্ষা যাদের গুরুদায়িত্ব তারাই কিনা জড়িয়ে পড়ছে গুরুতর অপরাধে। তল্লাশির নামে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা প্রায় নিত্যনৈমিক্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে পুলিশ নিজেরা অপরাধ করে তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর ঘটনা ঘটাচ্ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, ‘শর্ষেতেই ভূত ! যেই পুলিশ দিয়ে অপরাধ দমন করা হবে সেই পুলিশেরই একাংশ বিপথগামী, জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। সরকারের নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বে¡ও কিছুতেই যেন অপরাধে জড়িয়ে পড়া বিপথগামী পুলিশদের থামানো যাচ্ছে না।
×