ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ২৬ মার্চ ২০২৪

মাহে রমজান

মাহে রমজানের আজ ১৬তম দিবস

মাহে রমজানের আজ ১৬তম দিবস। সমাজে নানা ধরনের মানুষের সমাগম রয়েছে। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ধনী-গরিব, সুস্থ-অসুস্থ। আজ আমরা প্রবীণদের প্রতি সচেতনতা ও তাদের ইবাদতের ধরণ সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করব।  মানুষ জন্মের পর শৈশব-কৈশোর ও যৌবন পার করে একসময় বার্ধক্যে উপনীত হয়। এ জীবন কারও জন্য শতভাগ সুখকর হয় না। কারও জন্য সুখকর হলেও বেশিরভাগের সময়টা হয়ে ওঠে তিক্ত ও অসহ্য। এ সময় তাদের প্রয়োজন হয় যথাযথ সহযোগী, যার সঙ্গে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে।

বেশি বয়সীদের বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তির সংবাদ দেব না? তারা বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল (সা.)! তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে দীর্ঘ আয়ু লাভ করে এবং সুন্দর আমল করে।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৭২১২, ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩০৪৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছে, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.), উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)। 
এ জন্য বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিদের করণীয় হলো, বেশি পরিমাণ ইবাদতে লিপ্ত থাকা। এ সময় প্রবীণদের কারও কারও মেজাজ খিটখিটে থাকে। তাই সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকলে মনের অবস্থা পরিবর্তন হওয়ার রাস্তা খুলে যেতে পারে। জীবনের এই পড়ন্ত দিনগুলোতে বেশি বেশি তসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, ইসতিগফার পাঠ করতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর- খাঁটি তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, নবী ও তার সঙ্গে যারা ইমান এনেছে তাদের সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন; নিশ্চয়ই আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।’ (সূরা তাহরিম, আয়াত : ৮)
রাসূল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক বনি আদম ভুলকারী। আর উত্তম ভুলকারী হচ্ছে তওবাকারিরা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫১)।  মুসআব ইবনে সাদ ও আমর ইবনে মায়মুন (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে বলেন, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) তার সন্তানদের নিচের বাক্যগুলো এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যেভাবে মক্তবে শিক্ষক শিশুদের শিখিয়ে থাকেন।

তিনি বলতেন, রাসূল (সা.) সালাতের পর এগুলো দ্বারা আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজু বিকা মিন আরজালিল উমুরি ওয়া আউজু বিকা মিন ফিতনাতিত দুনইয়া ওয়া আজাবিল কাবরি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ, তোমার কাছে আমি ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই, তোমার কাছে কৃপণতা থেকে আশ্রয় চাই, তোমার কাছে অতি বার্ধক্যে পৌঁছার বয়স থেকে আশ্রয় চাই এবং তোমার কাছে দুনিয়ার ফিতনা-ফাসাদ ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, ২৮২২)। 
এ ছাড়া প্রবীণদের কর্তব্য হলো আত্মীয়স্বজনদের যথাসম্ভব খোঁজ-খবর নেওয়া ও দোয়া করা। যেমন ইবরাহিম (আ.) বৃদ্ধ অবস্থায় তঁাঁর ছেলে ইসমাইল (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। একসঙ্গে কাবাঘর নির্মাণ করেন এবং তাদের জন্য ও পরবর্তী বংশধরদের জন্য দোয়া করেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৪)
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়োবৃদ্ধদের নানা রকমের অসুস্থতা দেখা দেয়। শারীরিক সমস্যা বেড়ে যায়। ইসলাম প্রবীণদের ইবাদতে শিথিলতার অনুমতি প্রদান করে। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রবীণদের জন্য রয়েছে শিথিলতা। তারা যদি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে অক্ষম হয়, তবে প্রবীণদের জন্য সুবিধাজনকভাবে ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ রয়েছে।

হজরত ইমরান বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি অর্শ রোগে ভুগছিলাম। এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাজ আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করো। যদি অক্ষম হও, তবে বসে পড়ো। যদি তাতেও অক্ষম হও তা হলে শুয়ে শুয়ে পড়ো।’ - (বুখারি)
মহান আল্লাহ বয়োবৃদ্ধ মুরব্বিদের ছায়া আমাদের ওপর দীর্ঘায়িত করুন।

×