স্টাফ রিপোর্টার ॥ সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সফল সমন্বিত কার্যক্রম চালানো না হলে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমেছে। নিয়ন্ত্রণ নয়, চিরতরে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচীতে নেমেছে বাংলাদেশ। আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণে ম্যালেরিয়াজনিত স্থানীয় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনা চলছে। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহেও ম্যালেরিয়া নির্মূলে সফলতা আসতে হবে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে কাল মঙ্গলবার পালিত হবে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘চিরতরে ম্যালেরিয়া হোক অবসান।’ রবিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর ভবনের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ব্র্যাক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লাইন ডিরেক্টর ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সানিয়া তহমিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এমএ ফয়েজ, জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ এমএম আক্তারুজ্জামান, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডাঃ এ মান্নান বাঙ্গালী, ব্র্যাকের ম্যালেরিয়া ও ওয়াশ কর্মসূচীর প্রধান ডাঃ মোঃ মোকতাদির কবির প্রমুখ।
ডাঃ নজরুল ইসলাম তার মূল প্রবন্ধে বলেন, ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১৩ জেলার ৭১ উপজেলার ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভবা রয়েছে। প্রতিবছর দেশের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর মধ্যে প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ সংঘটিত হয়ে থাকে এই ১৩ জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছেÑ রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রামে। দেশে গত তিন বছরে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৪৮০ জন। ২০১৫ সালে তা কমে ৩৯ হাজার ৭১৯ জনে এবং ২০১৬ সালে আরও কমে ২৭ হাজার ৭৩৭ জনে দাঁড়ায়। তবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার ৮ জন বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে এই রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের, সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করা একটি কঠিন কাজ। ম্যালেরিয়া নিমূলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ডোবা, গর্ত, নর্দমা ইত্যাদি যেখানে মশা ডিম পাড়ে ও বংশ বিস্তার ঘটায় সেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নয়। এটি আরেকটি মন্ত্রণালয়ের কাজ। অর্থাৎ সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ম্যালেরিয়া নির্মূল করা যাবে না। তবে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বেশ সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ একা সফল হলেই চলবে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারেও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সফলতা আসতে হবে। মহাপরিচালক বলেন, জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ব্যাপক সফলতায় দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ এখনও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ম্যালেরিয়া নির্মূলের বিষয়টি এখন আঞ্চলিক পর্যায়ে চলে গেছে। আঞ্চলিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে নির্মূল কার্যক্রম প্রত্যাশা করা যাবে না। পার্শ্ববর্তী/ সীমান্তবর্তী দেশসমূহে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচল/পারাপারকারীর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের প্রবণতা রয়েছে।