মালয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দুর্নীতির বিচার চলতি সপ্তাহে শুরু হচ্ছে। ওয়ানএমডিবি নামে পরিচিত কেলেঙ্কারির জন্য তিনি গত বছর নির্বাচনে হেরে যান। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন জোট বারিসান ন্যাসিউনালকে (বিএন) ক্ষমতা হারাতে হয়। ঘটনাটি সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে। এএফপি।
নাজিব ও তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা রাষ্ট্রীয় তহবিল ওয়ানএমডিবি থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার তছরুপ করেছেন। এ ঘটনায় সুইজারল্যান্ড থেকে সেশেল পর্যন্ত আলোড়ন তৈরি হয়। এই অর্থ বিভিন্ন দেশে তারা বিলাস বহুল সামগ্রী কিনতে খরচ করেন। যার মধ্যে আড়াইশ’ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ইয়ট, রিয়েল এস্টেট এবং পুরনো দিনের শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম রয়েছে। এই অর্থ ওয়ানএমডিবির ইউনিট এসআরসি ইন্টারন্যাশনাল থেকে নাজিবের ব্যক্তিগত ব্যাংক এ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়েছে। এ মামলায় অর্থ পাচারের তিন দফা এবং আস্থাভঙ্গ বিষয়ক তিন দফা অভিযোগ আনা হয়েছে। তার ওপর আস্থা রেখে রাষ্ট্রীয় তার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সে আস্থা ভঙ্গ করেছেন। নাজিব সরকারের সংস্পর্শে আসা তারকারাও কেলেঙ্কারির দায় এড়াতে পারেননি। লিওনার্দো ডিকাপ্রিও ও প্যারিস হিল্টনের মতো তারকারাও ওয়ানএমডিবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাই তারাও বিতর্ক এড়াতে পারেননি। মালয়েশিয়ার নতুন সরকার ওয়ানএমডিবি সংশ্লিষ্টতার জন্য ওয়ালস্ট্রিটের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান গোল্ডমান স্যাকসকে দায়ী করে। ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারি ভোটারদের মানসিকতার ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে যে কারণে ক্ষমতাসীন বিএন জোট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। ১৯৫৭ সালে দেশটি ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এই জোট ক্ষমতায় ছিল। নাজিবকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন মাহাথির মোহাম্মদ। যিনি এর আগে দীর্ঘ ২২ বছর মালয়েশিয়া শাসন করেছিলেন। কয়েক বছর আগেও ভাবা যায়নি মাহাথির আবার রাজনীতিতে ফিরবেন। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই তিনি বিরোধী জোটে যোগ দিয়ে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল নাজিব ও তার স্ত্রী রোসমাহ মানসুর দেশ ছাড়তে পারেন। কিন্তু নতুন সরকারের দৃঢ়চেতা অবস্থানের জন্য সেটি সম্ভব হয়নি। ৬৫ বছর বয়সী নাজিবের বিরুদ্ধে সর্বমোট ৪২টি অভিযোগ রয়েছে। তিনি অবশ্য দৃঢ়তার সঙ্গে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার শুরু হতে যাওয়া ওয়ানএমডিবি মামলাটি নাজিবের বিরুদ্ধে ওঠা বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারিরা একটি অংশ মাত্র। যদিও মামলাটি অনেক বিলম্বে শুরু হয়েছে কিন্তু একে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। দুর্নীতি তদন্তে নিয়োজিত সরকারী কমিটির সদস্য সিন্থিয়া গ্যব্রিয়েল বলছেন, যে কোন নতুন সরকারের পক্ষেই পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতি তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণ একটি কঠিন কাজ। নাজিবের আইনজীবী শফি আব্দুল্লাহ এ মামলাকে ‘রাজনৈতিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। এএফপিকে তিনি বলেন, সুষ্ঠু বিচার হলে তারাই জিতবেন। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজাকের জনপ্রিয়তা কিছুটা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তা নিয়ে মোটেও বিচলিত নন মাহাথির। মাহাথির বলেন, বর্তমান জোট সরকারের জন্য কোন হুমকি নন নাজিব। তাকে অব্যাহতভাবে বক্তব্য রাখার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
মাহাথির শুক্রবার পারদানা লিডারশিপ ফাউন্ডেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি আরও বলেন, নাজিব রাজাক বিপুলসংখ্যক কাহিনীর সঙ্গে জড়িত। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃশ্যত তর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বর্তমান সরকারকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন নাজিব রাজাক। বিশেষ করে বর্তমানে সেদেশের মুদ্রা রিঙিতের মূল্য পতন হওয়ার জন্য তিনি জোরালো সমালোচনা করেছেন। তার এসব সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন মাহাথির। তিনি বলেন, রিঙ্গিতের পতন হয়নি। সমস্যা হলো মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়েছে। আমরা রিঙ্গিতকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: