ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনের মুখে জাবি প্রক্টরের পদত্যাগ

জাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ১৮ মার্চ ২০২৪; আপডেট: ১৮:৫৭, ১৮ মার্চ ২০২৪

আন্দোলনের মুখে জাবি প্রক্টরের পদত্যাগ

প্রক্টর অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসান। তার স্থলে পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবীরকে সাময়িক দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে পদত্যাগ ও নতুন প্রক্টর নিয়োগের বিষয়টি জানা যায়।

অফিস আদেশে বলা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান-এর লিখিত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করত: তাঁকে প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীরকে ১৮ মার্চ অপরাহ্ন হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হলো। তিনি প্রচলিত নিয়মে সুবিধাদি ভোগ করবেন।'

এদিকে আ স ম ফিরোজ উল হাসানের পদত্যাগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, প্রক্টরের পদত্যাগ প্রমাণ করলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধর্ষকের সহায়তাকারীর স্থান নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্টেকহোল্ডার খুশি হয়েছেন। মাহমুদুর রহমান জনির মত বিশ্ববিদ্যালয়কে অপরাধ-রাজ্য গড়ে তোলার কারিগর প্রক্টর এর অপসারণ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাভাবিক জীবন দিতে সহায়তা করবে। আমরা তাকে তদন্তের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যাতে করে আগামীতে কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা কেউ এরকম দুঃসাহস করতে সামান্যতম সাহসও না দেখায়।

নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন,'প্রক্টরকে অব্যহতি দেওয়ায় আমরা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। এর মাধ্যমে প্রশাসনের অন্তত একজন তার দায় স্বীকার করেছেন। কিন্তু মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা চাই তাকেও অব্যাহতি দেওয়া হোক যাতে এটি একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে যে, দায়িত্ব অবহেলা করলে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে৷'

প্রসঙ্গত, আ স ম ফিরোজ উল হাসান সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সময় ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সহকারী প্রক্টর এবং ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পান। এরপর ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর স্থায়ী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের পুনর্মিলনীতে অ্যাম্বুলেন্সে করে মদ আনা ও ওই অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় এক নারীর গর্ভপাত এবং এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত যৌন নিপীড়নের অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে দিয়ে জোরপূর্বক দায়মুক্তিপত্র লেখানো, প্রক্টরের দায়িত্বকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাদকের অবাধ সিন্ডিকেট তৈরিতে সহায়তা, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা অভিযোগ আনেন আন্দোলনরতরা।

সর্বশেষ, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে হলসংলগ্ন জঙ্গলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে জড়িত ও সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে, নিপীড়কদের সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের অপরাধ তদন্ত এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রশাসনিক পদ থেকে তাঁদের অব্যাহতিসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’।

 

এস

×