ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

লালমাটিয়ায় সাবেক সরকারী কর্মকর্তা গ্রেফতার

লাভের আশায় বাসায় ৫১২ লিটার ভোজ্যতেল মজুদ

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১৩ মার্চ ২০২২

লাভের আশায় বাসায় ৫১২ লিটার ভোজ্যতেল মজুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে অধিক লাভের আশায় অবৈধভাবে ৫১২ লিটার তেল মজুদ করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক কর্মকর্তা মোঃ লায়েকুজ্জামান। গত ৬ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে এই তেল মজুদ করেন তিনি। অবশেষে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়া এলাকার একটি বাসা থেকে ৫১২ লিটার তেলসহ তাকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার এসব কথা জানান। ডিসি জানান, লায়েকুজ্জামান সর্বশেষ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কর্মকর্তা হিসেবে ফরিদপুরে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি এলপিআরে রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায়। তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে মোহাম্মদপুরের নজরুল রোড লালমাটিয়ার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। এর পাশেই তার শ্বশুরের বাসাটিও তিনি দেখাশোনা করতেন। সেই বাসাতেই তিনি ৫১২ লিটার তেল মজুদ করেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরের নেতৃত্বে একটি টিম ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে সেই তেল জব্দসহ লায়েকুজ্জামানকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লায়েকুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে তেলগুলো কিনে মজুদ করে রেখেছেন। তার কাছে এসব তেল কেনার রসিদ দেখতে চাইলে তিনি কৃষি মার্কেটের সূর্য এন্টারপ্রাইজের একটি রসিদ দেখান। পরে রসিদটি যাচাই করে দেখা গেছে সেখান থেকে ১৫৯ টাকা দরে মাত্র ৪০ লিটার তেল কিনেছেন। বাকিগুলো তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন। আর সূর্য এন্টারপ্রাইজের ওই রসিদের মাঝখানে নিজ হাতে বাকি তেলগুলোর পরিমাণ লিখে বিভিন্ন দাম বসিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত লায়েকুজ্জামান মনে করেছেন যেহেতু বর্তমানে তেলের দাম বাড়তির দিকে, কয়েকদিন পর রমজানে আরও বাড়বে সে কারণে বাড়তি লাভের আশায় তিনি তেল কিনে মজুদ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। রিমান্ডে পেলে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতীতেও তিনি এমন কাজ করেছেন কিনা, কিংবা তার ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জানান, লায়েকুুজ্জামান কোন ব্যবসায়ী নন, ডিলারও নন। প্রাথমিকভাবে এটি তার ব্যক্তিগত অসৎ উদ্দেশ্য বলেই মনে হয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে তিনি তেল মজুদ করেছেন। ৫১২ লিটার তেল মজুদ করা ফৌজদারি অপরাধ, এটি সঙ্কট সৃষ্টির অপপ্রয়াস। ৪০ লিটার তেল এক দোকান থেকে কিনেছেন, বাকিগুলো কোথা থেকে কীভাবে সরবরাহ করেছেন তা জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্ট হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি বলেও জানান ডিসি বিপ্লব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বিপ্লব জানান, কৃষি মার্কেটের ওই ব্যবসায়ী কেন একজনের কাছে একবারে ৪০ লিটার তেল বিক্রি করলেন এ বিষয়ে তাকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। এছাড়া ভোজ্যতেলের এই সঙ্কট সৃষ্টি করতে ব্যবসায়িক পর্যায়ে কেউ মজুদদারি করছে কিনা প্রতিনিয়ত তা মনিটরিং করে যাচ্ছি। কারণ অন্য জায়গা থেকে কিনলে সেটার রসিদ থাকত। জনসাধারণকে কষ্ট দেয়ার জন্য এ ধরনের মজুদদারি করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, গত ৬ মার্চ থেকে তিনি তেল মজুদ শুরু করেন। তিনি ৫১২ লিটার তেল বিভিন্ন জায়গা থেকে গত ৬ দিনে সংগ্রহ করেন। ৪০ লিটার তেল তিনি এক জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন। আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন বাকি ৪৭৮ লিটার তেল। কোন কোন জায়গা থেকে এসব সংগ্রহ করেছেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গ্রেফতারকৃত লায়েকুজ্জামানের বরাত দিয়ে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জানান, তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য আমরা সত্য মনে করছি না। এর পেছনে আরও কোন উদ্দেশ্য কিংবা ঘটনা থাকতে পারে। পেছনে আরও লোকজন থাকতে পারেন। সে এই তেলগুলো বিভিন্ন সময়ে জোগাড় করেছেন বলে দাবি করছেন। এর পেছনে অন্য কোন লোকজন বা কোন অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা জানতে আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। গ্রেফতারকৃত লায়েকুজ্জামান কাদের কাছ থেকে তেল সংগ্রহ করেছেন এবং কত টাকা করে কিনেছেন, এ বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করব। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
×