ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে গৃহকর্মীর মৃত্যু : গৃহকর্র্তাকে গ্রেফতারসহ দ্রুত বিচার চান স্বজনরা

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২৪ অক্টোবর ২০২০

শেরপুরে গৃহকর্মীর মৃত্যু : গৃহকর্র্তাকে গ্রেফতারসহ দ্রুত বিচার চান স্বজনরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরের শ্রীবরদীতে বর্বরোচিত নির্যাতনে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকার ২৭ দিন পর মারা যাওয়া সেই শিশু গৃহকর্মী সাদিয়া আক্তার ফেলির (১০) চাঞ্চল্যকর মামলায় গৃহকর্তা আওয়ামী লীগ নেতা আহসান হাবিব শাকিলের গ্রেফতার এবং কারাগারে আটক থাকা পাষ- গৃহকর্ত্রী রুমানা জামান ঝুমুরসহ উভয়ের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন ওই শিশুর স্বজনরাসহ স্থানীয় সচেতন মহল। শনিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে এ্যাম্বুলেন্সযোগে সাদিয়ার লাশ নিয়ে শ্রীবরদী শহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছলে সাদিয়ার বাবা-মাসহ স্বজনদের আহাজারিতে বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। ওইসময় সাদিয়ার বাবা ট্রলিচালক সাইফুল ইসলাম আহাজারি করে বলেন, ‘কি অপরাধ করছিল আমার মাইয়া। দুইডা ভাতের লাইগা শাকিলের বাড়িতে কাজে দিছিলাম। শাকিলের নীরবতায় তার বউ ঝুমুর আমার মাইয়াডারে নির্যাতন কইরা মাইরা ফালাইল। আল্লাহ তুমি ওই ডাইনি ও তার স্বামীর বিচার কইরো।’ একই সুরে সাদিয়ার মা আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘একদিন দুইদিন না, দিনের পর দিন আমার শিশু মাইয়াডারে পাষাণী ঝুমুর নির্যাতন করছে। আর হেই কতা তার স্বামী শাকিল জানে না- এইডাও বিশ্বাস করন লাগব?’ তার দাবি, গৃহকর্তা শাকিলের জ্ঞাতসারেই তার স্ত্রী ঝুমুর শিশু সাদিয়ার উপর দিনের পর দিন অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। পরে শনিবার রাত ৮ টায় শ্রীবরদী পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এতে আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও শরিক হন। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, ময়মনসিংহে ময়নাতদন্ত শেষে শিশু সাদিয়ার লাশ এলাকায় আসার পর দাফন করা হয়েছে। এখন তার ডেথ সার্টিফিকেটের সূত্র ধরে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তলবসহ দ্রুতই পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে মামলাটি এখন হত্যা মামলার দিকেই মোড় নেবে। এদিকে ওই মামলায় গ্রেফতার হওয়া পাষ- গৃহকর্ত্রী রুমানা জামান ঝুমুর কারাগারে থাকলেও গৃহকর্তা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব শাকিল ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজনরা। পুলিশ বলছে, মামলায় গৃহকর্তাকে আসামি করা হয়নি। আর স্বজনরা বলছেন, গৃহকর্তা শাকিলের জ্ঞাতসারেই তার বাসায় গৃহকর্ত্রী ঝুমুর দীর্ঘদিন যাবত ওই নির্যাতন চালিয়েছে। তারা গৃহকর্তা আহসান হাবিব শাকিলকে গ্রেফতারসহ ওই দম্পতির উপযুক্ত বিচার দাবি করেন। উল্লেখ্য, শ্রীবরদী পৌর শহরের মুন্সীপাড়া মহল্লার দরিদ্র ট্রলিচালক সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া ওরফে ফেলি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব শাকিল ও রুমানা জামান ঝুমুর দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো। কাজে সামান্য ভুল হলেই গৃহকর্ত্রী ঝুমুরের বেদম প্রহার ও খুন্তির ছ্যাকার কারণে তার মাথায়, পিঠে ও কাধে গুরুতর জখম ও দগদগে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে গৃহকর্মী সাদিয়াকে উদ্ধার ও গৃহকর্ত্রী ঝুমুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা শাকিল গা ঢাকা দেন। পরে গৃহকর্ত্রী ঝুমুরকে একমাত্র আসামি করে মামলা গ্রহণ করে থানা পুলিশ। পরে ২৩ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় সে।
×