ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নে আশার সঞ্চার করবে মুদ্রানীতি

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 উন্নয়নে আশার সঞ্চার করবে মুদ্রানীতি

বুধবার ৩০ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম অর্জিত হয়েছে। কম হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে এই সময় মানুষের মনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আস্থার সঙ্কট কাজ করছিল। এছাড়া সামনে ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অর্থনীতিতে নানা নেতিবাচক আশঙ্কা। কিন্তু সবকিছু ভুল প্রমাণিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বার মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রথমার্ধের প্রায় কাছাকাছিই ধরা হয়েছে। জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বেসরকারী খাতে প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যমাত্রা যথেষ্ট সময়োপযোগী। ৩০ ডিসেম্বর সব দলের অংশগ্রহণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ার পর বিনিয়োগকারীসহ দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ নতুন করে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। এজন্য ধারণা করা যাচ্ছে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জিত হয়ে ছাড়িয়ে যাবে। এজন্য সরকারের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের উপর নজর দেয়া প্রয়োজন। মানুষ যে আশা নিয়ে এগিয়ে আসছে সেই বিনিয়োগ পরিবেশকে সহজ করা দরকার। ঘোষিত মুদ্রানীতির বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খেলাপী ঋণ এবং ঋণের সুদের হার কমানো। সরকারী ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটে নামলেও বেসরকারী ব্যাংকগুলো কিন্তু আগের অবস্থাতেই আছে। ১৫ শতাংশের ধারে কাছেই তাদের ঋণের সুদহার ঘোরাফেরা করছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে এটিও একটি অন্যতম অন্তরায়। কজেই যে কোন মূল্যে এই অন্তরায় দূর করতে হবে। অন্যদিকে বিদ্যুত, গ্যাস, বন্দর, রাস্তা-ঘাটসহ সামগ্রিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাহলেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিবে। দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। অবশ্য সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক এবং প্রচুর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এ কর্মযজ্ঞের সুফল পেতে হয়ত একটু সময় লাগবে। আজকে আমাদের অর্থনীতির যে আকার এতে বেসরকারী খাতের এক বিশাল অবদান রয়েছে। সরকার এই অবদানের কথা গুরুত্বসহকারে ভাবছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ অব্যাহত আছে সেটি খানিকটা বোঝা যায়। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময়ে সরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর কারণ ছিল সরকারের পলিসি। নির্বাচনের আগে বেসরকারী খাত খানিকটা স্থবির হয়ে পড়লেও সরকারী খাতে কোন ধরনের স্থবিরতা পরিলক্ষিত হয়নি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সরকার কোন প্রকার নেতিবাচক চিন্তা না করে ইতিবাচকভাবে কাজ করে গেছে। আর এজন্যই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য সরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রথমার্ধের চেয়ে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। সরকার নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকা- করে চলেছে। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে ব্যাংক থেকে সরকারকে বেশি ঋণ নিতে হবে আর সে কারণেই হয়ত সরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে। সরকার বর্তমানে যে পরিমাণ এক একটি আশা জাগানিয়া মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে তাতে সরকারের বর্ধিত পরিমাণ ঋণ নেয়ার সুযোগ থাকাটাও অত্যন্ত যৌক্তিক। সামগ্রিকভাবে সরকার যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে দেশের মানুষকে যথেষ্ট আশাবাদীই মনে হচ্ছে। আর নিকট অতীতে দেশের অর্থনীতিতে কোন নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। বর্তমান অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতিতে যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে এটিকে যথেষ্ট ইতিবাচক হিসেবেই আমরা দেখতে চাই। সরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি যদিও খানিকটা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। তারপরেও বলা যায় সঙ্গত কারণেই প্রথমার্ধের সঙ্গে খুব বেশি বড় ধরনের পবির্তন করা হয়নি এই মুদ্রানীতিতে। কারণ বিগত ছয় মাসের চেয়ে হঠাৎ করেই যে আগামী ছয় মাসে অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন হবে তেমনটি নয়। রফতানি ও প্রবাসী আয়ে এখনই কোন বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও খুব যে পরিবর্তন হবে তাও নয়। তবে আমদানি যে হারে বাড়ছে তাতে আমদানি ব্যায় মিটাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে খানিকটা টান পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সেই সঙ্গে আশার কথাও হলো যে, আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধিও কিন্তু যথেষ্ট ইতিবাচক। সব মিলিয়ে এই মুদ্রানীতি একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির ইঙ্গিত বহন করে। আর এজন্যই নতুন মুদ্রানীতি উন্নয়নে আশার সঞ্চার করবে বলে আশা করা যায়।
×