ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বিদেশী কূটনীতিকরা কাল কক্সবাজার যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বিদেশী কূটনীতিকরা কাল কক্সবাজার যাচ্ছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন ও ভারত। রাখাইনে গণহত্যা দ্রুত বন্ধ ও সঙ্কট সমাধানে কোফি আনান কমিশন সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশী কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে এই সহযোগিতা চাওয়া হয়। এদিকে আগামীকাল বুধবার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজার যাচ্ছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় দক্ষিণ এশিয়া ও আসিয়ান দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে ব্রিফিং করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাদের ব্রিফিং করেন। এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং শেষে সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, চীন ও ভারত আমাদের ভাতৃপ্রতিম দেশ। এই দুঃখকালীন, কষ্টকালীন সময়েও তারা আমাদের পাশে থাকবে, আগে যেভাবে থেকেছে। বিদেশী কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জানান, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে । এরপর থেকে যে মানবিক বিপর্যয়ের উদ্ভব হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা তাদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আমরা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চেয়েছি। আমরা তাদেরকে পূর্ণাঙ্গভাবে এই কমিশনের প্রতিবেদন দ্রুত ও শর্তহীন বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়েছি। এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিদেশী কূটনীতিকদের আমরা বলেছি, ওখানে যে সংঘাত হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চলছে, এটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে; যেন রোহিঙ্গাদের আসা বন্ধ হয়। কোফি আনান কমিশনে যেটা আছে সে অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের অনুসন্ধান করে তাদের জাতীয় পরিচয় নিশ্চিত করার কথাও আমরা বলেছি। বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের পক্ষ থেকে কি ধরনের সাড়া পাওয়া গেছে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এখানে যারা এসেছেন তারা সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সকলেই বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া রোহিঙ্গারা যারা এখানে আছেন তাদের সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কি ধরনের সাড়া পাওয়া গেছে জানতে চাইলে, পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমার থেকে এখনও কোন সাড়া মেলেনি। ব্রিফিংয়ে ঢাকার মিয়ানমার মিশনের কোন প্রতিনিধি ছিলেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জানান, ঢাকার মিয়ানমার মিশনকে ব্রিফিংয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সে কারণে দেশটির কোন প্রতিনিধি ছিলেন না। ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পরিদর্শনে বুধবার ঢাকার বিদেশী মিশনের কূটনীতিকরা কক্সবাজার যাবেন। তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাইকেই আমরা নিয়ে যেতে আগ্রহী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সোমবার বিদেশী কূটনীতিকদের বলেন, দ্বিপীক্ষয় আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করে। এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়া মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়েও আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তায় আমরা বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস ও নিরাপত্তা সংলাপ আয়োজনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাবও দিয়েছি। এছাড়া যৌথ অভিযানেরও প্রস্তাব দিয়েছি আমরা মিয়ানমারকে। তবে তারা আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। আমাদের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অপপ্রচার করছে। একই সঙ্গে তাদের সীমান্ত বাহিনীর বিজিপি চৌকির ওপর হামলাকারীদের বাঙালী সন্ত্রাসী হিসেবে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সোমবার আয়োজিত ব্রিফিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন। আসিয়ান দেশের মধ্যে চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই দারুসসালাম, ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানাতে বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার দ্বিতীয় দফায় সোমবার এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এর আগে রবিবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের এই সঙ্কট সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। একই সঙ্গে সহযোগিতা ও সমর্থন চাওয়া হয়। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছে সম্প্রতি আরও তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগের রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আহ্বান জানিয়ে আসা হলেও তাতে কোন সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। নতুন করে রোহিঙ্গা স্রোত আসার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস দমনে সীমান্তে যৌথ অভিযান চালাতেও মিয়ানমারকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তার জন্য কয়েকটি দেশ ত্রাণসামগ্রী পাঠাচ্ছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, আজারবাইজান, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া।
×