ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট সিরিজেও হার

শূন্য হাতেই ফিরছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

শূন্য হাতেই ফিরছে বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ম্যাচের তৃতীয় দিন পুরোটা। ওই বৃষ্টির কারণে কিছুটা যেন আশার আলো ঝলকে উঠেছিল- হয় তো শেষটা ভালই হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারল সফরকারীরা। এর পেছনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতাই ছিল মূলত দায়ী। প্রথম টেস্টে ওয়েলিংটনে ৭ উইকেটে জিতেছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ফলে নিউজিল্যান্ডের কাছে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়ানডে সিরিজে ৩-০, টি২০ সিরিজে ৩-০ এবং টেস্টে ২-০ ব্যবধানে তিনটি হোয়াইটওয়াশের গ্লানি নিয়ে শূন্য হাতেই নিউজিল্যান্ড সফর শেষ করে ফিরছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৮৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিনশেষে ৭ উইকেটে ২৬০ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাটা অনুমিতই ছিল। কারণ একের পর এক ইনজুরির ছোবলে বিপর্যস্ত দলটির হয়ে ক্রাইস্টচার্চে খেলেননি তিন অপরিহার্য ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক, অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও ওপেনার ইমরুল কায়েস। কিন্তু বোলারদের সাফল্য সেটাকে ঢাকতে শুরু করেছিল। আর তৃতীয় দিন বৃষ্টির দাপটে কোন বলই না গড়ানোয় ক্রিকেটপ্রেমীরা স্বপ্ন দেখছিলেন ড্রয়ের। সেই আশা নিয়ে চতুর্থ দিন মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ দলও। এদিনও দেরিতে খেলা শুরু হয় মাঠ ভেজা থাকার কারণে। দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে বল হাতে ম্যাজিক দেখানো সাকিব আল হাসানই দ্রুত সাফল্য এনে দেন খেলা শুরু হওয়ার পর। সাজঘরে ফেরেন টিম সাউদি (১৭)। তবে শুরুর এই সাফল্যটা ম্লান করে দিয়েছেন মূলত হেনরি নিকোলস। একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি সাবলীলভাবে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন নিল ওয়াগনার। নবম উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ে উঠলে ভাল একটা লিড পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। তবে টেস্ট ম্যাচে প্রথম শতকটা পাননি নিকোলস। ৯৮ রানে তাকে বিদায় নিতে হয় অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে। এরপর বেশিদূর এগোতে পারেনি তারা। ৩৫৪ রানেই গুটিয়ে যায় কিউইদের প্রথম ইনিংস। ৬৫ রানের পিছিয়ে থেকে শুরু করা বাংলাদেশ শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে অধিনায়ক ও ওপেনার তামিমের উইকেট হারিয়ে। ৮ রানেই বিদায় নেন তিনি সাউদির বলে। সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অবশ্য দারুণ খেলছিলেন এরপর। কিন্তু সৌম্য ৩৬ রান করে ফিরে যাওয়ার পর বিপর্যয় নেমে আসে। একে একে ফিরে যান সাকিব (৮), মাহমুদুল্লাহ (৩৮), নাজমুল হোসেন শান্ত (১২), সাব্বির রহমান (০), নুরুল হাসান (০) ও মেহেদী (৪)। মাত্র ২৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। সেই অবস্থায় দারুণ ব্যাটিং করেন দুই টেলএন্ডার তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। দু’জনেই ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন। তাসকিন ৩০ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রান করে ফিরে যাওয়ার পর ১৭৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। রাব্বি ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন। তিন পেসার বোল্ট, সাউদি ও ওয়াগনার ৩টি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ধসিয়ে দেন। মাত্র ১০৮ রানের লিড পায় কিউইরা। ১০৯ রানের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে নেমে টি২০ মেজাজে ব্যাট চালিয়েছে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ১৮.৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১১১ রান তুলে ৯ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে তারা। ৪০ বলে ৪ চারে ৩৩ রান করা ওপেনার জিত র‌্যাভালকে ফিরিয়ে একমাত্র সাফল্যটা পান রাব্বি। টম লাথাম ৫৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। তিনি ১৫ বলে ৪ ছক্কায় ৩৩ রান করলে দ্রুত জয় পেয়ে যায় স্বাগতিক দল। এ জয়ের ফলে ২-০ ব্যবধানে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে তারা। শূন্য হাতে ফেরা নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। এমন পরাজয়ের পর নিজের ব্যাটিং ও সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন অধিনায়ক তামিম। তিনি বলেন, ‘আমরা সিনিয়ররা যদি ভাল দায়িত্ব পালন করতাম, জুনিয়ররা তা দেখে আরও সাহস পেত। আমরা আমাদের কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারিনি। আমার শট বা অন্যরা যেভাবে আউট হয়েছেন, আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের দোষে আউট হয়েছি। এই ফলাফল আমরা এগারজন মিলেই পরিবর্তন করতে পারতাম। কিন্তু পারিনি। যদি ভুল কম করতাম তাহলে অন্য ফল হতো। একজন অধিনায়ক হিসেবে দলকে যেভাবে নেতৃত্ব দেয়ার দরকার ছিল, আমি তা পারিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে আমি যেভাবে আউট হয়েছি এটা মোটেই অধিনায়ক সুলভ ছিল না। এর মাধ্যমেই দল পরাজয়ের বার্তা পেয়ে যায়। তাই পরাজয়ের পুরো দায়ভার আমার।’
×