ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভুল আর বিকৃতি পিছু ছাড়ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

ভুল আর বিকৃতি পিছু ছাড়ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভুল আর বিকৃতি নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না শিক্ষাকে। ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের স্মরণিকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতায় বিকৃতির ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের মতো এখানেও কবিতায় লাইন বিকৃত করে ইচ্ছেমতো লাইন বসানো হয়েছে। ভুল করা হয়েছে জাতীয় সঙ্গীত ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী এবং সম্পাদকের নিজের বাণীতেও। রীতিনীতি লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী একই পাতার দুই পাশে ছেপে সমালোচনার মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রশাসন। এদিকে ঘটনা টের পেয়েই বিষয়টি দেখার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তদন্ত করে ঘটনার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে কাজ করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন। এবার পাঠ্যবই নিয়ে নানা বিকৃতির মধ্যে একটি হলো তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতার বিকৃতি। সে কবিতায় ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ এর বদলে এবার লেখা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। পাঠ্যবইয়ের বিকৃতি নিয়ে চলছে তদন্ত। এরই মধ্যে গত রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রকাশনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায়ের বিখ্যাত কবিতাকে বিকৃত করা হয়েছে। প্রকাশনায় লেখা হয়েছে ‘যত কাল রবে পদ্মা-মেঘনা-গৌরী যমুনা বহমান/ তত কাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’। স্মরণিকায় উদ্ধৃত কবিতাংশে ‘যমুনা’র জায়গায় ‘মেঘনা’ আর ‘মেঘনা’র জায়গায় ‘যমুনা’ লেখা হয়েছে। প্রথম লাইনে নদীগুলোর নামের সংযোগে কোন হাইফেন না থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়েছে। অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত কবিতাটিতে লেখা হয়েছিল ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান’। ‘যতকাল’ এবং ‘ততকাল’ অভিন্ন শব্দ হলেও লেখা হয়েছে ‘যত কাল’ এবং ‘তত কাল’। অর্থাৎ এক শব্দকে ভেঙ্গে দুটি করা হয়েছে। আর এ কবিতাটি যে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত, সেটিরও উল্লেখ নেই প্রকাশনায়। নদীগুলোর নামের সংযোগে কোন হাইফেন না থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়েছে। এদিকে স্মরণিকায় শুধু কবিতা বিকৃতিই করা হয়নি, বিভিন্ন ধরনের বানানও ভুল আছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণীতে অন্তত তিনটি বানান ভুল আছে। জাতীয় সঙ্গীতে ‘আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি’র বাঁশি বানানে চন্দ্রবিন্দু দেয়া হয়নি। সম্পাদকের বাণীতে অন্তত চারটি বানান ভুল আছে। এছাড়া বিতর্ক শুরু হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী একই পাতার দুই পাশে লেখার কারণে। রীতি অনুসারে রাষ্ট্রপতির বাণী যে পাতায় লেখা হয় তার অপর পাতায় কিছু লেখা হয় না। একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর বাণী লেখায়ও একই রীতি অনুসরণ করা হয়। কিন্তু প্রকাশনায় তার পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে রবিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪৬তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০১৭ এর পুরস্কার বিতরণী ছিল। এ উপলক্ষে ‘খেলাধুলা করবো, সুস্থ স্বদেশ গড়বো’ শীর্ষক এ স্মরণিকা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকাশনায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের বাণী স্থান পায়। স্মরণিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পদাধিকার বলে শিক্ষামন্ত্রীর নাম লেখা আছে। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আছেন এ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের দুই সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন ও মোঃ আলমগীরের নাম। উপদেষ্টা হিসেবে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। সম্পাদক হচ্ছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী। সদস্য হিসেবে আছেন মাউশির উপপরিচালক ফারহানা হক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাসুদা বেগম এবং মাউশির সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম। ঘটনা নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে সমালোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরাও প্রশ্ন তুলেছেন এ কাজের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মকা- নিয়ে। এ বিষয় প্রকাশনার সম্পাদক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, হ্যাঁ কিছু ভুল হয়ে গেছে। আসলে আমি সম্পাদক হিসেবে দায় আমার ওপরই পড়ে। এটা আমি স্বীকার করি। তবে কাজের চাপে প্রকাশনার প্রুফটা ঠিকভাবে দেখতে পারিনি। এদিকে ঘটনায় বিব্রত বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রকাশনার উপদেষ্টাদের একজন অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেছেন, পুরো ঘটনায় আমরা বিব্রত। এত ভুল এটা মানা যায় না। এমনিতেই পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে সমালোচনা। তার মাঝে এমন ভুল কিভাবে হয়? কারা করেছে? এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, কাজ কারা করেছে তা তো প্রকাশনাতেই লেখা আছে। আমরা বিব্রত। চেয়ারম্যান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, তাদের কাছে যে কাজ দেয়া হয়। কাজটা ঠিকভাবে করেও না। গুরুত্বও দেয় না।
×