ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবেদন প্রকাশ

এমডিজি অর্জনের সাফল্য উন্নয়নে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

এমডিজি অর্জনের সাফল্য উন্নয়নে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে আশার আলো দেখছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আগামী জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে তার প্রথম দিনেই বাণিজ্য বিষয়ক ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২ দেশের বহুল বিতর্কিত টিপিপি চুক্তি বাতিল করবেন ট্রাম্প। এটি আমাদের জন্য ভাল খবর। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে বিতর্কিত মন্তব্য করে ট্রাম্প সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর এসব থেকে তিনি সরে আসছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তার আগের মন্তব্যগুলো ছিল রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। বুধবার ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস : এ্যান্ড-পিরিয়ড স্টকটেকিং এ্যান্ড ফাইনাল ইভালুয়েশন রিপোর্ট (২০০০-১৫)’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদ প্রধান অতিথি ছিলেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এমডিজির চূড়ান্ত মূল্যায়ন বিষয়ক এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক বেনজীর আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম। প্রতিবেদনে বলা হয়, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। আট লক্ষ্যের সবকটিতেই ভাল করেছে বাংলাদেশ। এসব লক্ষ্য অর্জনে ৩৩ উপসূচকের মধ্যে ১৩টি পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে। এমডিজির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যটি অর্জিত হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এছাড়া শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্য, শিশুমৃত্যু, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে রাখা, টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এসব মূল লক্ষ্যের বেশির ভাগ উপসূচকেই লক্ষ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। অন্যান্য উপসূচকের লক্ষ্য অর্জনেও দেশ সঠিক পথে রয়েছে। অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এমডিজি অর্জনের এই সাফল্যের কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্বব্যাপী বিস্ময়কর উত্থান বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এক সময়ের ‘দরিদ্র দেশের মডেল’ থেকে বাংলাদেশ এখন ‘উন্নয়নের মডেল’ হয়েছে। এমডিজি অর্জনের ধারাবাহিকতায় আমাদের যে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, তাতে আশা করি ২০৩০ সালের আগেই আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে পারব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেশ পরিচালনা করে। রফতানি প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক রিজার্ভসহ অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক এবং মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ যথেষ্ট ভাল করেছে। এই পরিস্থিতিতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে এসডিজি অর্জন না করার কোন কারণ নেই। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে সরকার বিদ্যুত ও জ্বালাৃনি খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। আগামী ২ বছর পর বাংলাদেশে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত বিদ্যুত থাকলে, দেশে শিল্পায়ন হবে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এতে এসডিজির লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের আগেই হতদারিদ্র্যের সংখ্যা ৩ ভাগের নিচে নেমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সরকার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসৃজন কর্মসূচীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এসব কর্মসূচী দারিদ্র্য নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি এসডিজি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি অর্র্থ্যৎ রাজস্ব আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এমডিজি অর্জন বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে গৌরবজনক। হতদরিদ্র হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ ছিল, সেটা ২০১০ সালেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি ২০৩০ সাল নাগাদ হতদারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ সাপেক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করে অর্থায়ন, বাস্তবায়ন, সমন্বয় এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
×