ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

এক সাজেই সারাদিন

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১০ অক্টোবর ২০১৬

এক সাজেই  সারাদিন

নদী তীরের কাশফুল আর আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা জানান দিয়ে যাচ্ছে শুরু হয়ে গেছে শারদীয় উৎসব। ঢাকের ধ্বনিতে মুখর চারদিক। এরই মধ্যে স্বর্গ থেকে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ এবং কার্তিককে নিয়ে মর্ত্যে নেমে এসেছেন দেবীদুর্গা। উৎসবপ্রবণ এই দেশের চারদিকে শারদীয় উৎসবকে ঘিরে চলছে উৎসব। চারদিকে তাই ঢাকঢোলের বাজনা, শঙ্খের শব্দ, ধুপের ঘ্রাণ আর বিভিন্ন মন্ত্রে মুখরিত। ঠিক এ সময় পূজার আয়োজনে নিজেকে যেন না সাজালেই নয়। আর দু’দিন বাদেই দশমী। দশমীতে সাধারণত লাল রংকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কারণ সেদিন দুর্গাকে সিঁদুর পরিয়ে বিসর্জন দেয়া হয়। আর চলে সিঁদুর খেলা। সেদিন বিবাহিত মেয়েরা দুর্গার পায়ে রাখা সিঁদুর মাথায় দেন আর ওই সিঁদুর সারা বছর তারা ব্যবহার করেন। তরুণীরা সিঁদুর রঙের সঙ্গে মিলিয়ে দশমীর দিন লাল রঙের শাড়ি পরে। শাড়ির সঙ্গে সোনার গহনা পরা যেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্য। এ ছাড়া যে কোন শাড়ির সঙ্গে গলায় রুদ্রাক্ষের মালা পরলে একটা ট্র্যাডিশনাল লুক আসবে। পূজার সময় শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের কাটের গুরুত্ব কিন্তু কম নয়। ফুল স্লিভের ব্লাউজ, পিঠে গোল বা স্কয়ার গলা থাকলে ভাল। বাঙালীর পূজার পোশাকে বাঙালিয়ানা ধরা দেয় উৎসবের আদলে। সাজসজ্জা আসলে নিজের রুচি ও ভাল লাগার বহির্প্রকাশ, তবুও এটি যেহেতু ধর্মীয় উৎসব তাই ধর্মীয় ট্র্যাডিশনকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। হিন্দুধর্মে বিবাহিত মেয়েদের সিঁথিতে সিঁদুর থাকবে এটাই স্বাভাবিক। হিন্দু বিবাহিত মেয়েদের সিঁথিতে সিঁদুর যেন সাজের পূর্ণতা এনে দেয়। এই পূর্ণতার মাঝে পোশাকের গুরুত্বও অনেক। পূজার সময় মেয়েরা সাধারণত শাড়ি বেছে নেয়। আর শাড়ির সত্যিকার সৌন্দর্য ফুটে ওঠে ব্লাউজের মাধ্যমে। ব্লাউজের কাটছাঁটে পূজার আমেজ ফুটে উঠলে পুরো পোশাকে একটা উৎসবধর্মী ভাব চলে আসবে। ফ্যাশন হাউসগুলো চেষ্টা করে নতুনত্বকে ধরে রেখে ট্র্যাডিশনকে প্রাধান্য দিতে। তাই সাজ-পোশাকে থাকা চাই বাঙালিয়ানার ছাপ। এ ছাড়া ঘটিহাতা তো রয়েছেই। একটু কারুকাজ করা ঘটিহাতার ব্লাউজের কোথায় যেন পূজার আমেজ খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লাউজে এ্যামব্রয়ডারির কাজ করা থাকলেও বেশ উৎসবধর্মী একটা ভাব আসে। হাতায় লেস অথবা কুচি দেয়া ব্লাউজের সঙ্গে এক প্যাঁচে পরা শাড়ি মানিয়ে যায় বেশ। এ ছাড়া ঘটিহাতা বা থ্রি কোয়ার্টার হাতায় বড় কুচি দেয়া ব্লাউজও ভাল লাগবে। জমকালো পার্টিতে মসলিন বা গর্জিয়াস কোন শাড়ির সঙ্গেও এ্যান্ডি মেশানো ব্লাউজ মানানসই। টাঙ্গাইল বা বড় পাড়ের সাধারণ সুতি শাড়ির জন্য ঘটিহাতা বা পাইপিং বসানো ব্লাউজের বিকল্প নেই। আবার এক রঙেরও হতে পারে। তবে যেহেতু পূজা, তাই লাল-সাদা থাকা চাই। আবার শাড়িতে সোনালি সুতা বা জরি দিয়ে কাজ করা থাকলে ব্লাউজ গোল্ডেন হতে পারে। যাই হোক না কেন, পূজার সাজে স্নিগ্ধতা থাকা জরুরী। সেই স্নিগ্ধতার সঙ্গে সিঁদুরের পবিত্রতা মিলেমিশে যেন পূজার আমেজে পূর্ণতা এনে দেয়। আজকাল বিভিন্ন স্টাইলে সিঁদুর পরতে দেখা যায়। বিবাহিত মেয়েদের সিঁথিতে সিঁদুর থাকা জরুরী এবং এ সাজটি বিভিন্নভাবে সম্পন্ন করা যায়। সাধারণত যাদের মুখ গোল, কপাল অপেক্ষাকৃত ছোট এক প্যাঁচে শাড়ি ঘটিহাতা বা হাতায় কুঁচি দেয়া ব্লাউজের সঙ্গে মাঝখানের সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে বড় বা মাঝারি লালটিপ মানানসই। যাদের মুখ লম্বা, কপাল অপেক্ষাকৃত বড় তাদের পাশে সিঁথি করে কপালের মাঝ বরাবর চিকন করে সিঁদুরের টান দিলে ভাল লাগে। কপালে লম্বাটে হাতে আঁকা টিপ। এ ছাড়া ত্রিভুজাকার করেও সিঁদুর ভাল মানাবে। সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে ছোট্ট বা চিকন করে সিঁদুর থাকলেই ভাল। জমকালো শাড়ি-ব্লাউজের সঙ্গে কখনও মোটা কখনও চিকন, কখনও বা সাইড সিঁথি করে মাঝখানে সিঁদুর এঁকে দিলে ভাল মানায়। খোলা চুলে চিকন করে এবং বাঁধা চুলে মোটা করে সিঁদুর আঁকা যায়।
×