ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনায় বালু খেকোদের থাবা

চারশ’ কোটি টাকার তীর রক্ষা বাঁধ হুমকিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২ এপ্রিল ২০২৪

চারশ’ কোটি টাকার তীর রক্ষা বাঁধ হুমকিতে

যমুনা নদী তীররক্ষা বাঁধের নিচ থেকে বালু কাটার মচ্ছব

ভূঞাপুরে যমুনা নদী তীর রক্ষা বাঁধের নিচ থেকে বালু কাটার মচ্ছব শুরু হয়েছে। দিন-রাতে বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার ট্রাক বালু। এতে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙনের আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা এভাবে বালু কেটে বিক্রি করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরের ভাঙনে গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিরাইল ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়ে ছিন্নমূল জীবন-যাপন করছে।

বাস্তুহারা হয়েছে অনেক পরিবার। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার যমুনা নদীর করাল গ্রাসে ভাঙন রোধে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলার ভরুয়া থেকে বলরামপুর গ্রাম পর্যন্ত নদী তীর রক্ষা বাঁধ। বর্তমানে এ আসনের এমপি ছোট মনির আশ^াস দিয়েছেন খুব দ্রুতই বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত এ গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু কোনো দোহাই মানছে না বালুখেকোরা। এ বাঁধের কোল ঘেঁষে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বালু কেটে বিক্রি করছে তারা। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে এ গাইড বাঁধসহ কয়েকটি গ্রাম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা, কুঠিবয়ড়া, জগৎপুরা দক্ষিণ ও নলিন এলাকায় ১০টি ঘাটে গাইড বাঁধের ওপর দিয়ে বালুবাহী ড্রাম ট্রাক যাতায়াত করছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে বাঁধের ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘদিন বালুবাহী ট্রাক চলাচল করলে বর্ষা মৌসুমে গাইড বাঁধ ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। অন্যদিকে বাঁধের কোল ঘেঁষে ভেকু দিয়ে গভীর করে কাটা হচ্ছে বালু। যা বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
অর্জুনা এলাকার মোফাজ্জল হোসেন সরকার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভূঞাপুর-তারাকান্দি বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ওই সড়কের পাড় কেটে ট্রাক চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে বালু উত্তোলনের মচ্ছব চলছে যমুনা নদীতে।
বালু উত্তোলনকারী শহীদ খান বলেন, ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতার নেতৃত্বে সব ঘাট। তিনিই সব দেখভাল করেন। আমরা শুধু দেখাশোনার দায়িত্বে আছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতা বলেন, এখন আর বালুর ঘাটের দায়িত্বে আমি নেই। যারা নাম বলছে তারাই বালু উত্তোলন করছে। অর্জুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব বলেন, যারা নদীর চর কেটে বিক্রি করছেন তারা প্রভাবশালী।

বিষয়টি বন্ধে বারবার উপজেলার মিটিংয়ে কথা বলেছি কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। কেন বন্ধ হচ্ছে না আপনারা তো জানেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধ যেমন ঝুঁকিতে পড়েছে তেমনি বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়বে ওই এলাকাগুলো। দ্রুতই চর কাটা বন্ধ হওয়া দরকার। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।

একবার অভিযান হওয়ার পর কয়েকদিন বন্ধ থাকে বালু উত্তোলন। কিন্তু পরে আবার চালু করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানে গিয়ে কিছু পাওয়া যায় না। তারা প্রশাসনের অগোচরে এসব করে।

×