ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মসজিদে মসজিদে খতম তারাবি

মামুন-অর-রশিদ

প্রকাশিত: ০১:১৪, ২৯ মার্চ ২০২৪

মসজিদে মসজিদে খতম তারাবি

মূলত রমজানের চাঁদ দেখার পর তারাবি নামাজ

মূলত রমজানের চাঁদ দেখার পর তারাবি নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বে শুরু হয় মাহে রমজানের আনুষ্ঠানিকতা। পবিত্র রোজার মাস চলছে এখন। ইতোমধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অর্ধেকের বেশি রোজা পালন করেছেন। মসজিদে মসজিদে তারাবি নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে রোজা রাখেন মুসল্লিরা। এ ক্ষেত্রে রাজশাহীর মসজিদসমূহেও হাজার হাজার মুসল্লি তারাবি নামাজ আদায় করেন। 
রাজশাহী নগরের বেশির ভাগ মসজিদেই খতম তারাবি নামাজ আদায় হয়। একেবারে পাড়ার ওয়াক্তিয়া কিছু মসজিদ ছাড়া সব মসজিদের খতম তারাবি আদায় হয়। রাজশাহী নগরীর বেশিরভাগ মসজিদে ২০ রাকাত খতম তারাবি হয়। কিছু মসজিদে ৮ রাকাত আর ১২ রাকাত নামাজও আদায় হয়। তবে কেবল ২০ রাকাত নামাজ যেসব মসজিদে আদায় হয় সেগুলোতেই খতম তারাবি হয়ে থাকে। অন্য মসজিদসমূহে হয় সুরা তারাবি। যুগ যুগ ধরেই এই রীতিতে চলছে তারাবি নামাজ।
রাজশাহী নগরীর প্রধান মসজিদ হজরত শাহ মখদুম (রহ.) জামে মসজিদ। এ মসজিদের ঐতিহ্য রয়েছে দেশের সবখানে। রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। রাজশাহী নগরীর এ মসজিদে শুরু থেকে খতম তারাবি নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। স্থানীয় মুসল্লি ছাড়াও দেশ বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ পড়তে আসেন। তারাবি আর জুমার নামাজে মানুষের ঢল নামে এ  মসজিদে।  
বুধবার রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) জামে মসজিদে গিয়ে দেখা হয় এখানকার খাদেম হাফেজ মোহাম্মদ হাবিবুল্লার। তিনি জানান, এ মসজিদে যুগ যুগ ধরেই খতম তারাবি অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সূরা তারাবি কখনো হয়েছে বলে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, তারাবির নামাজের শুরুর ৮ রাকাতে যত মুসল্লি থাকে শেষ পর্যন্ত তত থাকে না। তারপরও বেশিরভাগ মুসল্লি শেষপর্যন্ত ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করেন। তিনি বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজে মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ থাকে মুসল্লিদের আগমনে।

এ মসজিদে তারাবি নামাজের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মহিবুল্লাহ। তিনি দুই বছর ধরে এ মসজিদে ইমামতি করছেন। তিনি জানান, এ মসজিদের ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে বছরের পর বছর খতম তারাবি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তিনি জানান, আবহাওয়া বৈরী থাকলে রাজশাহীর প্রধান ঈদের জামাত এ মসজিদেই আদায় করেন রাজশাহীবাসী। 
প্রসঙ্গত, রাজশাহী নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমদিকে এ মসজিদের অবস্থান। এ মসজিদটি দেশের দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থান। 
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (১২১৬-১৩১৩ খ্রিস্টাব্দ) বাংলার প্রথিতযশা সুফী সাধক এবং ধর্ম-প্রচারকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষার্ধে এবং চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুতে বাংলাদেশ তথা রাজশাহী অঞ্চলে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার করেছিলেন। 
তার অনুপম ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে শত শত মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। মূলত শাহ মখদুমের মাধ্যমেই বরেন্দ্র এবং গৌড় অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে এসব অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। শাহ মখদুমের প্রকৃত নাম আব্দুল কুদ্দুস। ধর্ম এবং জ্ঞান সাধনায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য বিভিন্ন সময়ে তার নামের সঙ্গে ‘শাহ’ ‘মখদুম’ ও ‘রূপোশ’ ইত্যাদি উপাধি যুক্ত হয়। তিনি শাহ মখদুম রূপোশ নামেই সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত। 
মৃত্যুর পর তাকে তার বলে দেওয়া স্থানে সমাহিত করা হয়। তার কবর বর্তমান রাজশাহী শহরের দরগাপাড়ায় অবস্থিত, যার দক্ষিণে প্রমত্তা পদ্মা নদী এবং পূর্বে রাজশাহী কলেজ অবস্থিত। প্রতি বছর হিজরি সনের রজব মাসের ২৭ তারিখ এখানে ওরস পালন করা হয়। দেশ-বিদেশ থেকে শাহ মখদুমের হাজার হাজার ভক্ত অনুসারী সেদিন তার মাজার জিয়ারতে আসেন।
এদিকে শুধু শাহ মখদুম মাজার মসজিদ নয়। রাজশাহীতে এখন গড়ে উঠেছে আধুনিক স্থাপত্যের বেশ কয়েকটি মসজিদ। এর মধ্যে রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় গড়ে উঠেছে বর্তমান সরকারের আমলে নির্মিত মডেল মসজিদ। এছাড়া রাজশাহী নগরীর কোর্ট অঞ্চলে হড়গ্রাম মুন্সিপাড়ায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে বাইতুল আমিন জামে মসজিদ কমপ্লেক্স। এরমধ্যে গত দুই বছর ধরে মডেল মসজিদে হচ্ছে খতম তারাবি।

আর এবারই প্রথম তারাবি নামাজ হচ্ছে বাইতুল আমিন জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে। এটি রাজশাহীতে ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন আধুনিক এক মসজিদ কমপ্লেক্স। প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বাইতুল আমিন জামে মসজিদে ৮০০ পুরুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের বাইরে আরও অন্তত ২০০ জনের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও মসজিদ কমপ্লেক্সে নারীদের জন্য আলাদা জামাতে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যেখানে সেই ফ্লোরে একসঙ্গে প্রায় ৪০০ নারী নামাজ আদায় করতে পারেন। এ মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা তানবীর আকতার তৌকি বলেন, এখানেও খতম তারাবির নামাজ আদায় হয়। মুসল্লিদের অংশগ্রহণে পূর্ণ থাকে মসজিদ কমপ্লেক্স। এছাড়া রাজশাহী নগরীর উপশহরের প্রথম মডেল মসজিদে তারাবি নামাজ শুরু হয়েছে গত বছর থেকে। এটি চালু করা হয় গত বছরের ১৬ জানুয়ারি। এই মসজিদে একসঙ্গে এক হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী

×