ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়ের লাশ, গলা কাটা স্বামী হাসপাতালে 

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ০০:২৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়ের লাশ, গলা কাটা স্বামী হাসপাতালে 

দুই মেয়ের সঙ্গে ব্যবসায়ী আশিকুল হক বাবুর এই ছবি এখন শুধুই স্মৃতি

জেলা সদরে নিজ বাড়ি থেকে দুই কন্যা সন্তানসহ এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই গৃহবধূর স্বামী কাঠ ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী আশিকুল হক মোল্লা ওরফে বাবুকে (৪৫) গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার সকালে চড়াইখোলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দারোয়ানি বন্দর বাজার গ্রামে। হত্যার শিকার তিনজন হলেনÑ আশিকুরের স্ত্রী তহুরা বেগম (৩৫) ও দুই মেয়ের মধ্যে আট বছর বয়সী আয়শা তানিয়া ও পাঁচ বছরের জারিন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল ৯টার দিকে গলা কাটা অবস্থায় বাড়ির বাইরে এসে ঢলে পড়েন আশিকুর হক মোল্লা বাবু। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায় আমাকে বাঁচাও। আর বাড়ির ভেতরের শয়ন কক্ষের বিছানায় তার স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানকে  মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী।
পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিয়ে আশিকুরকে উদ্ধার করে প্রথমে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেয়। এরপর সেখান থেকে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আশিকুরের স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানকে হত্যাকা-ের কারণ স¤পর্কে এখনো কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে বিকেল ৩টার দিকে রংপুর থেকে পুলিশের সিআইডির ক্রাইম সিন সদস্যরা এসে মা ও দুই কন্যা সন্তানের মরদেহের সুরতহাল শেষে উদ্ধার করে জেলার মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করে। তবে এলাকাবাসীর ধারণা, মানসিক রোগী আশিকুর নিজেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

সে কয়েকদিন আগে মেয়ে দুটিকে নিয়ে সেলফি তুলে তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল। হাসিমাখা মুখের এই ছবি দেখে কেউ ভাবতে পারেনি সে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করবে। পাশাপাশি কন্যা দুজনও হয়তো ভাবতে পারেনি বাবা মাসহ তাদের হত্যা করবে। বিষয়টি বড়ই মর্মান্তিক। 
আশিকুর হক মোল্লা বাবু চড়াইখোলা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মৃত রউফ মোল্লার ছেলে। তার চাচাত ছোট ভাই জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, সে ব্যবসায় আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হয়ে মানসিকভাবে একটু ভেঙে পড়েছিল। এ ছাড়া সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। হয়তো সে নিজেই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। 
এদিকে এমন খবর পেয়ে ছুটে আসেন আশিকুরের শ্বশুর আব্দুল আলিম ও শাশুড়ি রাবেয়া খাতুন। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামার পুকুর ইউনিয়নের চিকলি আলাউদ্দিনপাড়া গ্রামে তাদের বাড়ি।
তারা জানান, ১৩ বছর আগে তার মেয়ে তহুরার সঙ্গে আশিকুরের বিয়ে হয়। তাদের দুটি মেয়ে সন্তান। বিয়ের পর থেকে কোনোদিন তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বা মনোমালিন্য ছিল না। এমনকি ঘটনার আগের দিন রাত ১০টার দিকে  মোবাইলে ভিডিও কলে মেয়ে ও নাতনি দুজনের সঙ্গে আমরা কথাও বলি। কিন্তু শুক্রবার সকাল ৯টার পর খবর পাই এই ঘটনার। তারা আশঙ্কা করছেন, কোনো দুষ্কৃতকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে পারে।
নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রংপুর থেকে পুলিশের সিআইডির ক্রাইম সিন সদস্যরা এসে ঘটনাটি তদন্ত করছে। আমরা ঘটনাস্থলে কাজ করছি। ঘরের ভেতর থেকে মা ও দুই কন্যা সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে রক্তমাখা ধারালো কাটারি (তরকারি কাটা ছুরি) উদ্ধার করা হয়েছে। গলা কাটা  আশিকুরকে রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওসি জানান, ওই বাড়িসহ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

×