ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে ফসল

তীব্র শীতে রংপুরের আট জেলায় জনজীবন স্থবির

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪

তীব্র শীতে রংপুরের আট জেলায় জনজীবন স্থবির

তিস্তা সেচের সেকেন্ডারি খালে পানি সরবরাহ শুরু

উত্তরাঞ্চলের রংপুর অঞ্চলের আট জেলায় টানা এক সপ্তাহের কনকনে হাড় কাঁপানো শীত জনজীবনকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। অনেককে মন্তব্য করতে শোনা যায় এবারের শীত উপভোগ করা যাচ্ছে না। এ রকম তীব্র শীত মোকাবিলার মতো প্রস্তুতি  এ অঞ্চলের তিস্তা, ব্রক্ষ্মপুত্র, যমুনাপাড়ের  মানুষের থাকে না। এ কারণেই মানুষকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে কৃষি সেক্টর।

এ জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কম্পোনেট সি-বিডব্লিউসিএসআরপি কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শাহ্ কামাল খান কৃষকদের পরামর্শ সংক্রান্ত একটি পত্র উত্তরাঞ্চল তথা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলায় প্রেরণ করেছেন। শীতের এমন রুদ্ররূপকে জলবায়ু পরিবর্তনেরই আরেক কুফল বলে অভিহিত করেছেন অনেকে। উত্তরাঞ্চলের পরিবেশবিদ হিসেবে পরিচিত আহসান রহিম মঞ্জিল বলেন, পৌষ বা মাঘ মাস বলে কোনো কথা নয়, জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ ভারসাম্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। চলতি বছর যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল তাতে মানুষজনের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল।

এবারের শীতে যে হারে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমেছে যা উপভোগের চেয়ে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।  অনেকে বলছে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছিল আবহাওয়া অফিস, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বনি¤œ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে সবচেয়ে কম তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে, আর সেটি ছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি নীলফামারীর সৈয়দপুরে ২ দশমিক ৯ ডিগ্রি ও  নীলফামারীর ডিমলা ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩ দশমিক ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। ওই সময় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা এত নিচে নামলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৮ এর ঘরে ছিল। ফলে শীত সেভাবে মনে হয়নি তখন। 
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ‘সর্বোচ্চ এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। কিন্তু পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হয়’, যা এখন রংপুর অঞ্চলে টানা এক সপ্তাহ ধরে চলছে। ঘন কুয়াশার বিস্তার এবং সূর্যের আলো না পাওয়ার কারণে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার ব্যবধান পাশাপাশি অবস্থান করছে।

সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম জানান, ‘বাতাসের গতিবেগ তুলনামূলকভাবে একটু বেশি থাকার কারণে শীতের অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।’ এ ছাড়া ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠান্ডা হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেড স্ট্রিম বা প্রচণ্ড গতিবেগ স¤পন্ন বাতাস কখনো নিচে নেমে আসছে, কখনো ওপরে উঠে যাচ্ছে, যেটা ভাইব্রেট (ক¤পন) হচ্ছে। অর্থাৎ ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাসের নিম্নমুখী বিচরণ হচ্ছে। এই নিম্নমুখী বিচরণও অনেক সময় শীতের অনুভূতিকে বাড়িয়ে দেয়।
নীলফামারীর সচেতন মহলের প্রতিনিধি ড. মজিবুল হাসান চৌধুরী বলেন শীত নিবারনে সরকারি বা বেসরকারিভাবে যে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে তা শীত নিবারণের জন্য উপযোগী নয়। এর চেয়ে চাদরেই গরম বেশি। তিনি মনে করে শীতার্ত অসহায় মানুষজনকে  শীতবস্ত্র বিতরণে আমাদের মানদ-কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি জানানম প্রতিবছর শীতে উত্তরাঞ্চলে মানুষের প্রাণহানি ঘটে। শীতে প্রাণহানির সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনীত রোগে এবং  আগুন পোহাতে গিয়ে দ্বগ্ধ হয়ে অনেকে মারা যান। এ ছাড়া শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে বেশিরভাগই বয়স্ক, শিশুর মৃত্যুর খবর উঠে আসে।
কনে কনে শীত ও শৈত্যপ্রবাহের কবলে উত্তরাঞ্চলের মাঠের ফসল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। শীতের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা অন্য এলাকার তুলনায় বেশি। শৈত্যপ্রবাহের কারণে এসব এলাকায় বোরো ধানের চারা হলুদাভ হয়ে মারা যেতে পারে। এ ছাড়া সরিষা ও ফলের গাছও ঝুঁকিতে পড়েছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কম্পোনেট সি-বিডব্লিউসিএসআরপি কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শাহ্ কামাল খান  উত্তরাঞ্চলের ?রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে শীতে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দন্ডায়মাণ ফসল রক্ষার জন্য কৃষকদের জন্য জরুরি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান শনিবার এ সংক্রান্ত একটি পত্র উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় েেপ্ররণ করা হয়। ওই পত্রে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়,  বোরো বীজতলা রাতে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা, বীজতলা থেকে সকালে পানি বের করে দিয়ে নতুন পানি দেওয়া, চারার ওপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

×