ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁও জেলা

নৌকা ও লাঙ্গলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই

এসএম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২ জানুয়ারি ২০২৪

নৌকা ও লাঙ্গলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনেই প্রার্থীরা ততই প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনেই প্রার্থীরা ততই প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বিভিন্ন হাট-বাজারে, পাড়া-মহল্লায় করছেন সভা-সমাবেশ ও উঠান বৈঠক। ভোটারদের কাছে নিজের মার্কায় যতবার ভোট চাইছেন, তার চেয়ে বেশি অনুরোধ করছেন প্রত্যেককে অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে প্রদানের জন্য। ভোটাররাও হিসাব করছেন প্রার্থী বাছাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের।
ঠাকুরগাঁও-১ ॥ প্রতীক বরাদ্দের পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে তেমন ছিল না নির্বাচনী আমেজ। এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমেশ চন্দ্র সেন। প্রথমে তার পক্ষে শুধু মাইকিং করলেও শহরে ছিল না কোনো পোস্টার। এক সপ্তাহ পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউর রাজী স্বপন চৌধুরীর পক্ষে মাইকিং ও পোস্টারিং শুরু হওয়ার পর দেখা যায় নৌকা প্রার্থীর পোস্টার। বর্তমানে চায়ের দোকানে, পাড়া-মহল্লার আড্ডায় জমে উঠেছে ভোটের গল্প। সবারই এক কথা, ‘ঠাকুরগাঁও-১ এ ভোট কম-বেশি যাই পড়ুক, এমপি হবেন নৌকার কাণ্ডারী রমেশ চন্দ্র সেন।’

এই আসনে এক সময় সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এখন ভোটের মাঠে নেই। আসনটিতে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মো. রেজাউর রাজী স্বপন চৌধুরী প্রার্থী হলেও ভোটের ময়দানে প্রথমে তার অবস্থান খুবই দুর্বল দেখা গেলেও ধীরে ধীরে দুর্বলতা কাটছে বলে দাবি করেছেন তার সমর্থকরা। এ ছাড়া এখানে অন্য কোনো শক্ত প্রার্থীও নেই। বলা হচ্ছে, ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই হবে রমেশ চন্দ্র সেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। 
ঠাকুরগাঁও শহরের বাসিন্দা আমানুল্লাহ, সাব্বির ও আফসার আলীসহ অনেকেই বলেন, ‘নির্বাচনে মাইকিং আর সামান্য কিছু পোস্টার ছাড়া শহরে এখন পর্যন্ত প্রার্থীদের সভা-সমাবেশের প্রচারই নেই। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ভোটকেন্দ্রে না গেলেও জিতবে নৌকা। আমরা অনেকেই ভোট দিতে যাব কি না ভাবছি।’ 
শহরের কালীবাড়ি এলাকায় মির্জা ফখরুলের বাসার সামনের স্থানীয় বাসিন্দা দবির আলী ও অলক কুমার দাস জানালেন, নৌকা এমনিতেই জিতবে, তাই ভোটারদের কোনো দাম নেই বলেই মনে হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ অনেক মানুষও ভোটের বিষয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।
তবে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে অনেক হুমকির সুরে কথা বলায় ইতোমধ্যে শোকজ লেটার পেয়ে ক্ষমা চেয়েছেন রমেশ চন্দ্র্র সেন। তিনি এক হাটসভায় বলেছিলেন, সরকারি সুবিধাভোগী ভোটাররা যদি কেন্দ্রে না আসেন, তাহলে সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে তাদের নাম কেটে দেওয়া হবে। তবে তিনবারের নির্বাচিত এমপি রমেশ চন্দ্র সেন এখন সভা, সেমিনার, পথসভা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গণসংযোগ চালিয়ে বিগত দিনে তিনি এ আসনে যেসব উন্নয়ন করেছেন এবং আগামীতে উন্নয়নকাজে অগ্রধিকার দেবেন- সেসব কথার পাশাপাশি এ আসনকে একটি মডেল আসনে রূপান্তর করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এ কারণে মানুষে মাঝে আশার সঞ্চার হতে দেখা গেছে।

আবার নিরুত্তাপ মাঠে ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। জেলা বিএনপির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের পাতানো খেলা। এই ডামি নির্বাচন বর্জনে আমরা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।’ তার মতে, ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনে কেন্দ্রগুলোয় ভোটারদের উপস্থিতি ১০ শতাংশেরও কম হবে।
এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেনÑ ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির মো. রাজিউল ইসলাম (আম) ও ইসলামী ঐক্যজোটের মো. রফিকুল ইসলাম (মিনার)। 
ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর) ॥ আসনে পাঁচ প্রার্থী থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের সাতবারের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের বড় ছেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সদ্য পদত্যাগকারী ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের আপন ভাতিজা আলী আসলাম জুয়েল।

এ ছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন দবিরুল ইসলামের ভাগনি নুরুন নাহার বেগম। তারা পাড়া-মহল্লায় গভীর রাত পর্যন্ত সভা, সেমিনার, পথসভা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গণসংযোগ চালালেও নিজেদের স্বজনদের মধ্যে সব গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।  
এ নিয়ে বালিয়াডাঙ্গীর হরিণমারি বাজারে কথা হয় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানের সঙ্গে। তার ভাষ্যÑ ‘ভোটের মাঠ জমানোর জন্য নিজেদের মধ্যে প্রার্থী হয়েছেন। এতে বিএনপির কর্মীরা না আসলেও সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন।’ 
এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেনÑ জাতীয় পার্টির নুরুন নাহার বেগম, জাকের পার্টির নুর আলম সিদ্দিক, স্বতন্ত্র রিম্পা আক্তার ও স্বতন্ত্র আব্দুল কাদের।
ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) ॥ এ আসনে প্রথমে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হককে। পরে জোটের হয়ে আসন ভাগাভাগির অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে এ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে মাঠে ছিলেন না আওয়ামী লীগের অনেকে। ফলে সেখানেও উত্তাপ ছিল অনেকটাই কম। তবে গত শুক্রবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে জোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে সমর্থন জানিয়ে প্রচারে মাঠে নামেন।

রাণীশংকৈল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তামিম হোসাইন বলেন, নৌকার প্রার্থী না থাকায় প্রথমে মন খারাপ থাকলেও পরে বুঝেছি জোটের প্রার্থীই নৌকার প্রার্থী। ফলে এখন সবাই সক্রিয়ভাবে জোট প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন।
এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেনÑ ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায়, এনপিপি প্রার্থী শেখ সালাউদ্দিন ও বিকল্পধারার প্রার্থী এসএম খলিলুর রহমান সরকার। 
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ঠাকুরগাঁও শাখার সভাপতি মনতোষ কুমার দে বলেন, নির্বাচনে প্রতিপক্ষ দুর্বল হলে কেন্দ্রে ভোটার আনা একটু তো কঠিন হবেই।

×