নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ নিজ সন্তান ও বউমার নির্যাতনে রক্তাক্ত হওয়া শতবর্ষী বৃদ্ধা তাসলেমা খাতুনকে বৃহস্পতিবার উদ্ধারের পর ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল নিজের কোলে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এলাকাবাসী একজন জেলা প্রশাসকের এমন আন্তরিকতা দেখেছেন অবাক হয়ে।
এ দৃশ্য দেখে হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের অসংখ্য মানুষ একে অপরকে বলেছেন, যে কাজ করার দরকার নিজের ছেলের সেটা করলেন বড় স্যার (জেলা প্রশাসক)।
এর আগে গত বুধবার দুপুরের দিকে শতবর্ষী বৃদ্ধা তাসলেমা খাতুন (৯৮) ক্ষুধার্থ অবস্থায় বউমার কাছে (ছেলের স্ত্রী) খাবারের জন্য ভাত চেয়েছিল। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সী ছেলে বদরউদ্দিন ও তার স্ত্রী বেধরক মারপিট করে শতবর্ষী ওই বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এসময় বাম চোখের নিচে গুরুতর জখম হয় বৃদ্ধার।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যম ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় ওই বৃদ্ধার জন্য অনেকে কষ্ট প্রকাশ করে ছেলের শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল গভীর রাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ের বানভাসী মানুষের খোঁজখবর নিতে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে ব্যস্ত থাকায় তিনি বিষয়টি দেরিতে জানতে পারেন।
অবশেষে জেলা প্রশাসক নিজেই ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার সকালে হাজির হন হরিপুরে শতবর্ষী ওই মায়ের বাড়িতে। জেলা প্রশাসকের উপস্থিতির খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ এলাকার অসংখ্য গণ্যমাণ্য ব্যক্তি। এসময় সবার উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক বৃদ্ধা মাকে নিজের কোলে তুলে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার শুভেন্দু দেবনাথ জানান, বৃদ্ধা মায়ের চোখের ক্ষত খুবই গুরুতর। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার সকল চিকিৎসা ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল থেকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. আবু মোহাম্মদ খায়রুল কবির।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, রাতে যখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারলাম এক বৃদ্ধ মা তার সন্তানের হাতে আঘাত পেয়ে হরিপুর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তখন বিষয়টি আমাকে খুবই ব্যাথিত করে। তাই দুইজন সংবাদকর্মীকে সাথে নিয়ে বৃদ্ধা মায়ের খোঁজে হরিপুরে যাই। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৃদ্ধা মা কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর সুস্থ্য হয়ে উঠার পর তাকে কোথায় কি ভাবে রাখা যাবে তা নিয়ে ভাবনা করা হবে।
পরে হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস জানান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে আহত বৃদ্ধার সন্তান বদিরউদ্দীনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।