সমুদ্র হক ॥ শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই বগুড়ার শেরপুরের বেশিরভাগ গ্রামে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হাতে চালিত নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে সুপেয় পানির (খাবার পানি) তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ঘর গৃহস্থালিও ঠিকমতো হচ্ছে না। গ্রামের লোক খাবার পানি সংগ্রহ, কাপড় ধোয়া, বাসন মাজা, গোসল ইত্যাদি কাজে অনেকটা দূরে শ্যালো ইঞ্জিন ঘরের ধারে যাচ্ছে। সেখানে জমিতে সরবরাহকৃত সেচের পানি গোসল ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করে কলসিতে বা বালতিতে খাবার পানি ভরে আনছে।
এলাকার লোকজনের কথা: কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমে এই অবস্থা। সমস্যার কোন সমাধান নেই। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলে ভূগর্ভের স্তরে পানি পৌঁছে যতটা রিচার্জ (পুনর্ভরণ) হয় ওই পর্যন্তই। সূত্র জানায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নিরাপদ খাওয়ার পানি সরবরাহের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তা গত তিন বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। দিনে দিনে পরিস্থিতি তীব্র সঙ্কটের দিকেই যাচ্ছে। শেরপুরের গ্রামের পথে পা বাড়ালে দেখা যাবে শিবপুর কালসিমাটি রানীনগর পারভবানীপুর খামারকান্দি বোংগা রামেশ্বরপুর গ্রামের নারী পুরুষ ছুটছে সেচ পাম্পের দিকে। সেখানে গিয়ে প্রথমে তারা খাবার পানি সংগ্রহ করে। এরপর গৃহস্থালি কাজের পর গোসল সেরে নিচ্ছে। নারীরাও গোসল সেরে নিচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ বলেন, দশটি ইউনিয়নে ৯০ শতাংশ বাড়ির হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফেব্রুয়ারি মাসে ধীরে ধীরে এই অবস্থা শুরু হয়ে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত চরম আকার ধারণ করে। সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন জানালেন, তার ইউনিয়নের ৪২টি গ্রামের মধ্যে ৩৫টিতেই সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই এই অবস্থা চলছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কথা- নিত্য বছর শুকনো মৌসুমে উপজেলার তিন-চতুর্থাংশ গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দেড় মিটার থেকে তিন মিটার নিচে নেমে যায়। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ৭ থেকে ৮ মিটার গভীরতায় হস্তচালিত নলকূপের পানি ওঠে পানির স্তর নেমে গেলে পানি আর ওঠে না।
শিবপুর গ্রামের মনসুর আলী বললেন, শ্যালো ইঞ্জিনের ঘর বন্ধ থাকলে (অর্থাৎ ইঞ্জিন চালু না থাকলে) পানি সংগ্রহে যারপরনাই ভাবনায় পড়তে হয়। অনেক সময় মানবিক কারণে ইঞ্জিনের মালিককে অনুরোধ করে কিছুক্ষণের জন মেশিন চালিয়ে খাবার পানি নিতে হয়। এ সময় গোসল কাপড় ধোয়া গৃহস্থালি কাজ করা যায় না। পানির সংকটে এলাকার মানুষ যার পর নেই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: