মিথুন আশরাফ ॥ টি২০ ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজটি শেষ হতেই টি২০ ক্রিকেটে মাশরাফি যুগের অবসান ঘটে যাবে। প্রথম টি২০ ম্যাচ শুরুর আগে যখন টস করতে যান মাশরাফি, আচমকা টি২০ থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন তিনি। বলে দেন, ‘এ টি২০ সিরিজটিই আমার শেষ টি২০ সিরিজ।’ অবসরের ঘোষণা দিয়ে দেন মাশরাফি। অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর জানান, ‘আমি অবসর নিয়ে নিচ্ছি। বিসিবি, আমার পরিবার, সতীর্থ, কোচিং স্টাফ, সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মাশরাফি বরাবরই বলে এসেছেন, হঠাৎ করেই অবসরে চলে যাব। তার আগে কাউকে জানাব না। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেব। টি২০ থেকে অবসরের আগে সেই কাজটি করলেন তিনি। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাবেন মাশরাফি। টেস্টতো সেই ২০০৯ সালের পর থেকে খেলতেই পারছেন না। টেস্ট খেলতে যেটুকু নিজেকে উজাড় করে দিতে হয়, সেটুকু দেয়ার মতো ফিট না থাকাতেই মাশরাফি টেস্ট খেলেন না। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে যে ইনজুরিতে পড়েন এ পেসার, সেই থেকে আর টেস্ট খেলতে পারেননি ৩৬ টেস্ট খেলে ৭৮ উইকেট নেয়া মাশরাফি। তবে ওয়ানডে ও টি২০ ঠিকই খেলে গেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ সিরিজের পর আর মাশরাফিকে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেট খেলতে দেখা যাবে না। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি২০ ম্যাচের আগে ৫২ টি২০ খেলে ৩৯ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি।
টেস্ট খেলতে পারেন না। টি২০ ছেড়ে দিলেন। এখন থেকে ঘরোয়া টি২০ লীগগুলো খেলবেন। তবে ১৭২ ওয়ানডেতে ২২৫ উইকেট নেয়া মাশরাফি ওয়ানডে এখনই ছাড়ছেন না। শোনা যাচ্ছিল, আসছে জুনে যে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অনুষ্ঠিত হবে। টুর্নামেন্টটির পর ওয়ানডে ক্রিকেটও ছেড়ে দেবেন মাশরাফি। কিন্তু এ নিয়ে কখনই নিশ্চিত করে কিছু জানাননি মাশরাফি। বারবার বলেছেন, ‘যখন সময় হবে, নিজেই জানাব।’ টি২০ থেকে অবসরের ঘোষণা হঠাৎ করে নিজেই জানিয়ে দিলেন।
জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ সিরিজের সময়ও মাশরাফির অবসর নিয়ে কথা উঠেছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ সিরিজটিই তার শেষ সিরিজ এমন গুঞ্জনও উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এরআগে টি২০ বিশ্বকাপের আগেও দেশে হওয়া এশিয়া কাপের সময়ও মাশরাফির টি২০ থেকে অবসর নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল। তা গুঞ্জনই থাকে।
অবসর কবে নিচ্ছেন? এ প্রশ্ন বারবার শুনতে হয়েছে মাশরাফিকে। মাশরাফি বারবারই বলেন, ‘বাসায় গিয়ে এটা নিয়ে ভাবব।’ ২০০১ সালে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেয়া মাশরাফি টি২০ বিশ্বকাপ খেলেই অবসরে যাচ্ছেনÑ বলে খবর চাউর হয়েছিল। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও সেই খবর ডালপালা মেলল। তখন মাশরাফিভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ হয়েই ভাসে সেই খবর। একের পর এক অস্ত্রোপচার করে যেভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন মাশরাফি, সেটা বিরল। গোটা ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে মাশরাফি আগেই জানিয়েছেন, ‘আমি ক্রিকেট ভালবাসি। তাই নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে এখনও ক্রিকেট খেলছি। আমার মতো অবস্থা নিয়ে কোন ক্রিকেটার ক্রিকেট খেলেছেন কিনা আমার জানা নেই।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সফলতা ও ব্যর্থতার রাজসাক্ষী মাশরাফি বিন মুর্তজা। ২০০১ সালে ওয়ানডে ও টেস্টে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। বোলার ও অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার অবদান মূল্যায়ন করার মতো। ২০০৬ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক টি২০ খেলে মাশরাফি। পায়ে ৭টি অস্ত্রপচারের পরও অদম্য মানসিকতায় মাশরাফি খেলে গেছেন দেশের জার্সি গায়ে।
সেই মাশরাফি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে ও টি২০ অধিনায়ক। গত আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট তার হাত ধরেই বদলে গেছে। ক্রিকেটকে তিনি এই ক’বছর দুই হাত ভরে দিয়েছেন।
২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর প্রায় ১৭ বছর ধরে খেলে চলেছেন এবং দাপটের সঙ্গেই খেলছেন। শেষ পর্যন্ত হঠাৎ করেই ভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ হাজির করলেন মাশরাফি। অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন। এখনই যেন একজন তরুণ ক্রিকেটার দলে ঢুকতে পারে এবং ভাল করে দলে স্থান করে নেয়, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতি হবে; স্বাভাবিকভাবেই তা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাশরাফি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ শেষেই টি২০ ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না মাশরাফিকে। মাশরাফি এখন পর্যন্ত ৫২টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলেন। ৩৯টি উইকেট নেন। ব্যাট হাতে ১৩.৬২ গড়ে ৩৬৮ রান করেন।
বাংলাদেশের নির্ধারিত ওভারের সবচেয়ে আলোকময় এ অধিনায়ক মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে টি২০তে সর্বোচ্চ ২৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দেন। ৯ ম্যাচে তার নেতৃত্বে দল জিতে। হারে ১৬ ম্যাচে। একটি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। টি২০ বাংলাদেশ এখনও শক্তিশালী দল হয়ে ওঠেনি। যেরকমটি হওয়ার কথা ছিল, সেইরকম দল হয়ে ওঠেনি।
মাশরাফিও এ বিষয়টি বুঝেছেন। তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ সিরিজের আগে বলেছেন, ‘টি২০ বিশ্বকাপে আমরা কিন্তু শেষ করতে পরিনি, ভারত ম্যাচ যদি দেখেন। তবে আমরা দিন দিন উন্নতি করছি, ভাল করছি। আমরা যেখানে যেতে চাই, সেখানে যেতে পারিনি। অন্যান্য দল দেখেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ (টি২০তে) দুইবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অন্যান্য দলের দিকে তাকান, ওরা ভাল খেলছে। আমাদেরও ওদের মতো হতে হবে। ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়ের দরকার আছে। আমাদের জুনিয়র তেমন কিছু ক্রিকেটার তৈরিও হচ্ছে। তারা যখন এই ফরমেটে আরও বেশি ম্যাচ খেলবে আমার মনে হয়, আমরা ওই জায়গায় যেতে পারব। তার আগে, আমাদের এখনও অনেক উন্নতি করতে বাকি।’ তরুণদের জায়গা করে দিতেই নিজেই টি২০ থেকে সরে দাঁড়ালেন।
শীর্ষ সংবাদ: