সম্পাদকীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩’ এবং ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩-এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আবারও খেলাধুলার প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, তার সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট ও অনুরাগী করে তোলার জন্য।
শিশু-কিশোররা খেলাধুলার মাধ্যমে লেখাপড়ার পাশাপাশি শারীরিক-মানসিক শক্তির বিকাশ সাধনসহ একদিকে যেমন শৃঙ্খলা ও আনুগত্য শিখতে পারে, তেমনি উদ্বুদ্ধ হতে পারে সাংস্কৃতিক চর্চা ও দেশপ্রেমে। ফলে, জাতি শিক্ষা-দীক্ষা ও খেলাধুলাÑ সবদিক দিয়ে উন্নত হয় এবং বিশ্বে সুনাম অর্জন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সাফ নারী ফুটবল- ২০২২ বাংলাদেশ দলের সাফল্যের বিষয়টি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন। এর পাশাপাশি বর্তমানে সমধিক প্রচলিত ও জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট, ফুটবল, হকির মতো ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খেলাগুলো যাতে হারিয়ে না যায়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান সবাইকে। দেশের ছেলেমেয়েরা মেধাবী।
একটু সুযোগ-সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলেই তারা প্রচলিত খেলাধুলার পাশাপাশি দেশীয় খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট হবে। একই সঙ্গে শরীরচর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, মনমানসিকতার দিক থেকে উন্নত ও উদার হবে। সব ধরনের মাদক এবং ধর্মীয় উগ্রমতবাদ থেকে থাকবে মুক্ত, যা হবে সন্ত্রাসমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক।
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন যে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি তৈরি হয়েছে এবং বাকিগুলো তৈরির প্রক্রিয়া চলমান। এসব মিনি স্টেডিয়ামে উৎসাহী স্থানীয় তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন খেলাধুলার নিয়মিত অনুশীলনসহ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এবং শিল্পপতিরাও এগিয়ে আসতে পারেন।
তবে রাজধানীসহ সারাদেশের খেলার মাঠ এবং পার্কগুলোর সুরক্ষাসহ সার্বিক পরিবেশ ও সবুজায়ন নিশ্চিতকরণে সবার আগে প্রয়োজন সমন্বিত সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, যাতে সেগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের আধিপত্য বিস্তারে দখল-দূষণে হারিয়ে না যায়।
এক সময় প্রায় গ্রামেই ছিল ছোট-বড় খেলার মাঠ ও গোচারণভূমি। জনসংখ্যার চাপে খাদ্য সমস্যা মোকাবিলায় সুউচ্চ দালানকোঠা ও ধান চাষে মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগী হওয়ায় এর অনিবার্য প্রভাব পড়েছে উদ্বৃত্ত জমি ও বাথানে। ফলে, গোচারণ ভূমি এবং খেলার মাঠ বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। তবে যেটুকু আছে সেসব সংরক্ষণ করে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা গেলে গ্রামের শিশু-কিশোরদের একটি বিশুদ্ধ বিনোদনের ব্যবস্থা হতে পারে।
ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, হকি, এমনকি হ্যান্ডবল খেলার জন্য তেমন ব্যয়বহুল উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না। তদুপরি গোল্লাছুট, হা-ডু-ডু, ডাঙ্গুলি, কানামাছি ইত্যাদি চিরায়ত লোকায়ত খেলাধুলা তো আছেই। অনেক গ্রামেই ছোট-বড় শিল্পপতি এবং প্রবাসী আয় আছে। নিয়মিত খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করা গেলে নির্মল আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক ইত্যাদির ছোবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে তরুণদের। এতে নতুন নতুন প্রতিভাও উঠে আসবে সুনিশ্চিত।