ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৩ মার্চ ২০২৪

ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা

সম্পাদকীয়

বেইলি রোডের ট্র্যাজেডির পর যথারীতি এ নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। কর্তৃপক্ষ সজাগ হচ্ছে। এই অগ্নি দুর্ঘটনাকে গাফিলতিজনিত হত্যাকা- হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে স্থপতিদের সংগঠন বিআইপি। গাফিলতি, অনিয়ম ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কথা উচ্চারিত হচ্ছে সর্বস্তরে। বাণিজ্যিক ভবন মালিকদের অতিমুনাফার লোভ অত্যন্ত অমানবিক। এই লোভের বশবর্তী হয়েই তারা ভবনের অগ্নি নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে যাচ্ছে।

তাই সময়ের দাবি, বাণিজ্যিক ভবনসহ ঢাকার প্রতিটি বহুতল ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিদ্যমান কি না, সেটি তদারকির জন্য পৃথক একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া। কেননা দেখা যাচ্ছে বিদ্যমান দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো একে অন্যের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের দোষ যেমন তারা স্বীকার করছে না, তেমনি বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির জন্যও তাদের কোনো অনুশোচনা নেই। রাজধানীর নয়টি বড় অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সরকারি সংস্থাগুলো একে অন্যের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।

কখনো তিতাস গ্যাস, কখনো রাজউক, কখনো সিটি করপোরেশন কিংবা ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির প্রমাণ রয়েছে এসব বড় বড় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পেছনে। সুতরাং এ সংস্থাগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সেটিও মনিটরিং করা জরুরি হয়ে উঠেছে। সেজন্যই চাই দুর্নীতিমুক্ত পৃথক সংস্থা। 
বাস্তবতা এটাই যে, ঢাকার অধিকাংশ হাসপাতাল, মার্কেট, শপিং মল ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দুর্বল। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা থাকলেও ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে ভবনগুলো মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঢাকার আশি ভাগ ভবনে বিল্ডিং কোড না মানার কথা বলেছেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান। অগ্নিঝুঁকি কমানোর জন্য ২০১০ সালে ১৭ দফা সুপারিশ করেছিল বিশেষজ্ঞ কমিটি।

সুবচন নির্বাসনে যাওয়ার মতোই এই ১৭ দফাও পড়ে আছে হিমাগারে। এ ছাড়া আগুনে মৃত্যুর একটি ঘটনারও কি বিচার সম্পন্ন হয়েছে? অপরাধ করবে, অথচ শাস্তি নেই তাহলে এ ধরনের অপরাধ থেকে পিছু হটতে কেন বাধ্য হবে ভবন মালিক ও আবাসন ব্যাসায়ীগণ? 
বেইলি রোডে বহুতল ভবনের অগ্নিকা- আমাদের এ বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ঢাকার অসংখ্য ভবন এক একটা অগ্নিবোমা হিসেবে বিস্ফোরণের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখনই সতর্ক ও সচেতন না হলে এমন আরও অগ্নিকা-ের আশঙ্কা কিছুতেই দূর হবে না।  ঢাকায় প্রতি বছরই বড় ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে।

এরপর হয়তো আরেকটি ঘটনা এসে বেইলি রোডের ঘটনার বেদনাকে বিস্মৃতির অতলে নিয়ে যাবে। এত যে প্রাণ যায়, মানুষের মৃত্যু হয়, মানুষ সর্বস্বান্ত হয়- কিন্তু দায়িত্বহীনতার অবসান হয় না। আগুনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপাপড়া সত্যকে তাই অনুধাবন করা চাই। সব অগ্নিকা-ই দুর্ঘটনা নয়, এসব আমাদেরই অবহেলা, অসচেতনতা ও দুর্নীতির ফল।
আমরা বারবার বলে আসছি, যে কোনো কারণেই হোক, কোনো ভবনে আগুন লাগতেই পারে। তাই জরুরি হচ্ছে ভবনে পূর্ণাঙ্গ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া। আগুন লাগলে জরুরি ভিত্তিতে মানুষ ভবন থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন কি না, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বাণিজ্যিক ভবনে গ্যাস সিলিন্ডার রক্ষণাবেক্ষণেও তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার অবিলম্বে রাখা বন্ধ করা চাই। শক্তিশালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, যথাযথ নিয়মিত তদারকি এবং আইনের কঠোর প্রয়োগই অগ্নিকা- প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।

×