ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ভুল রাজনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি এবং রাষ্ট্র

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ভুল রাজনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি এবং রাষ্ট্র

.

সংসদীয় রাজনীতির সরকার কাঠামোতে সরকারি দলের পাশাপাশি শক্তিশালী বিরোধী দলও অপরিহার্য। একতরফা সরকারে সুশাসন বিঘ্নি হয়। জবাবদিহিতার অভাবে ক্ষমতাসীন দল হয়ে উঠতে পারে স্বেচ্ছাচারী। দুর্নীতি-অনিয়ম বাসা বাঁধে রাষ্ট্র সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গত পনেরো বছর সরকারের ধারাবাহিকতায় দেশের উন্নয়ন হয়েছে প্রশ্নাতীতভাবে। সমৃদ্ধ হয়েছে অর্থনীতি। মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। একই সঙ্গে দুর্নীতি হয়ে উঠেছে দুর্দমনীয়। তৃণমূলে অধিকাংশ এলাকায় নেতারা হয়ে উঠেছেন স্বেচ্ছাচারী। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বারবার ভুল সিদ্ধান্তে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নেতৃত্বহীনতা ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার কারণে জনপ্রিয় এই দলটি শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছে এমন নয়, সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র। সর্বশেষ তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বিগত সংসদ নির্বাচন বর্জন। এই ভুল সংশোধন করতে তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে আরও পাঁচ বছর।

সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে জাতীয় সংসদ। রাষ্ট্রের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় জাতীয় সংসদে। সরকারের জবাদিহিতাও নিশ্চিত হয় সংসদীয় কার্যক্রমে। দুঃখজনকভাবে গত পনেরো বছর বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা ছিল অনেকটাই দুর্বল। এর মূল কারণ সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছিল তাদের নেতিবাচক রাজনীতির কারণে। নির্বাচনে তারা পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন। এর পরও তারা সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন পেয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বসেছিলেন বিরোধী দলের নেতার আসনে। ২৭ আসন নিয়ে দ্বিতীয় বিরোধী দলে ছিল জাতীয় পার্টি।০৯ থেকে১৩ সাল পর্যন্ত সংসদে বিএনপি তাদের বিরোধী দলের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। অধিকাংশ সময় নানা ইস্যুতে ওয়াকআউট করে থেকেছে সংসদের বাইরে। বিরোধী দলের নেত্রী সংসদে উপস্থিত থেকেছেন খুবই কম। তাদের একমাত্র ইস্যু ছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা। এই ইস্যুতে তারা সংসদের বাইরেই আন্দোলনের চেষ্টা করেছেন বেশি। অন্যদিকে ২৩০ আসনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সংসদে একতরফা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সংসদীয় কার্যক্রমে অনীহার কারণে বিএনপি কোনোভাবেই ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেননি।

বিএনপির অনৈতিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার অপচেষ্টার ফল ছিল ওয়ান ইলেভেন। ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দুই বছর দেশে চলেছে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া। রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করে নির্যাতন, চরিত্র হনন এবং প্রধান দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বিসর্জনে পাঠানোর চেষ্টা চলেছে সব সময়। এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সদ্য বিদায়ী সরকারে থাকা বিএনপি। শুধু তাই নয়, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনেই বিএনপি মাত্র ৩০ আসন পেয়েছিল। এমন তীক্ত অভিজ্ঞতা সত্তে¡ অদৃশ্য কারণে বিএনপি তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নেয়। এটি ছিল বিএপির প্রথম রাজনৈতিক ভুল। এই ভুল তারা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে ভবিষ্যতে এমন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় তত্ত¡াবধায়ক সরকার রাজনীতিকদের জন্য একটি অসম্মানজনক পদ্ধতি। নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে রাজনীতিবিদরা নির্বাচনের সময় বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে আসেন। বিশে^ কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই পদ্ধতি বহাল নেই।

নবম জাতীয় সংসদে বিএনপির উচিত ছিল এই ব্যবস্থা চিরতরে বিলুপ্ত করতে সরকারকে সহযোগিতা করা, সত্যিকার অর্থে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রচেষ্টা চালানো এবং সংসদে বিরোধী দলের সঠিক মিকা পালন করা। পাঁচ বছর সংসদের ভিতরে-বাইরে সত্যিকারের বিরোধী দলের মিকা পালন করতে পারলে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ক্ষমতার দাবিদার হয়ে উঠতে পারতেন। বিএনপি সেই পথে হাঁটেনি। পাঁচ বছর ভুল রাজনীতির ধারাবাহিকতায় তারা বর্জন করে ১৪ সালের নির্বাচন। নির্বাচন প্রতিহত করতে শুরু করে সহিংসতা। জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির মাধ্যমে সারাদেশে কায়েম করে সন্ত্রাসের রাজত্ব। ফল হিসেবে দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি বিএনপি জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়। সেই যে বিএনপির ভুলের রাজনীতি শুরু তা অব্যাহত রয়েছে এখন পর্যন্ত।

দ্বাদশ নির্বাচনের আগে দেশের প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজ আনাম এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘ভুল রাজনীতির কারণেই বিএনপি নানা ক্ষেত্রে কোণঠাসা হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৪ সালের নির্বাচন বর্জন ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারা রাজনীতির মূল স্রোতে টিকে থাকতে পারতেন। এমনকি খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেত্রী থাকলে তাকে হয়তো আজকের পরিণতি ভোগ করতে হতো না।মাহফুজ আনামের সেই নিবন্ধ থেকেও বিএনপি শিক্ষা নেয়নি।বর্জনে অর্জনতত্তে¡ তারা অবিচল থেকেছেন। ১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতা না পেলেও জাতীয় সংসদে বিএনপির বড় একটি বিরোধী দল নিশ্চিত হতো।১৪ থেকে১৮ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদের ভিতরে-বাইরে সক্রিয় থাকলে একাদশ সংসদ নির্বাচনেই তারা বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারতেন। সেই পথে হাঁটেনি বিএনপি। নির্বাচন বর্জন করে গায়ে সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে এই পাঁচ বছর তারা রাজনীতির মূল ধারায় ফিরে আসার চেষ্টা করেছে। খুব একটা সফল হতে পারেনি। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সৃষ্ট১৩-’১৪ সালের সন্ত্রাস তাদেরকে এমনভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল যে, ওখান থেকে ফিরতে তাদের দশ বছর লেগে যায়।

২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপির প্রতিযোগিতা করার মতো প্রস্তুতি ছিল না।১৩-’১৪ সালের গণবিচ্ছিন্নতা, নেতৃত্বে দুর্বলতা এবং ভুল সিদ্ধান্তে তারা মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতেই পারেনি। নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও লন্ডন থেকে দল পরিচালনার কারণে কোনো সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। তিনশআসনে তারা মনোনয়ন দিয়েছে /৭শনেতাকে। শোনা যায়, টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বিক্রি করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত তাদের সঠিক প্রার্থী তালিকাও স্পষ্ট ছিল না। দলে সমন্বয়হীনতা, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং মনোয়নে বিশৃঙ্খলায় প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে দাঁড়াতেই পারেননি। মাঠ  পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা ছিলেন বিভ্রান্ত। এমন হযবরল অবস্থায় ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ করা দূরের কথা তারা নিজেদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখতে পারেননি। অভিযোগ করা হয় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। তাদের অভিযোগ স্বীকার করে নিলেও বলা যায়, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে, আগের রাতে কেন্দ্রে কি ঘটেছিল তারা টেরই পায়নি। কথিত রাতের ঘটনায় দেশের কোথাও প্রতিবাদ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটেছে নির্বাচনের দিন বেলা ১১টায় বর্জনের ঘোষণা দিয়ে। সকালেই নির্বাচন ছেড়ে দেওয়ার ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। ড়ান্ত ফলে বিএনপি পেয়েছে মাত্র ৭টি আসন। বিএনপির নেতাদেরই ধারণা, সকালে নির্বাচন ছেড়ে না দিলে এমন বিশৃঙ্খল সাংগঠনিক অবস্থায়ও ৩০/৪০টি আসনে তাদের বিজয়ী হওয়া সম্ভব ছিল। সংসদে তারা প্রধান বিরোধী দলের আসন নিশ্চিত করতে পারলে এবং গত পাঁচ বছর সংসদের ভিতরে-বাইরে ইতিবাচক রাজনীতির ধারা অব্যাহত রাখলে এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সম্ভব ছিল বড় কোনো অর্জন।

শুধু সংসদের বাইরে অবস্থান করেও গত পাঁচ বছরে সংগঠন চাঙ্গা করতে পেরেছিল বিএনপি। সারাদেশে সমাবেশ-মহাসমাবেশ করে শেষ পর্যন্ত রাজধানীতে এসে আবারও ভুল সিদ্ধান্ত। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে পল্টনে সমাবেশ করার চেষ্টায় সকল পরিশ্রম পন্ড হয়ে যায়। ঢাকার বাইরে বিশাল শোডাউনে বিএনপি নেতারা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন। রাজপথ দখল করে তারা সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলেন। বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্ন। সমাবেশে লোক সমাগম হলেও রাস্তায় টিকে থাকার মতো নেতা-কর্মী তাদের কখনোই ছিল না। রাজধানী অবরোধের ঘোষণা দিয়ে তারা পুলিশের প্রতিরোধে দেড় ঘণ্টাও মাঠে থাকতে পারেনি। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তারা ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ আহবা করে রাজধানীতে। বিশাল সমাবেশে আবারও বিভ্রান্ত বিএনপি রাজধানী দখলের চেষ্টা করে। পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে চালানো হয় তান্ডব। গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হয় রাজধানী জুড়ে। অবশ্য খুব বেশি সময় তারা রাস্তায় থাকতে পারেনি। এর পর নির্বাচন পর্যন্ত তারা আর মাঠেই নামতে পারেনি।

বিএনপির সর্বশেষ ভুল সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচন বর্জন। নির্বাচন প্রতিহত করতে তারা হরতাল-অবরোধ ডেকে যথারীতি শুরু করে চোরাগোপ্তা হামলা অগ্নিসন্ত্রাস। স্বাভাবিকভাবেই সরকার গ্রহণ করে কঠোর মনোভাব। সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর মামলায় গ্রেফতার করা হয় দলের সিনিয়র নেতাদের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৌশলে সরাদেশে জমজমাট হয়ে ওঠে নির্বাচন। বিএনপির আর কিছুই করার থাকে না। সম্পন্ন হয় নির্বাচন। দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেননি। মাঠে মারা যায় বিএনপির সকল প্রচেষ্টা। আবারও ব্যাকফুটে চলে যায় দলটির রাজনীতি। এখন গণসংযোগের নামে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন তারা।

ভুল রাজনীতির কারণে দলের করুণ দশায় বিএনপি নেতারাও বিরক্ত। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তারা নিজেদের মধ্যে এগুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। একজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে অধিকাংশ নেতাই মনে করেন বিদেশে বসে দল চালানোর কারণেই ভুল পথে চলছে বিএনপির রাজনীতি। প্রবাসী নেতা তার অনুগত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। অনুগত ব্যক্তিরা তার গুডবুকে থাকার জন্য নেতার পছন্দ অনুযায়ী কথা বলেন। বিভ্রান্ত নেতা নানা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন সিনিয়র নেতাদের ওপর। তাদের কোনো কথাই কানে নিতে চান না। কেউ বলতে চাইলেও তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এজন্য কেউ আর তার সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনায় যেতেই চান না। যা বলেন জি-জি বলে চুপ করে থাকেন।

বাংলাদেশের নির্বাচনের পর হয়ে গেল পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন। ইমরান খান এবং তার দল পিটিআইকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এমন কোনো অনৈতিক কাজ নেই যা করেনি ক্ষমতাসীনরা। ইমরান খানকে সাজা দিয়ে জেলে রাখা হয়, ভাঙার চেষ্টা করা হয় তার দল, নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় পিটিআইকে। এত কিছুর পরও বর্জন না করে ইমরান খান ভিন্ন কৌশলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। দলের নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। ব্যাপক কারচুপি করেও প্রতিহত করা যায়নি পিটিআইকে। স্বতন্ত্র হয়েই বিপুল সংখ্যক আসন পায় ইমরানের দল। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে হয়তো ইমরান খান সরকার গঠন করতে পারেননি। সংসদে বিপুল সদস্য নিয়ে তারা সরকারকে টালমাটাল করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন বাংলাদেশের অবস্থা পাকিস্তানের মতো ছিল না। বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কোনো চেষ্টা হয়নি। উপরন্তু ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলেও আন্তর্জাতিক চাপে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশও তৈরি হয়েছিল। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনও ছিল প্রত্যয়ী। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ইতিহাস অন্য কিছু হতে পারত। ক্ষমতায় যেতে না পারলেও সংসদে একটি বড় বিরোধী দল গঠন করে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে সমর্থ হতো। আগামী পাঁচ বছর সংসদের ভিতরে-বাইরে আন্দোলনের মাধ্যমে সক্ষম হতো আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার একটি পরিবেশ তৈরি করতে। নির্বাচন বর্জন করে তাদের সবকিছুই হারাতে হয়েছে। আবার আন্দোলন জমাতে তাদেরকে অন্তত পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। পাঁচ বছর পরও শুরু করতে হবে নতুনভাবে। বর্জনের রাজনীতি অব্যাহত থাকলে হয়তো জনপ্রিয় দলটি চলে যাবে বিলুপ্তির পথে। পরিণতি ভোগ করতে হবে মুসলিম লীগের মতো।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×