স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঠিক সময়ে ডেঙ্গু শনাক্ত এবং রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর আশঙ্কা কম বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। তিনি বলেন, অনেকেই হাসপাতালে গিয়েছে দেরিতে। গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে যেতে যেতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়। বাড়িতে সাত আট দিন কেটেছে। আর এমন সব জায়গায় কাটিয়েছে যেখানে সঠিক চিকিৎসা দেয় নাই। একটা রোগীও মরতে পারে না যদি সময়মতো সঠিক ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দৈনিক যুগান্তর কার্যালয়ে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতায় করণীয়’ শিরোনামে এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, বিএসএমএমইউ’র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ, বিএসএমএমইউ’র প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম, কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর চৌধুরী, কীটনাশক বিশেষজ্ঞ এ কে আজাদ এবং আইসিডিডিআর,বি’র প্রাক্তন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ মুশতাক হোসেন প্রমুখ।
আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, রোগীর সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা হাইড করার কিছু নাই। তবে সংখ্যা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলার মতো কিছু নাই। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এমন কোন ফিগার বলবেন না যেন আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালগুলোতে রোগীর লম্বা লাইন লেগে যায়। এটা থেকে বিরত থাকুন। ব্যঙ্গ করলে চলবে না। দেখতে হবে কতটুকু সেবা দিলাম, কতগুলো হাসপাতালে ভিজিটে গেলাম। গণমাধ্যমের কাছে দায়িত্বশীলতা আশা করে তিনি বলেন, আপনাকে দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে।
তবে ডেঙ্গু মোকাবেলায় পরিকল্পনার অভাবের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনার অভাব ছিল। তবে এখন সব ঠিকমতো চলছে। আমাদের সঠিক জায়গায় এ্যাকশনে যেতে হবে। সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ‘মহামারী’ ঘোষণার যে দাবি উঠেছে তার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এটা জাতীয় ক্রাইসিন না। এটা মহামারী আকারে কিছু হয় নাই। এখানে আমরা কন্ট্রোল করতে পারছি এটা। আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি এটা নিয়ন্ত্রণ হবে। ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষায় সরকারী হাসপাতালগুলোকে কিট সঙ্কটের কথা গণমাধ্যমে এলেও জাহিদ মালেক তা নাকচ করেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু রোগ বর্তমানে বিশ্বের ১২৮ দেশের মানুষকে ভোগান্তিতে রেখেছে। বিশ্বের ১২৮ ডেঙ্গুতে আক্রান্তের দেশের মধ্যে বাংলাদেশও একটি। এশিয়ার অন্য একটি দেশ ফিলিপিন্সে ছয় শ’ জনেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করায় দেশটির সরকার মহামারী ঘোষণা করেছে। আমেরিকা বা সিঙ্গাপুরের মতো আধুনিক দেশেও ডেঙ্গু থেকে রেহাই পায়নি।
অন্যদিকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশেও প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে বাসা-বাড়ির আশপাশে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। এই স্বচ্ছ জমাট পানি ২/৩ দিন আটকে থাকলেই সেখানে এডিস মশা জন্ম নেয়ার সুযোগ পায়। বাসা-বাড়ির আশপাশে বা ছাদে, ফুলের টবে বৃষ্টির পানি জমে ৩দিন থাকা মানেই এডিস মশার বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করা, আর এডিস মশা বৃদ্ধি মানেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাওয়া।