সংসদ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, প্রবৃদ্ধি বাড়লে সাধারণভাবে দারিদ্র্য হ্রাস পায়। তবে অর্থনীতির কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রবৃদ্ধির সুফল সমানভাবে সকলের কাছে পৌঁছায় না। দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসের ক্ষেত্রে আমরা করকাঠামো সংস্কার, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্রঋণ ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর মাধ্যমে আয় হস্তান্তর ইত্যাদি কৌশল প্রয়োগ করে আসছি।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আলোকে হতদরিদ্র/অতিদরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সমাজের সর্বাধিক ঝুঁকিগ্রস্ত অংশের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিবছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীগুলোর আওতা ও পরিধি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, দারিদ্র্য নিরসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ৬৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, যা জিডিপি’র ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০০৫ সালে ১৩ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুবিধা ভোগ করত, ২০১৬ সালে এই হাজার ২৮ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে এবং অতি-দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, ভাতার হার ও ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে লক্ষ্যভিত্তিক স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার জন্য আমরা তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক সংস্কার কার্যক্রম তথা জি২টি পদ্ধতির প্রবর্তন করেছি, যাতে প্রাপ্য টাকা জনগণের কাছে যথাসময়ে পৌঁছায়।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৮ সালের জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে প্রায় ৯৯৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। সর্বমোট ৬ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩ কোটি ৬ লাখ গ্রাহক সক্রিয়ভাবে লেনদেন করছেন।
খুলনা-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩০৬। উক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪৪টি কোম্পানি জেড শ্রেণীভুক্ত। জেড শ্রেণীভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সকল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের অব্যাহত আর্থিক ক্ষতি হতে রক্ষার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ হতে বিধি মতে তালিকাচ্যুতিকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি জানান, চলতি বছরে রহিমা ফুড লিমিটেড এবং মডার্ন ডাইং এ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং লিমিটেডকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, কোম্পানির বিলুপ্তসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ দ্বারা নির্ধারিত ও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে কার্যকরী হয়। শেয়ারহোল্ডারদের অব্যাহত আর্থিক ক্ষতি হতে রক্ষার লক্ষ্যে বার্ষিক মুনাফা প্রদানসহ শ্রেণী পরিবর্তনের বিষয়টি যথাযথ আইন ও বিধি মোতাবেক সম্পাদিত হয়ে থাকে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ একে এম রহমতুল্লাহ’র প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের আশ্বাসের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৬১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তন্মধ্যে ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ২৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অনুদানের পরিমাণ ৩৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে বৈদেশিক সাহায্যের প্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ২৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।